খেলা
লঙ্কায় লিটনের ‘দুই চ্যালেঞ্জ’
ইশতিয়াক পারভেজ, কলম্বো শ্রীলঙ্কা থেকে
১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
পরিবর্তনের এক অস্থির স্রোতে ভাসছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। চলছে এক নীরব পুনর্জাগরণের লড়াই, যেখানে শ্রীলঙ্কায় নিজেদের ফিরে পাওয়ার মিশনে সাফল্যের পরশপাথর খুঁজছে টাইগাররা। গলে প্রথম টেস্টে জয়ের হাতছানি থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা ড্র হয়। এরপর কলম্বো টেস্ট হেরে সিরিজ ড্র বা জয়ের স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে নির্মমভাবে। টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও শেষ ম্যাচের হারের বোঝা নিয়ে নেতৃত্ব ছেড়ে দেন, প্রশ্ন রেখে যান তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক করার বোর্ডের সিদ্ধান্ত নিয়েও। ওয়ানডের নতুন সেনাপতি মেহেদী হাসান মিরাজের অধ্যায় শুরু হলো হার দিয়ে। যদিও দ্বিতীয় ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন, কিন্তু ক্যান্ডির পাল্লেকেলেতে সেই স্বপ্নও ধূলিসাৎ হলো। দুটি সিরিজ হারের মূলে ছিল ব্যাটিংয়ের করুণ ব্যর্থতা। এবার মঞ্চে আবির্ভাব টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন কুমার দাসের। তার সামনে ‘দ্বৈত চ্যালেঞ্জ’। একদিকে কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে দলকে সঠিক পথে চালিত করা, অন্যদিকে নিজেকে ফিরে পাওয়ার পথ খুঁজে বের করা।
টেস্ট এবং ওয়ানডে, উভয় ফরম্যাটেই লিটনের ফর্ম এখন গভীর সংকটে। টি-টোয়েন্টির চিত্রটাও বড্ড হতাশাজনক; শেষ ১২ ইনিংসে নেই একটিও অর্ধশতক। এমন এক পরিস্থিতিতে অধিনায়ক কি আগে দলকে উদ্ধার করবেন, নাকি নিজেকে? এই প্রবল চাপের মধ্যে থাকা অধিনায়ক কিভাবে দলকে পথ দেখাবেন, সেটি ভাবনার কারণ।
ক্যান্ডির নয়নাভিরাম পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে মিরাজদের জন্য ইতিহাস গড়ার সুযোগ এসেছিল, কিন্তু লঙ্কার মাটিতে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সেই স্বপ্ন হাতের মুঠো থেকে ফসকে গেল। আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে একই মাঠে গড়াবে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বিদেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের রেকর্ড উন্নত করা এবং শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে জয় তুলে নেওয়া- সব মিলিয়ে এক কঠিন পরীক্ষার মুখে অধিনায়ক লিটন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট। সবশেষ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হার এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশের পর দল অনেকটাই চাপে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে লিটন দাসের অধিনায়কত্বে নতুন করে পথ খুঁজে নিতে হবে দলকে। এর আগেও তিনি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তবে শ্রীলঙ্কার মাটিতে লঙ্কানদের হারানো বরাবরই একটি কঠিন কাজ। লিটনকে শুধু ব্যাট হাতেই নয়, অধিনায়ক হিসেবেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। তার কৌশলগত সিদ্ধান্ত, ফিল্ডিং সাজানো এবং বোলারদের সঠিক ব্যবহার-সবকিছুই এই সিরিজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তার নেতৃত্ব কতটা দলকে এক সুতোয় বাঁধতে পারে এবং কঠিন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সেটাই এই সিরিজে দেখার বিষয়। পাল্লেকেলে স্টেডিয়াম বাংলাদেশের জন্য মিশ্র অভিজ্ঞতার। এই মাঠে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জয় মাত্র একটিতে, আর হার তিনটিতে। ২০১২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই মাঠে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিল বাংলাদেশ এবং দুটিতেই হেরেছিল। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম খেলার সুযোগ হয় এই মাঠেই ২০১৩ সালে। সিরিজের একমাত্র সেই ম্যাচে লঙ্কানদের কাছে হেরে যায় দল। সেটিই ছিল টাইগারদের লঙ্কার মাটিতে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ। শুধু তাই নয়, পাল্লেকেলেতে সেটিই ছিল টাইগারদের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ, যেখানে ১৯৯ রান তাড়া করে বাংলাদেশ ১৮১ রানে থেমেছিল এবং ১৭ রানে হেরে যায় হাতে ৩ উইকেট থাকলেও।
বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছে এখন পর্যন্ত ১৭বার । এর মধ্যে বাংলাদেশের জয় ৬ ম্যাচে এবং হার ১১টিতে। তবে সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার মাটিতে ২০১৭ সালে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-১ এ ড্র করেছিল বাংলাদেশ। লঙ্কার মাটিতে দুই সিরিজের একটি হার আর দুটিতে ড্র। তবে দ্বি-পাক্ষিক লড়াই একতরফা হলেও, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৮ নিদাহাস ট্রফিতে পরপর দুটি ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। সেই হিসেবে লঙ্কান মাটিতে ৫ ম্যাচে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয় পেয়েছে টাইগাররা। শুধু তাই নয়, সবশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০২৪ সালে তিন ম্যাচের দুটিতে জয় পায় টাইগাররা, যার শেষটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে। পাল্লেকেলের উইকেট সাধারণত ব্যাটিং সহায়ক, যা বড় রানের ইঙ্গিত দেয়। ওয়ানডে সিরিজে তার প্রমাণও পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে, এখানে স্পিনাররাও বাড়তি সুবিধা পান, বিশেষ করে ম্যাচের শেষের দিকে। দ্রুতগতির বোলারদের জন্য নতুন বলে কিছুটা সুইং থাকতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ক্যান্ডিতে আজ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এটি ম্যাচের গতিপথকে প্রভাবিত করতে পারে এবং ম্যাচ বৃষ্টিবিঘ্নিত হলে ডিএলএস মেথডও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
পাঠকের মতামত
এই মদন লাল রে দল থেকে এখনো বের করা হই নাই কেন?