ঢাকা, ৭ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

ডন-এর মন্তব্য প্রতিবেদন

নতুনের পথে বাংলাদেশ

মানবজমিন ডেস্ক

(৩ সপ্তাহ আগে) ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৭:০০ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৩:২৮ অপরাহ্ন

mzamin

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় দেড় মাস আগে পদত্যাগ করে পালিয়ে ভারতে চলে গেছেন। ছাত্রদের নেতৃত্বে প্রতিবাদ বিক্ষোভে তার সরকার সহিংস দমনপীড়নের ফলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে সেখান থেকে আস্তে আস্তে স্থিতিশীলতার পথে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ওই সহিংসতায় কমপক্ষে ১০০০ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। যে শেখ হাসিনা নিজেকে ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহ মানবী হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি তুলে ধরেছিলেন তিনি কেন এত দ্রুততার সঙ্গে ক্ষমতা হারালেন- তা অনুধাবন করতে আগ্রহী বিশ্বের বুদ্ধিজীবীরা। বাংলাদেশের মতোই দ্রুত তার অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সব বিরোধীকে নির্মমভাবে চূর্ণ করে একজন স্বৈরশাসকের মতো ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশকে শাসন করেছেন হাসিনা। তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন্দ্র করে একটি রীতি (কাল্ট) গড়ে তুলেছিলেন। দেশে একদলীয় শাসন চাপিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য এবং তার অধীনে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে ক্ষতি হয়েছে তার প্রেক্ষিতে দেশে যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে তা অনেকাংশে প্রশমিত হয়েছে। পাকিস্তানের অনলাইন ডন-এ এক মন্তব্য প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন দেশটির সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও সনোবর ইনস্টিটিউট ইসলামাবাদের চেয়ারম্যান ইজাজ আহমেদ চৌধুরী। তিনি আরও লিখেছেন, এখন বাংলাদেশে সুনির্দিষ্টভাবে জনগণের সময়। এই পরিবর্তনকে আখ্যায়িত করা হচ্ছে ‘মুনসুন রেভ্যুলুশন’ নামে। তবে এই পরিবর্তন স্থায়ী কিনা তা যেমন পরিষ্কার নয়, তেমনি দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা শিগগিরই ফিরবে কিনা তা পরিষ্কার নয়। শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ তার পায়ের নিচের মাটি উল্লেখযোগ্যভাবে হারিয়েছে। তবে তারা আবার ফিরে আসার চেষ্টা করবে এই যুক্তিতে যে, দেশটিতে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিনিধিত্ব করে তারা। তার ১৫ বছরের শাসনামলে জাতীয় জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে তার দল নিজেদের ছড়িয়ে দিয়েছে। তার অধীনে দেশটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখেছে, যদিও তা অংশগ্রহণমূলক ছিল না। বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে অসমতা ছিল তীব্র। 

পররাষ্ট্রনীতিতে শেখ হাসিনা ভারতের আধিপত্যকে পুঁজি করাকে বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষের কাছে এই পরিস্থিতি ছিল নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। এখন বাংলাদেশে ভারতের স্থান সংকুচিত হয়েছে। তবে এটা প্রমাণিত যে, তারা এখানে তাদের প্রভাব সুরক্ষিত রাখতে সব চেষ্টা করবে। ভারতের কাছে ৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ স্পর্শকাতর সীমান্ত এবং তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সক্রিয় বিদ্রোহীদের উপস্থিতিতে নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আগ্রহের বিষয়। ভারতের নেতাদের জন্য তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ হলো তাদের দেশে শেখ হাসিনার উপস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করবে। তিনি যতদিন দিল্লি থাকবেন ততদিন দিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের উন্নতি হবে বলে মনে হয় না। দুই দেশ ২০১৩ সালে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অনেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে যে বিপুল সংখ্যক ফৌজদারি মামলা হয়েছে, তার মুখোমুখি দাঁড় করানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

