ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

চুলের যত্নে কিছু ভুল, সমস্যা ও সমাধান

অধ্যাপক ডা. এসএম বখতিয়ার কামাল
২ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার

যে ভুলগুলো হতে পারে
১. কন্ডিশনার ব্যবহার না করা: আমরা অনেকেই ভুল করি। আমাদের চুলের সু-স্বাস্থ্যের জন্য তেল প্রয়োজন। শ্যাম্পু দেয়ার পর সেই তেল বেরিয়ে যায়। কন্ডিশনার মাখলে চুলে সেই তেল ফিরে আসে। প্রতিবার শ্যাম্পু দিয়ে কন্ডিশনার মাখতে ভুলবেন না।
২. ভেজা চুল ঘষে ঘষে মোছা: চুল ভেজা অবস্থায় ঘষে ঘষে পরিষ্কার করলে চুলের ক্ষতি হয়। এককথায়, চুলের সঙ্গে কোনো ধরনের জোর-জবরদস্তি করা যাবে না; বরং তোয়ালে দিয়ে আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে পানি বের করলে চুল সুস্থ থাকে।
৩. ভেজা চুল আঁচড়ানো: ভেজা চুল আঁচড়ালে ক্ষতি হয়। পারলে চুল শুকিয়ে যাওয়ার পর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ানো যেতে পারে।
৪. ব্লো ড্রায়ার বা হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকানো: ব্লো ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকানো উচিত নয়। যদি নিতান্তই তা করতে হয়, তাহলে সবচেয়ে কম উষ্ণতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে চুল শুকিয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবারের বেশি ব্লো ড্রায়ার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
৫. চুল শক্ত করে বাঁধা: খুব শক্ত করে চুল বাঁধলে, বেণী করলে টানের কারণেও চুল পড়তে পারে।
৬. ভেজা চুলে ঘুমানো: ভেজা অবস্থায় চুল দুর্বল থাকে। ভেজা ত্বক ও ভেজা চুলের গোড়ায় ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। ভেজা চুলে ঘুমালে মাথার ত্বকে প্রদাহ হতে পারে। খুশকির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
৭. পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া: খাদ্যাভ্যাস চুলের বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে। শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, ডিম, দুধ, মাছ ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস করুন। আমিষ ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার চুলকে মজবুত করে এবং দ্রুত বাড়তে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পানি পান করাও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সমস্যা ও সমাধান
খুশকি: খুশকি সম্ভবত চুলের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা যা অনেকের মুখোমুখি হয়। এটি মূলত মাথার ত্বকে ফ্ল্যাকি হতে পারে। যদিও কোনো একটি ফ্যাক্টরকে একমাত্র কারণ বলা হয় না, তবে বিভিন্ন অবদানকারী কারণ থাকতে পারে। খুশকি শুধুমাত্র চুলকানি এবং শুষ্ক মাথার ত্বকের কারণই নয়, এটি আপনাকে বড় বিব্রতকর অবস্থারও কারণ হতে পারে। 
* সমাধান: আপনার খুশকির সমস্যার জন্য একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করা ভালো। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ আপনার চুলের ধরনের ওপর ভিত্তি করে কিছু অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার লিখে দেবেন। অনেকেই মাথার ত্বকে লেবু লাগানোর মতো ঘরোয়া প্রতিকার করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এটি করবেন না, কারণ লেবু চুলকে হালকা করতে পারে। তবে তেল দেয়া চুলকানি এবং শুষ্ক মাথার ত্বকে সাহায্য করতে পারে। আপনি একটি উপযুক্ত চুলের তেল এবং কখন এবং কীভাবে এটি প্রয়োগ করবেন সে সম্পর্কে  চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
চুলপড়া: চুলপড়া একটি ক্রমবর্ধমান সাধারণ সমস্যা। প্রতিদিন কয়েকটি চুল হারানো সাধারণ কারণ এটি চুলের বৃদ্ধি চক্রের একটি সাধারণ অংশ। যাই হোক, দিনে ১০০টির বেশি চুলপড়াকে চুলপড়া বলা যেতে পারে। নিয়মিত চুলপড়া একটি চাপের পরিস্থিতি হতে পারে। চুলপড়া পুরুষদের মধ্যেও একটি মোটামুটি সাধারণ সমস্যা যারা চুলপড়ার কারণে টাক পড়ে যেতে পারে। চুলপড়ার অনেক সাধারণ কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মানসিক চাপ, পুষ্টির ঘাটতি, বিষণ্নতা, কিছু ওষুধ, টাইট পনিটেল বা তাঁত পরা, ক্ষতিকারক চুলের চিকিৎসা, গর্ভাবস্থা ইত্যাদি।
