শেষের পাতা
যত দ্রুত দেশকে নির্বাচনের ট্র্যাকে উঠানো যাবে ততই মঙ্গল
স্টাফ রিপোর্টার
১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
যত দ্রুত দেশকে নির্বাচনের ট্র্যাকে উঠানো যাবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাজধানীর নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস ও অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদকে দেখার পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। সকাল সাড়ে ১১টায় আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসকে দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব। তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে তার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন। পরে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদকে দেখতে যান মির্জা ফখরুল এবং তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা কথা বলতে চাই, গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি যদি কেউ থাকে সেটা হচ্ছে বিএনপি এবং সবচেয়ে বেশি লড়াই যদি করে গণতন্ত্রের জন্য সেটা বিএনপি। বাংলাদেশে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বিএনপি নিয়ে এসেছে বহুদলীয় গণতন্ত্রে এবং পরবর্তীতে সংসদীয় গণতন্ত্রে। সুতরাং এই বিষয়ে প্রশ্ন করার কোনো প্রয়োজন নেই। একটি জিনিস কী? দেশটাকে সকলে মিলে বাঁচাতে হবে। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হচ্ছে দেশকে সঠিক ট্র্যাকে উঠানো এবং যত দ্রুত সেটাকে উঠানো যাবে ততই মঙ্গল।
যারা মনে করেন যে, নির্বাচন প্রয়োজন নেই-আমার মনে হয়, তারা আবার চিন্তা করবেন। নির্বাচন প্রয়োজন জনগণের জন্য। একটা নির্বাচিত সরকার দরকার, যে সরকারের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক থাকবে। সেই কারণেই আমরা সংস্কারে অংশ নিচ্ছি। প্রত্যেকটি সংস্কারের দাবি আমরাই তুলেছি। সুতরাং সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে কোনো সাংঘর্ষিকতা নেই, দুইটা একসঙ্গে চলবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা খুব ভালো করে জানেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নির্যাতন-হত্যা-গুম-খুনের সবচেয়ে বড় ভিক্টিম আমাদের দল বিএনপি। আমি নিজেও ১১২টা মামলা এবং ১৩ বার জেলে গেছি। আমরা সব সময় মনে করি যে, যারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে কাজ করবে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছে তাদের প্রতিটি ব্যক্তির শাস্তি হওয়া প্রয়োজন, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত এবং শাস্তি হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি এককভাবে, আমি মনে করি দ্য রেসপনসিবল ফর দ্য কিলিং অব দ্য থাউজেন্টস অব পিপল। তার বিচার শুরু হয়েছে। আমরা আশাবাদী তার এবং তার সঙ্গে যারা গণহত্যার সঙ্গে এবং এই ফ্যাসিস্ট আক্রমণের সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রত্যেকেরই বিচার হবে। সেই হিসেবে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দলও যদি দেখা যায়- দলগত হিসেবে তাদের বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
ফরিদা পারভীনের চিকিৎসা, প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা: লালনগীতি শিল্পী ফরিদা পারভীনের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল দুপুরে মহাখালীর ইউনির্ভাসেল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে (আয়েশা মেমোরিয়াল হসপিটাল) চিকিৎসাধীন শিল্পী ফরিদা পারভীনকে দেখার পর সাংবাদিকদের মাধ্যমে তিনি এ আহ্বান জানান। বিএনপি মহাসচিব বলেন, লালন সংগীতে ফরিদা পারভীন অদ্বিতীয় এবং গোটা বাংলাদেশের মানুষের কাছে লালন সংগীতের প্রিয় শিল্পী তিনি। দীর্ঘকাল ধরে তিনি সংগীত জগতে যে তার একচ্ছত্র প্রভাব, সেটা তিনি অক্ষুণ্ন রেখেছেন। তিনি অসুস্থ হয়ে এখানে এসেছেন অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে। তার কিডনির সমস্যা আছে, মূলত প্রধানত রেনাল প্রভলেম এবং অন্যান্য সমস্যা আছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমার আহ্বান সরকারের কাছে যে, এ রকম একজন গুণী শিল্পী যিনি বিশ্বে সমাদৃত তার চিকিৎসার জন্য তাদের স্পেশাল বোর্ড গঠন করা উচিত এবং অবিলম্বে আমি আহ্বান জানাবো যে, বোর্ড গঠন করে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা বিদেশে দরকার হলে তার ব্যবস্থা করতে হবে, এটা জাতি চায়। এই কাজটা আমি অনুরোধ করবো, আহ্বান জানাবো প্রধান উপদেষ্টাকে যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নেবেন তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা যেন সম্ভব হয়।
গত ৫ই জুলাই ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানোর পর এই শিল্পীকে আইসিইউতে রাখা হয়। ৭০ বছর বয়সী এই শিল্পী শুধু কিডনি সমস্যা নয়, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন দীর্ঘদিন ধরে। বিএনপি মহাসচিব শিল্পীর শয্যার পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চিকিৎসকদের কাছ থেকে তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং করণীয় জানতে চান। মির্জা ফখরুল শিল্পী পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিশেষ সহযোগিতা তাদেরকে প্রদান করেন।
বিএনপি’র মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপি মহাসচিব এই বরণ্যে শিল্পীর সর্বোচ্চ চিকিৎসার জন্য সরকারের দুই উপদেষ্টার সঙ্গে হাসপাতাল থেকে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তিনি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন এবং শিল্পীর চিকিৎসার জন্য তাদের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ সময় বিএনপি’র সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন উজ্জল, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাঈদ সোহরাব, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের সভাপতি হেলাল খান, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।