ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বীরউত্তম
১০ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবারmzamin

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মো. ইউনূসকে নিয়ে অনেক বড় বড় পণ্ডিতের অনেক বড় বড় কথা শুনছি। আমি যখন যা বলার বলেছি, সম্পূর্ণ নিজস্ব উপলব্ধি থেকে বলেছি। এক্ষেত্রেও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার স্তাবকেরা অধ্যাপক ইউনূসকে যত ছোট করেই দেখুন, বিবেচনা করুন, গালি দিন, কিন্তু আমার চোখে অধ্যাপক ইউনূসই বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি যিনি দেশে-বিদেশে সমানভাবে সমাদৃত, গ্রহণযোগ্য। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছেন, অনেক সংস্কারে হাত দিয়েছেন, আরও দিবেন। কিন্তু সব কিছু করতে পারবেন না। তিনি যদি দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, ভালো পুলিশি ব্যবস্থা করতে পারেন, অন্যদিকে বিচার ব্যবস্থায় অযোগ্যদের ঝেটিয়ে বিদায় এবং বিবেকবান যোগ্যদের দিয়ে বিচার কাঠামো দাঁড় করাতে পারেন তাহলে ইতিহাসে স্থান করে নিবেন।


অতি সমপ্রতি টাঙ্গাইলের এক সামরিক সদস্য নিহত হওয়ায় তার আত্মীয়স্বজনকে সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে বলেছিলাম, গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের নয়, শাসন ছিল শেখ হাসিনার। অন্যায়- উৎপীড়ন যা হয়েছে তার ৯০ ভাগ দায়ী শেখ হাসিনা। কিছু কিছু স্তাবকের গায়ে জ্বালা ধরেছে- তারা বলেছে, আমি নাকি শেখ হাসিনাকে আরও ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা বলেছিলাম। সেদিন ইত্তেফাকে লিখেছিলাম, ‘এখানে পেশাব করিবেন না, করিলে ১০ টাকা জরিমানা’। একই জিনিস যদি আবার লেখা হয় ‘এখানে পেশাব করিবেন, না করিলে ১০ টাকা জরিমানা।’ একটা কমাতে বাক্যের কতোটা হেরফের। নিশ্চয় আমি বলেছিলাম, দশ বছর কেন, কেয়ামত পর্যন্ত শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে আমার আপত্তি কোথায়? ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ভোট চুরি করে ক্ষমতা নয়। দেশ সবার, সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিরোধী দল কোনো কিছু করলেই সেটা ষড়যন্ত্র- এমন মনোভাব নিয়ে আর যা কিছু হোক দেশ চালানো যায় না। নেত্রী শেখ হাসিনা তেমনটাই করেছেন। সতী নারীর পতি যেমন একজন, একজন রাজনৈতিক কর্মীর নেতাও একজন। আমার রাজনৈতিক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। শেখ হাসিনা কখনো আমার নেতা ছিলেন না। তিনি দলীয় নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব করেছেন। দলের নেতা বহু হয় কিন্তু একজন প্রকৃত কর্মীর নেতা একজনই। তাই আমার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমি হাসিনা লীগ করি না। আমি করি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। আমাদের প্রতীক নৌকা নয়, গামছা। যতক্ষণ সম্ভব এটাকেই বুকে লালন করবো। জীবন শুরু করেছিলাম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। যেটুকু এসেছি আর কতোই বা বাকি। তাকে হৃদয়ে ধারণ করে, লালন করে পরপারে যেতে চাই। তাই দেশবাসীর কাছে সবসময়ই আমার আন্তরিক অনুরোধ হাসিনা লীগ আর আওয়ামী লীগ এক করে বিচার করবেন না। বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনা এক না। শেখ হাসিনার সন্তানরা এক না। আল্লাহ্‌-রাসুল বাবা-মা’র পরেই যারা রাজনীতি করে তাদের জনতার প্রতি আস্থা থাকতে হয়। তা যারা রাখতে পারে না- তারা আর যাই হোক রাজনৈতিক নেতাকর্মী হতে পারেন না, দেশপ্রেমিক হতে পারেন না। তাই বিষয়গুলো একটু গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে।
নানা জনের নানা মত, তেমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। নির্বিঘ্নে সবাই সবার মত ব্যক্ত করতে পারলে আর কিছু না হোক আমাদের কোথায় কোনদিকে যেতে হবে বা যাচ্ছি- তার একটা রাস্তা সহজ হয়।

