ঢাকা, ২৫ জুন ২০২৫, বুধবার, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

রাশিয়ায় গিয়ে যুদ্ধে প্রাণ গেল সোহানের

পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি
২৫ জুন ২০২৫, বুধবার
mzamin

দালালের খপ্পরে পড়ে রাশিয়া গিয়ে চাকরির নামে রুশ বাহিনীর হয়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রাণ হারালেন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার সোহান মিয়া। গত শনিবার বিকাল সাড়ে তিনটায় বন্ধু সহযোদ্ধা জাফরের মাধ্যমে সোহানের মা বিষয়টি জানতে পারেন। পরে ফোনে সোহানের মরদেহের ছবিও পাঠায় জাফর। সরজমিন দেখা গেছে, তার বাড়িসহ গোটা গ্রামে চলছে শোকের মাতম। চাকরির আশায় বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিলেন উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের সোহান মিয়া ও তার বোনজামাই আকরাম মিয়া। ধারদেনা করে ১৪ লাখ টাকার বিনিময়ে দেশ ছাড়েন তারা। 

জানা যায়, দালালচক্র তাদের চকলেট কারখানায় কাজ না দিয়ে রাশিয়ার কাছে বিক্রি করে দেয়। ফলে সে দেশে গিয়ে সোহানকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ার জন্য অস্ত্রের প্রশিক্ষণে নামতে হয়। তবে তার বোনজামাই আকরাম মিয়া কৌশলে পালিয়ে বিভিন্নস্থানে আত্মগোপনে থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। সোহান ইছাখালী গ্রামের মৃত সোহরাব মিয়ার ছেলে। পরিবারে তার মা নূরুন্নাহার ও স্ত্রী হাবিবা আক্তার এবং ১৬ মাসের ছেলে ফারহান রয়েছে। তার বোনজামাই সরকারচর গ্রামের কাজল মিয়ার ছেলে। সোহানের বড় চাচা রেজাউল আলম রিপন বলেন, ঢাকার বনানীর ড্রিম হোম ট্রাভেলস থেকে জেরিন নামে এক দালালের মাধ্যমে সাইপ্রাস যাওয়ার জন্য কাগজপত্র জমা দেন তারা। কিন্তু দীর্ঘদিন পর দালালচক্র রাশিয়ার ভিসা করে দেন তাদের। পরে ২০২৫ সালের ২২শে ডিসেম্বর ১০ জনের একটি দল রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

তিনি জানান, রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সেখানে তাদের ৪ দিন রাখে। কিন্তু সোহানসহ আরও দু’জনকে একদিন পরই সেখান থেকে নিয়ে যায় রাশিয়ার সেনা ক্যাম্পে। নিয়েই শুরু হয় দালালচক্রের অত্যাচার। যুদ্ধের প্রশিক্ষণে যেতে সামরিক পোশাক দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ নিতে না চাইলে দেয়া হয় হত্যার হুমকি। করা হয় মারধর। বন্ধ করে দেয়া হয় খাবার। পরে সোহান আকরামকে এগুলো জানায় এবং সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বলে। সোহানের দু’দিন পরে আকরামেরও যাওয়ার কথা ছিল। পরে সেখান থেকে আকরাম পালিয়ে যায়। বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করে দেড় লাখ টাকা নিয়ে টিকিট কেটে গত ১৬ই জানুয়ারি দেশে ফিরে আসে। সোহানের মা নূরুন্নাহার কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ধারদেনা করে ৭ লাখ টাকা দিয়ে তার একমাত্র ছেলেকে বিদেশে পাঠায়। দালালচক্র সোহানকে রাশিয়ায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে নামিয়েছিল। সংসারের একমাত্র উপার্জনশীল সোহান। 
তিনি বলেন, এখন আমি কী করবো। যুদ্ধ চলাকালে মাঝে-মধ্যে তার সঙ্গে কথা হতো। সে দেশে আসার জন্য সারাক্ষণ কান্না করতো। তার বন্ধু জাফর আমাকে জানায়, বোমা বিস্ফোরণে সে মারা যায়। আমি দালালদের গ্রেপ্তারসহ বিচার চাই। আর যেন তাদের খপ্পরে পড়ে কোনো মা’র বুক খালি না হয়। স্ত্রী হাবিবা আক্তার জানান, উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটছিল তাদের। সোহানকে ফিরিয়ে আনতে ড্রিম হোম ট্রাভেলসে যোগাযোগ করা হয়েছে অনেকবার। পুনরায় আড়াই লাখ টাকা নিয়ে বলেছিল জানুয়ারির ২৬ তারিখে এনে দেবে। কিন্তু আনা তো দূরের কথা এখন সে লাশ হয়ে গেল। আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়েও যোগাযোগ করেছি। তারাও কিছুই করলো না। এখন আমার একমাত্র ১৬ মাসের সন্তানকে নিয়ে কীভাবে বাচবো? উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুবক্কর সিদ্দিকী বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করলে আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সোহানের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো। তার পরিবারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেন তিনি।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status