নির্বাচিত কলাম
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ
বিশ্বকাপে ফেভারিট কারা
মাহবুব নাহিদ
৩১ মে ২০২৪, শুক্রবারএবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে ফেভারিটের তালিকায় রাখাটা কোনো দোষের কাজ না। প্রথমত, তারা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বলেই শুধু না। সব টুর্নামেন্টে, সব ফর্মেটে তাদের এগিয়ে রাখার মতোই একটা দল তারা। তাদের দলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একদম তারকায় ঠাসা, অভিজ্ঞতায় ভরা বলা চলে। তাদের দলের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের লম্বা ব্যাটিং লাইন। বাটলার, বেয়ারস্টো, সল্ট, ব্রুক, ডাকেট, লিভিংস্টোন, মঈনরা তো নিজেদের দিনে একাই একাই সব শেষ করে দিতে পারেন। তার মাঝে স্যাম কুরানও ভালো ব্যাট চালাতে পারেন। কুরান গত বিশ্বকাপের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়া খেলোয়াড়, তার উপরে আলাদা একটা চাপ থাকবে, তবে সেই চাপকে মোকাবিলা করার শক্তিও তার আছে। বোলিংয়ে কুরানের সঙ্গে আছে টপলি, উড আর যোগ হয়েছে অভিজ্ঞ জর্ডান আর আর্চার, আর তাদের হাতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আদিল রশিদ। বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটগুলো আদিল রশিদ বাড়তি সুবিধা পাবে বলে মনে হচ্ছে। আর আইপিএল খেলার কারণে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরাও সবাই এখন স্পিন খেলতে পারদর্শী। রশিদের লেগ স্পিনের সঙ্গে যোগ হবে মঈন আলীর অফ স্পিন। মঈন মাঝেমধ্যে বোলিংয়েও ভেলকি দেখান। মোট কথা ইংল্যান্ড দলের আদতে কোনো দুর্বলতা নেই। দুর্বলতা যদি কোনোদিন প্রকাশ পায় সেদিন হয়তো তাদের খারাপ কিছু হবে কিন্তু আদতে তারা হট ফেভারিট
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ একদম দরজায় কড়া নাড়ছে। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে খেলা। তাই এখন অনেক আলোচনা হচ্ছে কারা জিতবে ট্রফি কারা ভালো খেলবে, ইত্যাদি বিষয়। যেহেতু এখনই চলছে চূড়ান্ত আমেজ তাই চেষ্টা করলাম আমার দেখা সেরা দলগুলো সম্পর্কে কিছু বলতে। ইংল্যান্ড- এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে ফেভারিটের তালিকায় রাখাটা কোনো দোষের কাজ না। প্রথমত, তারা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বলেই শুধু না। সব টুর্নামেন্টে, সব ফর্মেটে তাদের এগিয়ে রাখার মতোই একটা দল তারা। তাদের দলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একদম তারকায় ঠাসা, অভিজ্ঞতায় ভরা বলা চলে। তাদের দলের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের লম্বা ব্যাটিং লাইন। বাটলার, বেয়ারস্টো, সল্ট, ব্রুক, ডাকেট, লিভিংস্টোন, মঈনরা তো নিজেদের দিনে একাই একাই সব শেষ করে দিতে পারেন। তার মাঝে স্যাম কুরানও ভালো ব্যাট চালাতে পারেন। কুরান গত বিশ্বকাপের ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্ট হওয়া খেলোয়াড়, তার উপরে আলাদা একটা চাপ থাকবে, তবে সেই চাপকে মোকাবিলা করার শক্তিও তার আছে। বোলিংয়ে কুরানের সঙ্গে আছে টপলি, উড আর যোগ হয়েছে অভিজ্ঞ জর্ডান আর আর্চার, আর তাদের হাতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আদিল রশিদ। বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটগুলো আদিল রশিদ বাড়তি সুবিধা পাবে বলে মনে হচ্ছে। আর আইপিএল খেলার কারণে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরাও সবাই এখন স্পিন খেলতে পারদর্শী। রশিদের লেগ স্পিনের সঙ্গে যোগ হবে মঈন আলীর অফ স্পিন। মঈন মাঝেমধ্যে বোলিংয়েও ভেলকি দেখান। মোট কথা ইংল্যান্ড দলের আদতে কোনো দুর্বলতা নেই। দুর্বলতা যদি কোনোদিন প্রকাশ পায় সেদিন হয়তো তাদের খারাপ কিছু হবে কিন্তু আদতে তারা হট ফেভারিট।
