ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সা ম্প্র তি ক

পিতা ও কন্যার পরিণতি

শহীদুল্লাহ ফরায়জী
২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবারmzamin

সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন হাতছাড়া হয় আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের কারণে। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে এবং দেশে প্রথম সামরিক শাসন জারি করে। সংবিধান ও গণতন্ত্র হত্যার পাশাপাশি জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ। তারা নিজেদের দলকে অজেয়, অভেদ্য দুর্গ বলে যেসব মিথ্যা বয়ান প্রচার করতো তা এবার চুরমার হয়ে গেছে। এটা ভয়ঙ্কর নজির

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং তার কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী বা অবিনশ্বর করার জন্য যেকোনো পন্থা গ্রহণ করতে আপসহীন ছিলেন কিন্তু সেই ক্ষমতা কীভাবে পরিসমাপ্তি হবে তা উপলব্ধি করতে পারেননি। আদিগন্ত শক্তিশালী পরাক্রান্ত ক্ষমতার অহমিকাবোধ বা নগ্ন-কদর্য ক্ষমতার বোধ থেকে বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনা কোনো দিন সতর্ক হওয়া জরুরি মনে করেননি। দু’জনেই গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ লড়াই করেছেন। কিন্তু ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য দু’জনেই গণতন্ত্রকে ছুড়ে ফেলেছেন, রাজনীতি থেকে নৈতিকতাকে উচ্ছেদ করেছেন, সংবিধানকে ক্ষমতার খেলনা করে ফেলেছেন। পিতা এবং কন্যার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ঐতিহাসিক ভুল বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করে রাষ্ট্রকে বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভুল ছিল গণতন্ত্র হত্যা করে এক দলীয়  বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা। অথচ তিনি ৫৫ বছরের জীবনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ৪৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন। এমনকি স্কুলে পড়াকালীন বৃটিশ আমলেও সাত দিন কারাভোগ করেন। বাকি ৪৬৭৫ দিন পাকিস্তান কারাগারে। গণতন্ত্র, সংসদীয় ব্যবস্থা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, আইনের সমতা ইত্যাদি নিশ্চিত করে ’৭২ সালের সংবিধান প্রণীত হওয়ার পর। 

’৭৩ সালের মার্চে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মাত্র এক বছর ৯ মাস পর অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি চতুর্থ সংশোধনী পাস হয়, যার মাধ্যমে ’৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ধ্বংস করা হয়। এই ভয়াবহ সংশোধনী বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় অল্প সময়ে বিনা তর্কে সংসদে গৃহীত হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় মন্ত্রিপরিষদ সরকারের বদলে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। বিচারপতি নিয়োগ এবং বরখাস্তের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যস্ত করা হয়। রাষ্ট্রপতির অপসারণের জন্য সংসদের তিন-চতুর্থাংশ সদস্যের ভোটে পাস হওয়ার শর্তযুক্ত করা হয়। সংবিধানে ষষ্ঠ (ক) ভাগ সংযুক্তিপূর্বক সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একটি রাজনৈতিক দল চালু করার ব্যবস্থা করা হয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্তদের একদলীয় শাসন ব্যবস্থার জাতীয় দলে সদস্য হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। একদল ছাড়া অন্য সকল দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এই সংশোধনীতে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ উল্লেখ করা হয় এবং বিনা নির্বাচনে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য বঙ্গবন্ধুকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই চতুর্থ সংশোধনীতে সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। সরকার কাঠামোর পরিবর্তন, সরকারের মেয়াদ বৃদ্ধি ইত্যাদি প্রশ্নে জনগণের মতামত নেয়ার কোনো প্রয়োজনবোধ করেনি।

চতুর্থ সংশোধনী জাতীয় রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলেছে, জাতীয় রাজনীতির গতিপথ কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তা বলার জন্য বড় পরিসর প্রয়োজন। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমেই সংবিধান কতোটা অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারি দলের আজ্ঞাবাহী তা প্রমাণিত হয়েছে। এই সংবিধান যে কাঠামো গত ভাবেই গণবিরোধী, তা ’৭৫ সালেই উন্মোচিত হয়েছে। একদলীয় বাকশাল এবং চতুর্থ সংশোধনীর ফলে ’৭২-এর সংবিধানের মৃত্যু সংঘটিত হয়।