* সমাধান: চুলপড়া অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তার দ্বারা কার্যকরভাবে চিকিৎসা করা যেতে পারে। সাধারণ চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ওষুধ, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট, সাপ্লিমেন্ট, প্লেটলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা দিয়ে ইনজেকশন, নিম্নস্তরের আলো ডিভাইস ইত্যাদি। এদিকে, আপনার চুলের যত্ন নেয়া এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং ক্ষতিকারক চুলের চিকিৎসা এড়ানো চুল কমানোর জন্য একটি ভালো পদক্ষেপ। 
পতন নিস্তেজ এবং ক্ষতিগ্রস্ত চুল:  শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন দেখে আপনার চুল পছন্দ না হতে পারে, বিশেষ করে যদি সেগুলো নিস্তেজ, শুষ্ক এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুষ্ক চুল হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা এবং এর সঠিক যত্ন না নেয়া। চুলের অত্যধিক স্টাইলিং এবং রাসায়নিকের অত্যধিক ব্যবহারও কারণ হতে পারে।
* সমাধান: প্রতিদিন শ্যাম্পু করবেন না। রাতের বেলা চুলের যত্নের রুটিন রাখুন। ঘুমানোর আগে আপনার চুলের জট খুলতে একটি নরম এবং চওড়া দাঁতযুক্ত হেয়ার ব্রাশ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এ ছাড়াও, সপ্তাহে অন্তত দু’বার জৈব চুলের তেল ব্যবহার করুন। 
তৈলাক্ত চুল: আমাদের মাথার ত্বক স্বাভাবিকভাবেই সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে সেবাম নামক একটি প্রাকৃতিক তেল তৈরি করে। কখনো কখনো এই গ্রন্থি অতিরিক্ত কাজ করে এবং অতিরিক্ত সিবাম তৈরি করে যা চুলকে নিস্তেজ এবং চর্বিযুক্ত করে তোলে। এই অবস্থাকে সাধারণত সেবোরিয়া বলা হয়।
* সমাধান: চর্বিযুক্ত চুলের সফলভাবে চিকিৎসা করার জন্য, আপনি চর্বিযুক্ত চুলের চিকিৎসার জন্য তৈরি শ্যাম্পু দিয়ে আপনার চুল ধুতে চাইতে পারেন। গ্রিনটি-যুক্ত পণ্যগুলো ধোঁয়ার পরেও তৈলাক্ত চুল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর বলে বিবেচিত হয়। 
ধূসর চুল: ধূসর চুল বয়স বাড়ার একটি সাধারণ অংশ।  আজকাল এমনকি অল্পবয়সী লোকেরাও এই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে ডিএনএ ক্ষতি এবং ফলিকলে হাইড্রোজেন পারক্সাইড জমা হওয়া চুল ধূসর হওয়ার কারণ হতে পারে।
* সমাধান: যদিও ধূসর হওয়া বিপরীত করা যায় না, তবে ধূসর চুল আপনাকে বিরক্ত করলে আপনি আপনার চুল রং করতে পারেন। প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে এবং ক্ষতিকারক রাসায়নিক মুক্ত চুলের রং ব্যবহার করা সবসময়ই ভালো। স্বাস্থ্যকরভাবে খাওয়া, ব্যায়াম করা এবং আপনার চুল ধোয়া চুলের আরও অস্বাভাবিক ধূসর হওয়া বন্ধ করতে সাহায্য করতে পারে।
ফ্রিজি ভঙ্গুর চুল: কোঁকড়ানো, ভঙ্গুর চুল একটি সাধারণ চুলের সমস্যা যা চুলের শুষ্ক মাথার ত্বক হারানো, নিস্তেজ, জমে থাকা চুল বা বিভক্ত প্রান্তের মতো সমস্ত চুলের সমস্যাকে একত্রিত করে। এটি সাধারণত চুলে অত্যধিক রাসায়নিক এক্সপোজারের ফলে হয়। আপনার চুলে তাপ ব্যবহার করা এবং ব্লিচিং পণ্যের অত্যধিক ব্যবহার চুল পাতলা এবং ভঙ্গুর হতে পারে। 
* সমাধান: পুষ্টিকর পরিপূরক এবং সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করে আপনার চুলকে সমর্থন করা একটি ভালো প্রথম পদক্ষেপ। এ ছাড়াও, চুলে রাসায়নিক চিকিৎসা এড়িয়ে চলুন। গরম করার সরঞ্জাম ব্যবহার করার সময় তাপ রক্ষাকারী ব্যবহার করুন। সমস্যা চলতে থাকলে চুল বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। 

লেখক: চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ (সাবেক) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার, ফার্মগেট, ঢাকা। প্রয়োজনে: ০১৭১১-৪৪০৫৫৮

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status