চাপা দেয়া আগুন খুব একটা নিরাপদ নয়। আগুন যত চাপা দেয়াই হোক এক সময় সেটা বেরিয়ে আসবেই। তাই সবাই মিলে চেষ্টা করে যেকোনো আগুন নিভিয়ে ফেলা উত্তম। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মো. ইউনূসকে নিয়ে অনেক বড় বড় পণ্ডিতের অনেক বড় বড় কথা শুনছি। আমি যখন যা বলার বলেছি, সম্পূর্ণ নিজস্ব উপলব্ধি থেকে বলেছি। এক্ষেত্রেও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার স্তাবকেরা অধ্যাপক ইউনূসকে যত ছোট করেই দেখুন, বিবেচনা করুন, গালি দিন, কিন্তু আমার চোখে অধ্যাপক ইউনূসই বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি যিনি দেশে-বিদেশে সমানভাবে সমাদৃত, গ্রহণযোগ্য। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছেন, অনেক সংস্কারে হাত দিয়েছেন, আরও দিবেন। কিন্তু সব কিছু করতে পারবেন না। তিনি যদি দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, ভালো পুলিশি ব্যবস্থা করতে পারেন, অন্যদিকে বিচার ব্যবস্থায় অযোগ্যদের ঝেটিয়ে বিদায় এবং বিবেকবান যোগ্যদের দিয়ে বিচার কাঠামো দাঁড় করাতে পারেন তাহলে ইতিহাসে স্থান করে নিবেন। এসব কিছুর জন্য অবশ্য অবশ্যই একটি নির্ভেজাল সরকারি প্রভাবমুক্ত পক্ষপাতহীন জাতীয় নির্বাচনের প্রয়োজন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শেষ পর্যন্ত সব ক’টি নির্বাচনে ১০-১৫ শতাংশ ভোটারের বেশি অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু আমার দৃঢ়বিশ্বাস অধ্যাপক মো. ইউনূসের আহ্বানে ঠিক উপযুক্ত সময়ে নির্বাচন হলে তাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ৭০-৮০ শতাংশ ভোটার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করবে। ব্যাপক ভোটারের উপস্থিতি অনেক ক্ষেত্রে ভোট চোরদের সম্পূর্ণভাবে বিরত করবে। তেমন একটা উৎসবমুখর পরিবেশে অনেকের নির্বাচনে দুর্নীতি করার সুযোগ থাকবে না। ভোটারের অংশগ্রহণই ভোটে অর্ধেক কারচুপি আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যাবে।

নানাদিকে নানা আলোচনা। স্বাধীনতার এই ৫৩-৫৪ বছরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক মহান কর্ম সাধন করেছে। ধীরে ধীরে তারা যেমন মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল, সেটা পুরো মাত্রায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে নিয়ে নানা জন নানা কথা বলেছে। কিন্তু তিনি জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে যে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন- জনতার কণ্ঠে ‘এই মুহূর্তে দরকার-সেনাবাহিনীর সরকার’। এটা খুব সহজ কথা নয়। সত্যিই আমাদের সামরিক বাহিনীর সরকার দরকার নেই। কিন্তু দুর্যোগ-দুর্বিপাকের সময় মানুষ যে তাদের অতটা ভরসা করেছে এসব স্লোগান তারই প্রমাণ। মানুষের অন্তর থেকে পতিত সেনাবাহিনী বুকের ঠিক মধ্যখানে-যে অন্তরে স্রষ্টার বাস সেইখানে জায়গা করে নিয়েছে। তার স্বজন বংশধরবৃন্দ ভবিষ্যতে এর সুফল পাবে। জানি খুব উতলা হওয়ার কারণ নেই। সময় সব সমস্যা সমাধানে মস্ত বড় নিয়ামক।

