ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

ভারত

বাংলাদেশিদের অনুপস্থিতিতে কলকাতার হাসপাতালগুলোর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা

(২ মাস আগে) ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ১:৪১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০০ পূর্বাহ্ন

mzamin

দক্ষিণ কলকাতার মুকুন্দপুরের আর এন টেগোর হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম গত বছরের এই সময়ের ছবিটি। চারিদিকে শুধুই বাংলাদেশির ভিড়। হাসপাতালের বাইরের দোকানগুলোসহ গেস্ট হাউসগুলো থাকতো বাংলাদেশিতে ঠাসা। কিন্তু মঙ্গলবার হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে যে ছবিটি উঠে এসেছে তাতে চারিদিক শুনশান। হাসপাতালের লবিও এখন গিজগিজ করছে না বাংলাদেশি রোগীদের ভিড়ে। মধ্য কলকাতা থেকে ই এম বাইপাসের ধারের হাসপাতালগুলোর সামনে এখন সেই রমরমা ভিড়ের কোনো চিহ্নমাত্র নেই।

কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের বেশির ভাগ অনেকাংশে নির্ভরশীল বাংলাদেশি রোগীদের উপর। ফলে বাংলাদেশি রোগীদের অনুপস্থিতিতে কলকাতার হাসপাতালগুলোর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস্ অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি রূপক বড়ুয়া জানান, কলকাতার হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশের রোগীদের থেকে মাসে প্রায় ২০-২৫ কোটি রুপির মতো আয় হতো। জুলাইয়ে যা ২০ শতাংশের মতো কমেছে। আগস্টের পর থেকে তা কমতে কমতে ১০ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল ও তারপর অশান্তির জেরে এবং ভারতীয় ভিসার নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসার জন্য ভারতে আসা বাংলাদেশির সংখ্যা কমতে কমতে এখন প্রায় শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছে। চূড়ান্ত গুরুতর ও আপৎকালীন অসুস্থতা ছাড়া মেডিকেল ভিসাও ভারত সরকার ইস্যু করছে না। ফলে আগস্টের পরবর্তী দু-তিন মাস পুরনো মেডিকেল ভিসায় কিছু রোগী এলেও নতুন করে মেডিকেল ভিসার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ির কারণে এখন তাও বন্ধ। অনেকে নিরাপত্তাজনিত কারণেও আসছেন না।

ভাষাগত সাযুজ্য, সুবিধাজনক থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা খরচের স্বল্পতার জন্য লাখ লাখ বাংলাদেশির স্বাভাবিক পছন্দ ছিল কলকাতা। হার্টের অসুখ থেকে শুরু করে নিউরোসার্জারি, ক্যান্সার, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, ইউরোলজিক্যাল সমস্যা, অর্থোপেডিক রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি কিংবা বন্ধ্যত্ব, সবকিছুর চিকিৎসাতেই বাংলাদেশিরা ঢাকার চেয়ে কলকাতাকে ভরসা করতেন বেশি। ভারতে বিদেশ থেকে চিকিৎসা করাতে রোগীদের মধ্যে ৬৯ শতাংশই এসেছেন বাংলাদেশ থেকে। এবং এর বেশির ভাগই বেছে নিয়েছিলেন কলকাতাকে।

কলকাতায় ১০-১২টি বেসরকারি হাসপাতালেই থাকতো বাংলাদেশি রোগীদের যাতায়াত। কলকাতায় মণিপাল গোষ্ঠীর অধীন চারটি হাসপাতালে গত সাত দিন ধরে বর্হিবিভাগে নতুন বাংলাদেশি রোগী নেই বললেই চলে। সূত্রের খবর, আগে মাসে ২৩০০-২৪০০ রোগী বাংলাদেশ থেকে আসতেন। কিন্তু এখন বাংলাদেশের কোনও রোগী নেই ইনডোর বিভাগেও। কর্তৃপক্ষ মনে করেন, এই অবস্থা আরও কিছুদিন চলবে। বাংলাদেশের রোগীরা মূলত নগদে চিকিৎসার খরচ মেটাতেন। ফলে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে হাসপাতালকে।