বঙ্গবন্ধুকে বিনা নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি করা এবং সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা যে বঙ্গবন্ধুর জন্য মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা, এটা বাংলাদেশের জনগণ উপলব্ধি করলেও আওয়ামী লীগ করতে পারেনি। ক্ষমতা হস্তান্তরের সাংবিধানিক পথ রুদ্ধ হলে রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। কালের অমোঘ বিধানে বঙ্গবন্ধুর পতন আসন্ন, সমগ্র দেশবাসী বুঝতে পেরেছিলেন শুধু বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারেননি। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর শাসন আমলের ব্যর্থতা, ঐতিহাসিক দূরদৃষ্টির অভাব ও ইতিহাসের অন্তর্নিহিত শক্তি বুঝতে অক্ষম। বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঐতিহাসিক ঘটনাবলীকে পর্যালোচনা করে সত্য অনুসন্ধানে আওয়ামী লীগের কোনো আত্ম সমালোচনা নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে শুধুমাত্র ফৌজদারি হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখেছে, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করতে পারেনি। তাই বঙ্গবন্ধু হত্যাকে কেবল ‘ষড়যন্ত্র’ ও ‘চক্রান্ত’ হিসেবেই মূল্যায়ন করেছে, গভীর সত্য গভীরেই থেকে গেছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং শাসক হিসেবে তার ব্যর্থতাকে আলাদা করতে পারেনি। ফলে দলগতভাবে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী বুদ্ধিজীবীগণ অন্ধ বিশ্বাসের শিকারে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে রক্ষীবাহিনী গঠন, সিরাজ সিকদারসহ অগণিত হত্যা, দুর্ভিক্ষ, জরুরি অবস্থা, একদলীয় বাকশালসহ সকল অপকর্মের ওপর অন্ধবিশ্বাস স্থাপন করে। বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বে স্বাধীনতা, ’৭২ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত শাসনের সোনালী অধ্যায় নিয়ে রসঘন মুখরোচক ইতিহাস লিখে অজস্র বই ছাপানো হয়েছে, পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু সত্য লুকায়িত থাকে না। নতুন প্রজন্মের দূরদর্শীদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সেইসব মনগড়া ইতিহাসের অসারতাকে সহজেই আবিষ্কার করে সত্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।