অন্য একটা প্রসঙ্গ নিয়ে দু’কথা বলি। ইদানীং যেখানে সেখানে যে অসঙ্গতি দেখি তা আমাকে আহত করে। প্রায় ১ যুগ পর টাঙ্গাইল কোর্টে গিয়েছিলাম। সেটা এক জর্জ কোর্ট। জেলা জজের পরই কেউ হবেন। সওয়াল জবাবের শেষে মাননীয় জজ সাহেবের অনুমতি নিয়ে দু’কথা বলেছিলাম। প্রায় ১ ঘণ্টা তার সাক্ষ্য শুনছিলাম তিনি একটি প্রতিষ্ঠিত নামকরা কলেজের অধ্যক্ষ। ১০-১২ ফুট দূর থেকে তার সাক্ষ্য শুনছি। ও রকম একটা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যে সাক্ষী তিনি দিলেন তাতে আমি বিস্মিত হয়েছি। তার যদি অক্ষর জ্ঞান না থাকতো, তিনি যদি অতি সাধারণ হতেন, তাহলে তার ঐ সাক্ষ্য মানাতো। ওরকম একজন অনুপযুক্ত ব্যক্তি যদি অমন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হয়, তাহলে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যারা বের হবেন, তারা জাতি ও সমাজের জন্য কিছু করতে পারবেন না। জজ সাহেবের সামনে আমার নিবেদন তুলে ধরে ভালো লেগেছে। জজ সাহেবের ধারণ ক্ষমতা, বাচন ভঙ্গি আমার কাছে অতুলনীয় মনে হয়েছে। কিন্তু কোর্ট কাচারির পরিবেশ একেবারেই ভালো লাগেনি। মনে হয় জেলা জজের পরেই তিনি। তার বিচারালয়টি খুবই অপরিষ্কার, দেয়ালে রঙ নেই, মেঝেতে ঝাড়ু পড়েনি। যে আসনে বসেছিলেন, সে আসনেরও রঙ চটা। উকিল বার থেকে জর্জ কোর্ট পর্যন্ত কোনো মাছের বাজারের চাইতে সুন্দর দেখিনি। আশেপাশে যে নোংরা আবর্জনা পড়ে আছে আমাকে বললে তা পরিষ্কার করতে বড়জোড় একদিনের প্রয়োজন হবে। জেলা সদরের ফৌজদারি আদালতের আশপাশ দেখে বড় হতাশ হয়েছি। জেলা সদরে আমার তেমন যাতায়াত নেই। একদিকে ডিসির, অন্যদিকে এসপি’র অফিস। দু’চার- ছ’মাসে দু’একবার গেছি। কিন্তু কোর্ট কাচারিতে তেমন যাওয়া হয়নি। নোংরা দেখে বড় হতাশ হয়েছি। বেঁচে থাকলে জায়গাগুলো পয়-পরিষ্কার পবিত্র দেখলে আনন্দে হৃদয় ভরে যেতো।

পাঠকের মতামত

ব্লগাররা এক সময় বংগবীর কাদের সিদ্দিকীকে রঙ্গবীর উপাধি দিয়েছিলো।

মিলন আজাদ
১৭ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

শেখ মুজিব রক্ষীবাহিনী দিয়ে তৎকালীন জাসদের ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে গুম ও খুন করেছিলেন। কারণ একটাই জাসদ ঐ সময় একটা ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনাপুর্ন রাজনৈতিক দল ছিল। শেখ মুজিব সব রাজনৈতীক দলকে নিষিদ্ধ করে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দিনশেষে গণতন্ত্রহীনতা শেখ মুজিবের জেনেটিক্যাল বৈশিষ্ট্য ছিল। তাই শেখ মুজিবকে অতি মহান বানানোর জ্ঞানগত দারিদ্রতা থেকে আমাদের বের হয় আসা উচিত।

NP
১৫ অক্টোবর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৮:২৯ পূর্বাহ্ন

স্বৈরশাসনের আমলে অপরাধের অনেক রকমফের আছে, আছে মাত্রাভেদ। ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের অপরাধগুলো মূলত সবই চরম সহিংসতা ও নিষ্ঠুরতার। আন্দোলন দমনে নির্বিচার মানুষ হত্যা এবং গণহারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের ঘটনাগুলো অতীতের ১৫ বছরের দুঃশাসন থেকে অনেকটাই আলাদা। এ সময়ে যা ঘটেছে, তাকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অনেকেই অভিহিত করেছেন এবং সে অভিযোগেই হাসিনা সরকারের বিচার হওয়া প্রয়োজন

Faruki
১০ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৭:৪৪ অপরাহ্ন

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

সা ম্প্র তি ক প্রসঙ্গ/ এক যুগ আগে ড. ইউনূসকে যা বলেছিলাম

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status