ঢাকা, ৬ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৮ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

শরীরের কোথাও কেটে গেলে তৎক্ষণাৎ যা করবেন

(২ দিন আগে) ৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৮:১৪ অপরাহ্ন

mzamin

রান্নাঘরে প্রায়ই ধারালো সরঞ্জামে লেগে হাত-পা কেটে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। ছোটখাটো এসব কাটা-ছেঁড়া যেন গৃহিণীদের নিত্যদিনের সমস্যা। শিশুদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যার সম্ভাবনা আরও বেশি থাকে। দরজার সামনে কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ, স্বভাবতই এই সময়ে এ ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা আরও বেশি। ধারালো কোনো বস্তুতে কেটে গিয়ে ক্ষত সৃষ্টি হওয়াকে বলা হয় কাট ইনজুরি। আবার ভোঁতা কোনো
জিনিস দিয়ে বা কোথাও পড়ে গিয়ে আঘাত পেলে সাধারণত ত্বক কেটে যায় না বরং থেঁতলে যায় বা ছিঁড়ে যায়- একে বলা হয় ল্যাসারেসন।

যেভাবেই ক্ষত তৈরি হোক না কেন, শরীরের কোথাও কেটে যাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে করণীয় হলো-
রক্তপাত বন্ধ করা এবং সংক্রমণ যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
তবে রক্তপাত বন্ধ না হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য কোথাও কেটে গেলে প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি-

১. একটা পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে কাটা স্থানটি চেপে ধরে রাখুন। কাপড় বা গজ না পেলে হাতের তালু কিংবা দুই আঙ্গুল ব্যবহার করে চিমটির মতো ধরে রাখতে পারেন। টানা ২০-৩০ মিনিট চাপ দিয়ে ধরে রাখলে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে।
২. পাশাপাশি এক টুকরো বরফও পেঁচিয়ে ধরে রাখতে পারেন। কাটা স্থানটি একটু উঁচু করে রাখতে হবে।
রক্ত বন্ধ হয়েছে কিনা তা বারবার খুলে না দেখাই ভালো।
৩. রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেলে টিউবওয়েল বা ট্যাপের বহমান পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। কাটা স্থান জীবাণুমুক্ত এবং পরিষ্কার করার জন্য সাবান বা আয়োডিন ও আয়োডিনজাত অ্যান্টিসেপটিক কিংবা ক্লিনজারও ব্যবহার করা যায়।
৪. কাটা স্থান পরিষ্কার করার পর ওই জায়গায় পাতলা স্তরে অ্যান্টিবায়োটিক মলম দিয়ে ঢেকে দিন।
মিউপিরোসিন, নিওমাইসিন বা এ জাতীয় মলম সবসময় বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে রাখা উচিত।
৫. এগুলো হাতের কাছে না পেলে হলুদের গুঁড়া কিংবা লবণ পানিও ব্যবহার করা যায়। সবশেষে একটি পাতলা গজ বা ব্যান্ডেজ দিয়ে সম্পূর্ণ স্থানটি হালকাভাবে আটকে দিতে হবে।
৬. খেয়াল রাখবেন, কেটে-ছিঁড়ে গেলে রক্তপাত হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটলে বুঝতে হবে যে, রক্তনালি কেটে গেছে। যা সহজে বন্ধ নাও হতে পারে।
৭. আবার রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা থাকলে, যেমন- যকৃতের রোগ, হিমোফিলিয়া, ডেঙ্গু কিংবা দীর্ঘদিন ধরে অ্যাসপিরিন সেবন করছেন, এমন রোগীর রক্তপাত সহজে বন্ধ নাও হতে
পারে।
৮. অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে নাড়ির স্পন্দন কমে আসতে পারে। সেইসঙ্গে রক্তচাপ কমে যেতে পারে এবং হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসতে পারে। এর অর্থ হলো- রোগীর জীবন বিপন্ন হয়ে আসছে। আবার কোনো রোগী কাটা-ছেঁড়ার পর হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন। আধা ঘণ্টা চেপে রাখার পরও যদি রক্তপাত বন্ধ না হয়, তাহলে ওই স্থানে সেলাই লাগতে পারে।
৯. কোনো ধাতব নোংরা বস্তুর কারণে ক্ষত তৈরি হলে এক ডোজ টিটেনাস ইনজেকশন নেয়া
প্রয়োজন। তবে ১০ বছরের মধ্যে টিটেনাস টিকা না দেয়া থাকলে পরিষ্কার ক্ষত হলেও একটি
বুস্টার ডোজ নেয়া ভালো। এ ছাড়া নোংরা বস্তু দিয়ে কেটে গেলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ মুখে সেবন করার প্রয়োজন হতে পারে।
১০. রড বা টেঁটা জাতীয় কোনো বস্তু ঢুকে রক্তপাত হলে এবং ক্ষতস্থানে ওই বস্তু থেকে গেলে ক্ষতস্থানের দুই পাশ চেপে ধরতে হবে। কোনোভাবেই ক্ষতস্থানের ওপর চাপ দেয়া যাবে না। এমনকি ক্ষতস্থান থেকে বস্তুটি তুলে ফেলারও চেষ্টা করবেন না। ক্ষতস্থান ও বস্তুটির ওপর আলতো করে গজ বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দিন। এ রকম আহত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

আমার কখন ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করা উচিত?
ছোটখাটো ক্ষতের জন্য সাধারণত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
আপনার ক্ষত যদি:
১. রক্তপাত বন্ধ হয় না
২. আপনার চোখের পাতায় অথবা আপনার চোখের কাছে
৩. নোংরা অথবা নোংরা জলে ঘটেছিল
৪. খুবই বেদনাদায়ক
৫. আপনার হাঁটু বা আঙ্গুলের মতো জয়েন্টের উপরে
৬. কামড় থেকে হয়, তা সে প্রাণীর কামড় থেকে হোক বা অন্য কোন মানুষের কামড় থেকে হোক
৭. আপনি নিশ্চিত নন যে আপনি আপনার টিটেনাসের টিকা সম্পর্কে আপডেট আছেন কিনা।
ক্ষতটি যদি:
১. কয়েক মিলিমিটারেরও বেশি গভীর
২. ফাঁকা জায়গা- ক্ষতের পাশগুলো নিজেরা ভালোভাবে একসঙ্গে বসে না এই ধরনের ক্ষতগুলো নিম্নলিখিত উপায়ে বন্ধ করার প্রয়োজন হতে পারে:
১. সেলাই
২. টিস্যু আঠা
৩. স্ট্যাপল

লেখক
ডা. রতন লাল সাহা
কনসালট্যান্ট, জেনারেল এবং ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি
চেম্বার: আলোক হাসপাতাল, মিরপুর-৬
হটলাইন: ১০৬৭২

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status