ক্রিকেটে জমা ধুলায় খেলা ফিরবে কবে!

২০২৩ ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে পতন শুরু। মাঠের ক্রিকেটে একের পর এক হার। ওয়ানডে ফরম্যাটে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে সপ্তম স্থান থেকে ধীরে ধীরে পেছাতে পেছাতে ফের ১০ নম্বরে চলে আসা। টি-টোয়েন্টি আর টেস্ট ক্রিকেটে পায়ের তলায় মাটি যেন নেই। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে হার ও আরব আমিরাতের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খোয়ানোর লজ্জা যার বড় প্রমাণ। একটা সময় নিজের মাঠে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকেও হারিয়ে দিয়েছে টেস্টে সেখানে এখন আফগানিস্তানও ভয়! শুধু মাঠের ক্রিকেটে যে বিপর্যয় তা নয়, জাতীয় দলে অন্তর্কোন্দল দেশের ক্রিকেটে ফেলেছে বড় প্রভাব। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও সাবেক প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে তাতে ভীষণভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে দেশের ক্রিকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই নয় ঘরোয়াতেও যাচ্ছেতাই অবস্থা। দেশের অন্যতম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লীগে (বিপিএল) ক্রিকেটারদের স্পট ফিক্সিং মহামারি আকার ধারণ করেছে।

 সাদা পোশাকে দেশের দুটি চার দিনের লীগে নেই কোনো প্রতিযোগিতা। জৌলুস হারিয়েছে দেশের ওয়ানডে ফরম্যাটের সবচেয়ে মর্যাদার আসর ঢাকা প্রিমিয়ার লীগও। পাইপ লাইনের ক্রিকেটার নিয়ে হাহাকার। ক্রিকেটে এখন খেলার চেয়ে ধুলাই বেশি। মাঠের ক্রিকেট যখন তথৈবচ তখন বার বার বিতর্কিত দেশের ক্রিকেট বোর্ড। বিশেষ করে কে হবেন সভাপতি আর পরিচালক তা নিয়েই যেন প্রতিযোগিতা। নয় মাসে দু’জন সভাপতির হাত বদল বিসিবিতে। নতুন সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। হ্যাঁ, দায়িত্ব নিয়েই তিনি জানিয়েছেন তার অন্যতম ফোকাস থাকবে মাঠের ক্রিকেটে। তিনি বলেছেন, ‘অবশ্যই যা ঘটছে তা দুঃখজনক। আমার প্রথম ও একমাত্র ফোকাস থাকবে মাঠের ক্রিকেটে।’ অবশ্য ৯ মাস আগে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেয়া ফারুক আহমেদও বলেছিলেন একই কথা।  দেশের ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক দায়িত্ব নেয়ার পর সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি একবিন্দু। শূন্য থেকে শুরু করেছিলেন, ফিরেছেন শূন্য হাতেই। মাঠের ক্রিকেটের চেয়ে তার কাছে বেশি প্রধান্য পেয়েছে ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন, দুর্নীতি খোঁজা। কিন্তু তা করতে গিয়ে মাঠ থেকে ক্রিকেটকে আরো দূরে ঠেলে দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তাকেও ছুড়ে ফেলা হয়েছে। এবার দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা বুলবুলকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর। যেখানে ক্রিকেটই সবার আগে প্রধান্য পাবে। এরই মধ্যে নিজের প্রথম সভাতেই বিসিবি’র সব বিভাগের দায়িত্বে থাকা পরিচালকদের কাছে তাদের পরিকল্পনা চেয়েছেন।

 বিশেষ করে ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের প্রতি তার নজর। এ বিষয়ে বিসিবি’র মিডিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু বলেন, ‘অবশ্য ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগ নিয়ে বিসিবি’র নয়া সভাপতির ভাবনা আছে। বর্তমানে এই বিভাগের চেয়ারম্যান সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজমুল আবেদিন ফাহীম দলের সঙ্গে পাকিস্তানে আছেন। তিনি দেশে ফিরে এলে দলের ব্যর্থতা নিয়ে তার কাছে রিপোর্ট চাওয়া হবে। তার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন সভাপতি। আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে যেন মাঠের ক্রিকেটের উন্নতি করা সম্ভব হয়।’

বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল রয়েছে পাকিস্তান সফরে। সেখানে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টির সিরিজ হেরেছে লিটন দাসের দল। দেশে ফিরে এসে ঈদের ছুটি কাটিয়ে চলে যাবেন তারা শ্রীলঙ্কায়। সেখানে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল। এরপর দেশের মাটিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। পরে বাংলাদেশ সফরে আসবে ভারত। বলার অপেক্ষা রাখে না আগামী কয়েক মাস টাইগারদের সামনে নিজেদের ভাবমূর্তি ফেরানোর বড় পরীক্ষা। এবছর এশিয়া কাপ ও আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে ভারতের মাটিতে টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এসিসি ও আইসিসি’র দুটি বৈশ্বিক আসরের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে বাংলাদেশ দলকে। এখন পর্যন্ত আইসিসি’র কোনো টুর্নামেন্টেই শিরোপার মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি কোনো বিশ্বকাপের ফাইনালও খেলতে পারেনি দল। টেস্ট ক্রিকেটে দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও সাফল্য তলানিতে।  মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এমনকি ইমরুল কায়েসদের বিকল্প খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিন ফরম্যাটেই দলের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার নাম ব্যাটিং। বড় বড় নামিদামি কোচ এনেও ব্যাটিং ব্যর্থতার রোগ দূর করা যাচ্ছে না। এখন দেখার বিষয় নয়া সভাপতি বুলবুল ক্রিকেটে যে ধুলা জমেছে সেটি সরিয়ে খেলা কতটা ফেরাতে পারেন। দল মাঠের খেলায় ঘুরে না দাঁড়ালে হয়তো বিসিবি’র চেয়ারও এক দিন হয়ে পড়বে  মূল্যহীন!