অস্ট্রেলিয়া- অস্ট্রেলিয়া এমন একটি দল যাদের আপনি বিশ্ব আসরের কোনো ফর্মেট থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবেন না। আপনি চাইলেও তারা ঠিকই তাদের জায়গা নিয়ে নিবে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে একটা চাপের মধ্যে ছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ২০২১ বিশ্বকাপে তারা তাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি পাওয়ার আশা পূরণ করে ফেলে। অস্ট্রেলিয়ার দল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে আমাদের দেশে। কারণ এসব আমাদের দেশেই হয়, ওদের দেশে হয় না। স্মিথ এবং ফ্রেজার ম্যাকগার্ক বাদ পড়ায় অনেক আলোচনা হয়েছে। মূল ব্যাপার হচ্ছে ওরা আবেগ দিয়ে কাজ করে না, ওরা বিবেক দিয়ে কাজ করে। অস্ট্রেলিয়া দলে এবার তুরুপের তাস হতে পারে ট্রাভিস হেড। আইপিএলের শেষ দুই ম্যাচ বাদ দিলে দুর্দান্ত কাটিয়েছেন তিনি। ওপেনিংয়ে তার সঙ্গে যদি ওয়ার্নার ফর্মে চলে আসে তাহলে অস্ট্রেলিয়া যেকোনো দলকে একদম সর্বনাশ করে দিতে পারবে। ব্যাটিংয়ে মিশেল মার্স আছে, আছে আইপিএলে অফ ফর্মে থাকা ম্যাক্সওয়েল, গ্রিন, হেডরা। কিন্তু দেখা গেল বিশ্ব আসরে সবাই জ্বলে উঠেছেন। আর উঠতেই পারে, তারা অস্ট্রেলিয়া বলেই। আইপিএলে শুরুর দিকে নিজেকে খুঁজে ফিরলেও শেষে ঠিকই জ্বলে উঠেছেন স্টার্ক, আর বিশ্বকাপে তিনি কতোটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন তা সবার জানা। সঙ্গে আছেন কামিন্স, হেজেলউড। পেস আক্রমণের পাশাপাশি স্পিনে অর্থডক্স স্পিনার এগার আর লেগ স্পিনার উইকেট টেকার জাম্পা। জাম্পা অস্ট্রেলিয়ার তুরুপের তাস, যেকোনো সময় যেকোনো দলকে করে দিতে পারেন ধ্বংস।
ভারত- ভারতের বোধ হয় বিশ্বকাপ পাওয়ার এটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ। ভারতের দলটা সম্ভবত মোহাম্মদ শামী ছাড়া আর কাউকেই মিস করবে না এবার। তবে আইপিএলের ফর্ম বিবেচনায় অনেকেই বাদ পড়েছেন ঠিকই কিন্তু এর পরেও ভারত দলে আছে অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের সম্মিলনে দারুণ এক কম্বিনেশন। দলের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হচ্ছে টপ অর্ডারে রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। বিশেষ করে রোহিতের কথা বলতেই হবে, রোহিত তার নিজের দিনে সবার থেকে সেরা। ওইদিনে রোহিতের ধারে কাছেও কেউ নেই। রোহিত যেন আলাদা একটা প্রজাতি হয়ে যান তখন আর ভিরাট কোহলি তো অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার, বিপদের সময় এক অদ্বিতীয় যোদ্ধা! ওপেনিংয়ে রোহিতের সঙ্গে অনেকেই হয়তো অভিষেককে দেখতে চেয়েছেন কিন্তু জসওয়ালও মন্দ নন। এরপরে আছেন সূর্যকুমার যাদব, যাকে এখন সবাই নতুন ডি ভিলিয়ার্স বলে থাকেন। বোলিংয়ে ভরসার প্রতীক বুমরাহ আছেন, আছেন সিরাজ, আর্শদ্বীপ, অলরাউন্ডার হিসেবে আছে হার্দিক আর জাদেজা। স্পিনে যাদুকর কুলদ্বিপ আছেন, তিনি হচ্ছেন এমন একজন বোলার যিনি কিনা নতুন পুরাতন দুই বলেই ঘুরাতে পারেন আর পারেন দুইদিকেই বল ঘুরাতে। ফিঙ্গার স্পিনার অপশন হিসেবে আছেন জাদেজা ব্যাকাপ আক্সার পাটেল আর রিস্ট স্পিনার চাহাল। তবে হ্যাঁ, আইপিএল শুরু হওয়ার পর ট্রফি না পাওয়ার কষ্ট কিন্তু ভারতের থেকেই যাচ্ছে। এই বিষফোঁড়া কাটাতে সময় হয়তো আরও লাগলেও লাগতে পারে। আর খুব দ্রুত রোহিত, কোহলির উইকেট পড়ে গেলে ব্যাটিং লাইন সমস্যায় পড়ার রিস্ক তো আছেই।