এককালে যিনি ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা 
তিনি ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পর থেকেই জনবিচ্ছিন্ন হতে শুরু করলেন, ফলে আওয়ামী লীগের একাংশের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন এবং ৩২ নম্বরে লাশ পড়ে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের সরকার গঠিত হয়। সংসদ চালু থাকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরও একজন সংসদ সদস্য প্রতিস্বরূপ পদত্যাগ করেনি। এরপরও আওয়ামী লীগ অন্যদের দায়ী করে রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করতে চায়। আওয়ামী লীগের চরম দুর্ভাগ্য এই যে,  তারা কোনো দিন ঐতিহাসিক সত্যকে উদ্‌ঘাটন করতে চায়নি। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা আন্দোলনের সমসাময়িক ইতিহাস লিখতে গিয়ে একক ব্যক্তির অবদানে ইতিহাসকে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। বাংলাদেশে ’৭৫-এর পর একঝাঁক লেখকের আবির্ভাব ঘটলো, যারা মানসিক দিক থেকে অনুদার এবং বিশ্বাসের দিক থেকে অন্ধ। আওয়ামী বুদ্ধিজীবীগণ অতীতের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে সবার অবদান আত্মসাৎ করে শুধুমাত্র এক ব্যক্তি বা এক পরিবারের স্বীকৃতি প্রদান করে, যে অজ্ঞানতার পরিচয় দিয়েছেন তার সমুদয় অংশই এখন সমর্থনের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এর ফলে তাদের বিবৃত ইতিহাস ঐতিহাসিক দূরদৃষ্টির অভাবে সম্পূর্ণ অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছে। গত ১৫ বছরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে হাজার হাজার বই লিখেছেন, লাখ-লাখ পৃষ্ঠা সাজিয়েছেন, পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন কিন্তু বিষয়গুরুত্ব বলতে কিছুই নেই। আন্দোলন-সংগ্রাম ও রাষ্ট্রের বিবরণ দিতে গিয়ে যান্ত্রিকভাবে স্তাবকতার আশ্রয় নিয়েছেন, কার্যকারণ বিশ্লেষণ করার প্রয়োজনটুকু বোধ করেননি। এ কারণে  তাদের স্বরচিত ইতিহাস সম্রাটদের নামের তালিকা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ঐতিহাসিক সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে মহান করতে গিয়ে কেবল ছোট করা হয়েছে, মন থেকে মুছে দেয়ার আয়োজন করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েকদিন আগেও বলেছিলেন-
‘আমাকে কেন পদত্যাগ করতে হবে, আমার অপরাধ কী’? নির্বাচনে প্রতারণা করা, প্রজাতন্ত্রের প্রশাসনকে দলীয়করণ করা, সংবিধানকে ইচ্ছাধীন করা, রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদকে ব্যক্তিগত করা সর্বোপরি ক্ষমতা ধরে রাখতে গিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যাকে তিনি অপরাধ হিসেবে বিবেচনাই করতে পারেননি। বিশ্বের এমন কোনো সম্রাট নেই, এমন কোনো রাজা নেই যার শাসনামলে কোনো ত্রুটি বা অপরাধ নেই। শেখ হাসিনা বিশ্বাস করতেন, তিনি এবং তার বাবা দোষ-ত্রুটি ও অন্যায়ের ঊর্ধ্বে। তিনি আরও বিশ্বাস করতেন, তিনি মুখে যা বলবেন তাই সত্য। এর বাইরে সত্য থাকতে পারে না। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে শেখ হাসিনা নিজের জীবন দিতেও কুণ্ঠিত ছিলেন না কিন্তু সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে অজস্র প্রাণ নিতেও তিনি কুণ্ঠিত হননি। কোনো এক সুদূর অতীতে বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এই জন্য প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মেনে নিতে পারেননি শেখ হাসিনা। বরং রক্তপাতের মাধ্যমে ১/১১ সরকার ক্ষমতায় এনেছিলেন। অথচ তিনি ৪০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি, তার অধীনে বিরোধী দলকে নির্বাচনে আসতে আহ্বান জানান। এতে শেখ হাসিনা বিন্দুমাত্র বিব্রত বোধ করেন না। শেখ হাসিনা তার বিশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি রক্ষার কোনো নৈতিক অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেননি। তিনি মনে-প্রাণে জানেন, জনগণ তাকে ভোটে নির্বাচিত করবে না। এজন্য ভোট দানের পদ্ধতিটিই বিলুপ্ত করে দিয়েছেন, অথচ সারা বছর বলে বেড়াতেন- ‘জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, আওয়াম লীগ ক্ষমতায় থাকলে গণতন্ত্র থাকে’। তিনি ক্ষমতার স্বার্থে সত্যকে আড়াল করার জন্য অভিনব-অভিনব পন্থা উদ্ভাবন করতেন।
বিএনপি যখন আওয়ামী লীগের ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করে তখন তিনি আবিষ্কার করলেন জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত এবং রাজাকার। রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং সংস্কৃতির পরিসরে আওয়ামী লীগ অব্যাহতভাবে ঘৃণা ও বিষ ছড়াচ্ছে।
এতে যে, সমগ্র মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করা হয়, সমাজ নিদারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা তার বিবেচনায় স্থান পায়নি। ক্ষমতার বর্তমান দ্বন্দ্বে অতীতের বীরত্বকে অস্বীকার করার সংস্কৃতি এখন বঙ্গবন্ধুর বেলায় প্রযোজ্য হচ্ছে। কন্যার অপশাসনের দায়ে পিতার ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

’৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত আওয়ামী শাসনের যাঁতাকলে পৃষ্ট হচ্ছে স্বাধীনতার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর অবদান। বিরোধী দলে থাকলে গণতন্ত্রী আর ক্ষমতায় থাকলে স্বৈরাচার- এই দ্বিমুখী নীতিতে প্রমাণ হয়, আওয়ামী লীগের ডিএনএ (উঘঅ)তে নৈতিকতার কোনো উপাদান অবশিষ্ট নেই। শুধু অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে ছাত্রদের কোটা আন্দোলনে নির্বিচারে ছাত্র-জনতা হত্যা করার উন্মত্ততায় প্রমাণ হয়, রাষ্ট্রকে কসাইখানা হিসেবে বিবেচনা করছে আওয়ামী লীগ। স্বজন হারানোর ব্যথা জুলাই হত্যাকাণ্ডে রূপান্তর করে জনগণের আয়নায় প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগের বিবেকবোধ ধ্বংস হয়ে গেছে। রাষ্ট্রের কয়েকশ’ নাগরিক হত্যার পর শোক প্রকাশে বিভিন্ন স্থাপনা প্রাধান্য পায়, এই ঘটনায় ক্ষমতা উদ্‌যাপনের ভয়াবহ দৃশ্যকল্প উন্মোচিত হয়ে পড়ে। এরপর ছাত্র-জনতা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে ফেলে, মৃত্যুকে তারা গৌরবের অংশীদার করে পরাক্রমশালী শেখ হাসিনা সরকারের পতন অনিবার্য করে তোলে। কারণে-অকারণে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করে পিতাকে ’৭৫ সালের মতো পুনরায় হত্যা করেছেন শেখ হাসিনা। অবশ্য এত নির্মম সত্য বিবেচনা করার মতো বিবেকের কোনো বিচারালয় নেই আওয়ামী লীগের।

সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন হাতছাড়া হয় আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের কারণে। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে এবং দেশে প্রথম সামরিক শাসন জারি করে। সংবিধান ও গণতন্ত্র হত্যার পাশাপাশি জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ। তারা নিজেদের দলকে অজেয়, অভেদ্য দুর্গ বলে যেসব মিথ্যা বয়ান প্রচার করতো তা এবার চুরমার হয়ে গেছে। এটা ভয়ঙ্কর নজির। ক্ষমতার কারণে পিতা খুন হয়েছেন, কন্যা দেশ ছেড়েছেন। এতে শেখ হাসিনা অনুতপ্ত
এটা প্রতীয়মান হয় না। কালের অমোঘ বিধানে পিতা ও কন্যার ভাগ্য সুনির্দিষ্ট ও সুনির্ধারিত হয়েছে। এবার আওয়ামী লীগ চরম বিপর্যয়ে পড়ে হয়তো বুঝতে পারবে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয় এবং দীর্ঘস্থায়ী করাও জরুরি নয়। শেখ হাসিনার হাতেই আওয়ামী লীগের সর্বনাশ হয়ে গেছে, নৈতিকতায় ধস নেমেছে। অদূরদর্শিতা ও দম্ভের কারণে শেখ হাসিনা নিজেই পিতা এবং দলকে বলি দিয়েছেন। রাষ্ট্রকে ধ্বংস ও গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিও উঠছে। এতেও আওয়ামী লীগের কোনো আত্মজিজ্ঞাসা নেই, আত্ম-সমালোচনাও নেই। ইতিহাসের বৈরী দ্বন্দ্ব কীভাবে মীমাংসা হবে তা আওয়ামী লীগ জানে না। পিতার দেশ থেকে কন্যার পলায়ন কারও আত্মমর্যদাকে সুরক্ষা দেয়নি বরং দলের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎকে সমাহিত করা হয়েছে।
পিতা এবং কন্যা রাষ্ট্র ক্ষমতা বুঝলেও, কী অপূরণীয় মূল্যে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হবে সে পরিণতি বুঝতে অক্ষম।
লেখক: গীতিকবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
[email protected]

পাঠকের মতামত

চমৎকার মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ! পিতা ও কন্যার একই পরিনতি, যা ইতিহাসের অমোঘ বিধানের অবধারিত ছিল। আওয়ামী লীগ '৭৫ থেকেও কোন শিক্ষা গ্রহণ করেনি, '২৪ থেকেও করবে বলে মনে হয় না। গনহত্যা এবং রাস্ট্রে সম্পদ করে তাদের মনে কোন অনুসূচনাবোধ নেই। যা করেছে তা সব ঠিকই আছে এরূপই তারা মনে করে। তারা তাদের নেতৃ শিঘ্রই আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার অলিক স্বপ্ন দেখে।

rafiqul islam
৪ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ৪:১৬ অপরাহ্ন

I couldn’t agree more!

Enamul Kabir Sarker
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৮:৫৫ পূর্বাহ্ন

অসাধারণ ইতিহাস জানলাম & লেখনি।৭২-৭৫ আমল জানার ইচ্ছা ছিল,আজ ক্লিয়ার ধন্যবাদ।এই দলের কোন গণতন্ত্র ছিলনা অতীতেও এজন্য বাপ-মেয়ের একই পরিণতি।এখনো কোন অনুশোচনা নেই জয় & হাসিনা বিদেশে বসে এসবের জন্য আমেরিকা,পাকিস্তান আইএসআই,সেন্টমার্টিন ইস্যু দাঁড় করাচ্ছে।আমি এই দলের কোন ভবিষ্যৎ দেখিনা।জনধিক্কৃত,জনবিচ্ছিন্ন দল।আল্লাহ এদের শুভবুদ্ধির উদয় দিক।

খালিদ হাসান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১২:০৬ অপরাহ্ন

ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের এই পরিনতি। শেখ হাসিনা শেখ মুজিবর রহমানের কু- সন্তান।শেখ হাসিনার জন্যই স্বাধীনতার অগ্রনায়ক তার নিজদেশেই অসম্মানিত হলেন।

