ঢাকা, ১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

ফেনীসহ তিন জেলায় ফের বন্যার শঙ্কা

পানিবন্দি লাখো মানুষ

বাংলারজমিন ডেস্ক
১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

টানা ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলায় ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে শত শত গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে ফেনী শহর, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা। হাঁটু পানিতে ডুবে যাওয়ায় ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল বন্ধ পড়েছে। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসি মানুষ। বানভাসী এসব মানুষ ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে। এদিকে নোয়াখালীর প্রায় সব উপজেলায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ডুবে গেছে আঞ্চলিকসড়ক, রাস্তাঘাট, অলিগলি। লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রায়গঞ্জের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে  ফেনী ও নোয়াখালীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার স্থগিত করা হয়েছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে- 

ফেনী প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট লঘুচাপে টানা বর্ষণ ও ভারতীয় উজানের পাহাড়ি ঢলে ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সীমান্তবর্তী মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ২০টি স্থান ভেঙে অন্তত ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানি বন্দি হয়েছেন। বাড়ি-ঘর পানিতে ডুবে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছেন বানভাসিরা।

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে জানান, নোয়াখালীতে টানা বৃষ্টির ফলে জেলার বেশিরভাগ সড়ক ও অলিগলির রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। বাসা বাড়িতে ঢুকে গেছে পানি। একদিকে ভারী বর্ষণ, অন্যদিকে পানি আটকে থেকে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এর মধ্যে ফেনীর মহুরী নদীর পানি বাড়তে থাকায় নোয়াখালী ফের বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ১৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আরও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এদিকে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর ৪টি উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার ও এর বৃহস্পতিবারের পরীক্ষাগুলো স্থগিত থাকবে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুর উদ্দিন জাহাঙ্গীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি জানান, গত চার দিনের টানা বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের উপকূলের চরাঞ্চলসহ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৪-৫ ফুটের বেশি জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মেঘমা নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ অন্যান্য ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার চরকালকিনি, চরমার্টিন, চরলরেন্স, চরফলকন, পাটারিরহাট, চরজাঙ্গালিয়া, চরকাদিরা ও তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের নিচু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ দুই লক্ষাধিক মানুষ বিপাকে পড়েছেন।

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে গত ৩ দিন ধরে টানা বৃষ্টির ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, অফিসগামী ও সাধারণ মানুষ। রায়পুর উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বিশেষ করে কেরোয়া, বামনী, সাগরদী, চরবংশী, চর আবাবিল, নতুনবাজার, শায়েস্তানগর চর মোহনা ও রায়পুর সরকারি কলেজ সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলীয় এলাকাগুলোসহ ফসলি জমি ২ থেকে ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলার জনসাধারণ। ভারি বৃষ্টিতে জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে খাল বিলে চারদিকে পানি বেড়ে যাওয়ায় হতাশায় দিন কাটছে কৃষক, পোল্ট্রি ও মৎস্য চাষীদের। অনেক বীজতলা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনিশ্চয়তায় আছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে চলতি বর্ষায় আবার বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যার ফলে এবার একটু ভারী বৃষ্টিতেই আতঙ্কিত হচ্ছেন মানুষ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘বন্যার আশঙ্কায় পানি প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে গত মাসেই তিনটি খাল খনন ও পরিষ্কার করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি’।

 

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status