নিউজিল্যান্ড- নিউজিল্যান্ড এমন একটা দল যাদের কোনো বিচার বিবেচনা ছাড়াই একটা বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল পর্যন্ত রাখা যায়। কিন্তু ভাগ্য বরাবরই তাদের সঙ্গে ছেলেখেলা করে, ভাগ্য কখনো তাদের সহায় হয়ে দাঁড়ায় না, নাকি তাদের আসলেই দাঁড়ানোর মতো যোগ্যতা নেই কিনা তা কে জানে! গত চারটা বিশ্বকাপ যদি হিসাব করা হয়, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে, চারটাতেই তারা সেমি খেলেছে, দুইটার ফাইনালও খেলেছে, কিন্তু ট্রফি নামক সোনার হরিণের দেখা তারা পায়নি, আর কবে যে পাবে তা কে জানে! দলের বিবেচনায় আহামরি মনে না হলেও ব্যাটসম্যান হিসেবে উইলিয়ামসন, এলেন, কনওয়ে, বোলার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জায়ান্ট খ্যাত বোল্ট, সাউথি, সঙ্গে সান্টনার সোদির ঘূর্ণি যাদু। অলরাউন্ডার ক্যাটাগরিতে নিশাম, চাপম্যান, ফিলিপস, মিশেলরা তো আছেনই। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, এই দলটার সবাই পারফর্মার, সবাই নিজের সেরাটুকু দেয়ার জন্য খেলে, সবাই জেতার মানসিকতা নিয়ে খেলে। মাঠে নামার পরে তাদের ডেডিকেশনের মাত্রা হয়ে যায় আকাশচুম্বী, তারা হার মানতে সর্বদা নারাজ। এই কঠিন শক্তি তাদের এগিয়ে নিয়ে যায় বহুদূর, তবুও কোথাও যেন একটা সুর কেটে যায় তাদের। সেই কেটে যাওয়া সুর জোড়া লাগানোর চেষ্টায় নিশ্চয়ই কমতি থাকবে না তাদের।
পাকিস্তান- পাকিস্তান বিশ্ব আসরের একটা চমক দেখানো দল। কোনো আসরেই আগেভাগে কেউ তাদের হিসাবে রাখে না। তারা খেলা শুরুই করে খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে। প্রথম কয়েকটা ম্যাচ হারে, মাঝেমধ্যে ভালো দলের সঙ্গে হারে, কখনো বা হেরে বসে একদম ছোট কোনো দলের সঙ্গে। এরপরে তৈরি হয় এক ভয়ঙ্কর সমীকরণ। তখন পাকিস্তান হয়ে ওঠে অজেয়। এবং এসব হিসাব-নিকাশের মারপ্যাঁচ কাটিয়ে পাকিস্তান পৌঁছে যায় অন্তরে বন্দরে, মাঝেমধ্যে খুব খুব কাছে!
আদতে বাবর, রিজওয়ান, সাদাব, শাহিনরা কেউই ফর্মে নেই। অনেক ভরসা নিয়ে দলে ফেরানো আমির যেন হারিয়ে খুঁজছেন নিজেকে। ঘরোয়া খেলায় আশা জাগানো সাইম আয়ুব, উসমান, আজমরা জাতীয় দলের বাতাসের সঙ্গে এখনো নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন না। এই যে এত এত অফ ফর্মের ছড়াছড়ি, এটাই বোধহয় পাকিস্তান ভক্তদের জন্য আশার আলো। কারণ আপনি পাকিস্তান দলকে নিয়ে যা ভবিষ্যৎবাণী করবেন তাই হয়তো বিফলে যাবে! পাকিস্তান হুট করে সেমিফাইনাল, ফাইনাল খেলে ফেললেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। যেহেতু দলটাকে নিয়ে প্রেডিক্ট করা কঠিন আর গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট, তাই পাকিস্তানকে আপনি আপনার ফেভারিটের তালিকায় রাখতেই পারেন। আর একটা বিষয় সত্য যে, বিশ্ব আসরে পাকিস্তান জ্বলে ওঠে সবসময়। বাবর, রিজয়ান, শাহীন, আমির, ফখর, ইফতিখারসহ অনেক বড় নাম আছে, এরা জ্বলে ভালোকিছু হতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকা- বড় বড় তারকার নাম, আশা জাগানিয়া খেলা, মারমার কাটকাট সব ঘটনা, সবকিছুর মাঝে বিশ্বকাপের আসল চোকার দলের নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। হিসাবে তাদের সবাই রাখে, কিন্তু রেখে বারবার ফাঁসে। শক্তিমত্তার বিচারে নিশ্চয়ই সবচেয়ে সেরা দল, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে বিধ্বংসী খেলোয়াড় এখন তাদের দল। হেনরিক ক্লাসেন ছাড়াও স্টাবস, মিলার, জানসেনরা সবাই যে যার দিনে তুলকালাম করে দিতে পারেন। দলের সবচেয়ে বড় শক্তি টপ অর্ডার, ডি কক, হেনডরিকস, মার্করাম! তিনটি অসাধারণ নাম, স্পিন আক্রমণে শামসি, মাহরাজ আর পেস এটাকে রাবাদা, নরকে, কোটজে! কী নেই দলে। কিন্তু দলে ব্যাকআপ খেলোয়াড় না থাকার ভয় আর মিডল অর্ডারে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় না থাকায় একটু পিছিয়ে থাকবে তারা। তবে ফেভারিটের কাতারে নিশ্চিত তারা আছেই।