মো: সেলিম
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৮:১৩ অপরাহ্ন

ইতিহাস থেকে খুব কম দলই শিক্ষা নেয়।শেখ মত আওয়ামী লীগের প্রতিটা কর্মী একুই মোনোভাব পোষন করে।বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য আওয়ামী লীগের মত দলের প্রয়োজন আছে।শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগেকে ধংশ করে মূলত বাংলাদেশের গনন্ত্রের বড় ধরনের ক্ষতিকরে গেলেন।

মো: সেলিম
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৮:০৫ অপরাহ্ন

What a beautiful write up.

nurulchoudhury
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭:১৬ অপরাহ্ন

Excellent article. Shohidullah Farayazi is honest, patriot, truthful person. I know him very well.

zahid
২৮ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ২:২২ অপরাহ্ন

জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না...

এম এ রাজ্জাক সরকার
২৫ আগস্ট ২০২৪, রবিবার, ২:১৩ অপরাহ্ন

অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন ভাইয়া, অনেক শুভকামনা আপনার জন্য

Zahidul islam
২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৪:৪০ অপরাহ্ন

ক্ষমতায় আসলে অতীত ভুলে যাওয়ার রোগ ধরে যায়। যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন মনে হয় জনগন তাদের চিরদিনের জন্য ক্ষমতায় বসিয়েছেন।

Md. Masud Rana
২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২:০৬ অপরাহ্ন

অসাধারণ লেখার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আওয়ামী লীগ সব সময় একটি স্বৈরাচারী দল, কিন্তু মুখে গনতন্ত্রের জন্য মিথ্যা কথা বলে।

বাংলার সূর্য সৈনিক
২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:৫৭ অপরাহ্ন

ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে পিতা খুন হয়েছে, কন্যা পালিয়ে গেছে এটাই বাস্তবতা!

ইয়াছিন সোহাগ
২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:৫৬ অপরাহ্ন

মুজিবের নামের আগে বংগবন্ধু শব্দ টা বাদ দেয়া উচিত। আর জাতির পিতা বলার তো প্রশ্নই উঠেনা।

Khalid hasan
২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:৪৩ অপরাহ্ন

নির্ভেজাল বিশ্লেষন।

মোঃ আতাউর রহমান।
২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:০৬ অপরাহ্ন

পিতা-কন্যার মধ্যে পার্থক্য হলো- পিতা খুন (তথাকথিত শহিদ)! আর কন্যার পেছনের দরোজা দিয়ে পলায়ন ও চিরবন্ধু ভারতের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে গণপিটুনিতে প্রাণ হারানো থেকে রক্ষা!

জেনিফার সুলতানা
২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

অতি চমৎকার বিশ্লেষণ।

Saiful Pasha
২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন

খুব সুন্দর ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন স্যার। কিন্তু আওয়ামী লীগের অন্ধ অনুসারীরা ইতিহাস মেনে নিতে অক্ষম। তারা ইতিহাস বিকৃত করে দেশের মানুষকে ধোকা দিয়েছে , গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তারা তাদের ভুল খুঁজে পায়না।

Kamal
২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:১০ পূর্বাহ্ন

সৈরাচারীরা এইভাবেই নিঃশেষ হয়।

Maria Sultana
২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

সহমত পোষন করি।

সরকার হুমায়ুন
২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৯:১৯ পূর্বাহ্ন

অসাধারণ বিশ্লেষণ "ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয় এবং দীর্ঘস্থায়ী করাও জরুরি নয়। শেখ হাসিনার হাতেই আওয়ামী লীগের সর্বনাশ হয়ে গেছে, নৈতিকতায় ধস নেমেছে"।

ASM LUKMAN
২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৫:৪০ পূর্বাহ্ন

৭০ এর পর এত বিশাল ধাক্কা এল ২০২৪ আগ ৫, সুইঁ পরিমাণ ফুটো হলেও বিশাল পরিমাণ বিপদ।

Anwarul Azam
২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৩:০৯ পূর্বাহ্ন

নির্মোহের বিশ্লেষণ। আমাদেরকে আত্মোপলব্দি করা শিখতে হবে। ইতিহাস নির্মাণ করা যায় না, ইতিহাস গড়ে ওঠে; এই সত্য মানতেই হবে।

এইচ.এম. সিরাজ
২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১:২৬ পূর্বাহ্ন

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

সা ম্প্র তি ক প্রসঙ্গ/ এক যুগ আগে ড. ইউনূসকে যা বলেছিলাম

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status