অনলাইন
ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের স্বীকৃতির পর থেকে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ মোদিকে, বিশেষ অধিবেশনের দাবি জোরদার
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা
(১ দিন আগে) ১ জুন ২০২৫, রবিবার, ১:০০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৯:০২ অপরাহ্ন
ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক অনিল চৌহান বিদেশে বসে ভারতের যুদ্ধ বিমান ধ্বংসের কথা মেনে নেয়ার পর থেকে ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তীব্র আক্রমণ করে চলেছেন। সেইসঙ্গে নতুন করে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবিতে সোচ্চার হয়েছে সব বিরোধী দল।
দেশবাসীকে আগে না জানিয়ে বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে কেন এ কথা বলা হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সাগরিকা ঘোষ। ভারত সরকার দেশকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেসও।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সমাজমাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, মোদি সরকার দেশকে বিভ্রান্ত করছে। যুদ্ধের কুয়াশা এখন কেটে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে খাড়গে লেখেন, মোদি দেশের সামরিক বাহিনীর শৌর্যকে নিজের কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য ব্যবহার করছেন।
খাড়গের মতে, সেনা সর্বাধিনায়কের ওই সাক্ষাৎকারের পরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে। তিনি লিখেছেন, সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হলে একমাত্র তখনই এই প্রশ্নগুলি করা যাবে। কংগ্রেস কার্গিল রিভিউ কমিটির আদলে একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে তার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির ব্যাপক পর্যালোচনা করা উচিত বলে দাবি জানিয়েছে।
রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের ডেপুটি লিডার সাগরিকা ঘোষ সমাজমাধ্যমে এক পোস্টে প্রশ্ন করে লিখেছেন, আন্তর্জাতিক মিডিয়া কেন এটা আগে প্রকাশ করবে? কেন এই তথ্যগুলি প্রথমে ভারতের জনগণকে, সংসদ এবং জনপ্রতিনিধিদের দেয়া হল না? অন্য আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে অনেক নাগরিকের উদ্বেগ রয়েছে। জাতীয় স্বার্থে তা উত্থাপন করা উচিত। এভাবেই একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শেখে। নাগরিক ও বিরোধী দলকে আস্থায় নেয়ার দাবি জানিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ লিখেছেন, নরেন্দ্র মোদি সরকার আর বিরোধীদের দাবি অস্বীকার করতে পারছে না। সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন না বা সংসদের ওপর আস্থা দেখাবেন না। সিঙ্গাপুরে সেনা সর্বাধিনায়কের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে গোটা দেশ অপারেশন সিঁদুরের প্রথম পর্যায়ের কথা জানতে পেরেছে। তার প্রশ্ন, বিরোধী নেতাদের ওপর কি প্রধানমন্ত্রী আরও আগে আস্থা দেখাতে পারতেন না?
পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সামরিক সংঘর্ষের প্রথম দিনেই ভারত যুদ্ধবিমান হারিয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান। শুধু তাই নয়, তিনি দাবি করেছেন, ‘কৌশলগত ভুলের কারণেই সেই যুদ্ধবিমানগুলি হারিয়েছিলাম আমরা’। সিঙ্গাপুরের মাটিতে বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এহেন দাবি করেছেন সিডিএস। আর তার এই মন্তব্যের পরে ফের একবার সরব হয়েছেন বিরোধীা।
ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতির সময় থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে ওই সংঘর্ষবিরতির কৃতিত্ব নেয়ার চেষ্টা করেছেন। বার বার তিনি দাবি করেছেন, তার প্রশাসন ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার কাজ করেছেন। ট্রাম্পের এই ধরনের দাবিগুলির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী কেন স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন, ট্রাম্পের ওই দাবির প্রেক্ষিতে স্পষ্টভাবে কোনও জবাব দেয়ার বদলে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত।
শানিবার সিঙ্গাপুরে ব্লুমবার্গকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল চৌহান বলেছেন, যুদ্ধবিমান যে ধ্বংস হয়েছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল কেন ধ্বংস হয়েছিল। কী ভুল করা হয়েছিল। সেগুলি গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ভালো বিষয় হল, আমরা কৌশলগত ভুলটি বুঝতে পেরেছিলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে এর সংশোধন করেছিলাম। সেই ভুল সংশোধন করে দুই দিন পরই আবার আমরা হামলা করেছিলাম। দূরপাল্লার লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করে ধ্বংস করেছিল আমাদের যুদ্ধবিমানগুলি।