ইজাজ আহমেদ চৌধুরী আরও লিখেছেন, যে ঘটনা বাংলাদেশে পরিবর্তন এনেছে তা বর্ণনা করতে গিয়ে হেরফের করে বর্ণনা করার চেষ্টা করছে ভারত। ভারতীয় গবেষক ও মিডিয়া বর্ণনা করছে যে, বাংলাদেশে যে পরিবর্তন এসেছে তা দেশটিকে মুসলিম উগ্রবাদের দিকে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশে হিন্দুদেরকে টার্গেট করা হয়েছে। তবে এই অভিযোগের প্রায় পুরোটাই যে গুজব তা বিবিসি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে। হাস্যকরভাবে, ভারতেই উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ধর্মীয় নিপীড়ন। (বাংলাদেশের) এই পরিবর্তনে বিদেশিদের সম্ভাব্য জড়িত থাকার বিষয় প্রতিষ্ঠিত করতে মরিয়া ভারত। কিন্তু আসলে এই পরিবর্তন পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ। শেখ হাসিনার নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আত্মত্যাগ করা ছাত্ররা বাংলাদেশে এই পরিবর্তন এনেছেন। তারা এটাকে অসম্মান দেখানোর চেষ্টা করছে। 
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কখন ফিরবে তা পরিষ্কার নয়: এরই মধ্যে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পরিস্থিতি এবং অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। তারা সমস্যার সমাধান খুঁজছেন। প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরুর আগে থেকেই অর্থনীতি দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। কয়েক সপ্তাহের প্রতিবাদ বিক্ষোভের ফলে দেশের গার্মেন্ট শিল্প বিশেষত আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। সরকার এরই মধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এর নাম দেয়া হয়েছে-‘রি-স্ট্যাটেজিজিং দ্য ইকোনমি অ্যান্ড মবিলাইজিং রিসোর্সেস ফর ইকুইট্যাবল অ্যান্ড সাসটেইন্যাবল ডেভেলপমেন্ট’। 
রাজনৈতিকভাবে ক্ষত সারিয়ে তোলা দরকার। নির্বাচনের আগে বিচারবিভাগ, পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনে মৌলিক সংস্কার করতে চান ছাত্রনেতারা। এতে মনে হচ্ছে কিছু সময়ের জন্য নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে। আঞ্চলিকতার ক্ষেত্রে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সার্ক। তিনি চান বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্য হোক। তারপর তা সার্ক ও আসিয়ানের মধ্যে সম্পর্কের সেতু হিসেবে কাজ করবে। 

এই পরিবর্তনের বিষয়ে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত? বাংলাদেশের জনগণের বিষয় কেয়ার করেন পাকিস্তানিরা। বাংলাদেশিরা যেমনটা চান তাদের রাজনৈতিক গন্তব্য নির্ধারণে নিজেদের অধিকারকে পূর্ণাঙ্গভাবে সম্মান করা উচিত পাকিস্তানিদের। পাকিস্তান এই ফ্যাক্ট থেকে সন্তুষ্ট হতে পারে যে, শেখ হাসিনা আর মিথ্যা বলার মতো জায়গায় নেই। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিষাক্ত প্রচারণাও বন্ধ হতে পারে। ক্ষমতা থেকে শেখ হাসিনা সরে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানিদের সামনে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে মেরামত করার একটি সুযোগ এসেছে। পাকিস্তানকে অবশ্যই বাস্তবতাভিত্তিক প্রত্যাশা করতে হবে যখন নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ভেতরের বিভিন্ন বিষয়কে ঠিক করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে যে বন্যা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ভালো কাজ করেছে পাকিস্তান। দুই দেশই জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগকে উৎসাহিত করতে পারে। তরুণদের মধ্যে ‘এক্সচেঞ্জ’ করতে পারে। শেখ হাসিনার সময়ে এসব সুযোগ ছিল ব্লক করা। দুই দেশকেই পরিমিত পদক্ষেপে বাস্তবভিত্তিক প্রত্যাশা নিয়ে একে অন্যের দিকে উপযুক্ত উপায়ে এগিয়ে যেতে হবে।

পাঠকের মতামত

'ডন' পত্রিকা,,, নিজের দেশতো কোমায় ভর্তি হয়ে আছে,,, এরা আবার কথা বলে,,

ফরহাদ আহমাদ
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:৩৭ অপরাহ্ন

ডন পত্রিকাকে বলছি আগে নিজেদের দেশ ঠিক করুন তারপর অন্য দেশের চিন্তা করবেন।

মিলন আজাদ
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৯:১১ অপরাহ্ন

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

বিবিসির প্রতিবেদন/ হাসিনাকে নিয়ে দ্বিধায় দিল্লি!

ইউক্রেন, গাজা ও বাংলাদেশ পরিস্থিতি বিশ্লেষণের আহ্বান/ সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন রাজনাথ

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status