রুবি জেনারেলের সিজিএম-অপারেশনস শুভাশিস দত্ত বলেন, আগে পড়শি দেশ থেকে দিনে ৩০-৩৫ জন রোগী আসতেন। গত ১ তারিখ থেকে নতুন রোগী ভর্তিও হননি। তার কথায়, আর্থিক ক্ষতি তো হচ্ছেই। আর এন টেগোর হাসপাতাল সূত্রের খবর, বহির্বিভাগে দিনে ১৫০ জনের বেশি বাংলাদেশি রোগী আসতেন। সেখানে শেষ কয়েক দিনে তা কমে শূন্যে দাঁড়িয়েছে। রোগী ভর্তিও নেই।

বড় বড় বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়াও বাংলাদেশি রোগীর অভাবে কলকাতা ও শহরতলির ছোট-মাঝারি হাসপাতালগুলোরও অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক। এই সব হাসপাতাল ও নার্সিং হোমের ব্যবসার বড় অংশ আসতো বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসা থেকে। ফলে নগদের অভাবে ভুগছে তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিউরোসার্জেন জানান, বাংলাদেশের রোগীরা মূলত চিকিৎসা করান নগদে। তাদের সংখ্যা কমতে কমতে শূন্যে নেমে আসায় প্রভাব পড়েছে চিকিৎসকদের উপরেও। অস্ত্রোপচারও বন্ধ। এখন ভরসা ভারতের রোগীরা। 

পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্রের মতে, বাংলাদেশের যে রোগীরা চিকিৎসা করাবেন বলে স্থির করেছিলেন, তারা আসবেনই। ফলে এটা লাভ-ক্ষতির বিষয় নয়। এখন হয়তো রোগী পাচ্ছি না। আগামী দিনে তা পাবো। তিনি অবশ্য লাভ-ক্ষতির বিষয়টি আমলে আনতে চান না।

কয়েকটি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তারা ইতিমধ্যেই চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার করা বাংলাদেশি রোগীদের জন্য ই-চিকিৎসা ব্যবস্থা দিচ্ছেন।   

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ‘চিকিৎসা পর্যটকদে’র সংখ্যা কমায় কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগবে। কারণ, কলকাতার বিভিন্ন বড় হাসপাতাল থেকে হোটেল, রেস্তোরাঁ ব্যবসা চিকিৎসার কারণে আসা বাংলাদেশিদের উপরে নির্ভরশীল। দিল্লির আর্থিক গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকনমিক রিলেশনস’-র সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতের চিকিৎসা পর্যটন শিল্পে সবথেকে বড় অংশীদার ছিল বাংলাদেশ। গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা গদিচ্যুত হওয়ার পরে ভারতের চিকিৎসা পর্যটন ক্ষেত্র ধাক্কা খেয়েছে। চিকিৎসা পর্যটক কমেছে। ফলে হাসপাতাল ও তার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে। সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূ্র্বাঞ্চলে। কারণ, এই সব অঞ্চলেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চিকিৎসা পর্যটক আসেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী  যে দশটি দেশ থেকে সবথেকে বেশি মানুষ ভারতে চিকিৎসা করাতে আসেন, তার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। ২০২২ সালে যে  ৪ লাখ ৭৪ হাজার বিদেশি ভারতে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন , তার ৬৮.৯ শতাংশ এসেছিলেন বাংলাদেশ থেকে। এর বাইরে বহু মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে সীমান্তবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা করিয়ে যান।

বাংলাদেশের উপর নির্ভরতা কমাতে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকনমিক রিলেশনস বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। তাতে অন্যান্য দেশ থেকেও চিকিৎসা পর্যটন টানতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

পাঠকের মতামত

"পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্রের মতামত দেখুন! অর্থনীতি ধ্বসে যাওয়ার পরও ভারতীয়দের নির্লিপ্ত অহমিকা দেখে অবাক হচ্ছি। এরা আসলে কি মনে করে বাংলাদেশিদের !?

M.S.Rana
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ৬:২৮ অপরাহ্ন

Alhamdulillah, Let's improve our own treatment system, construct/ Make some specialised hospitals by chaina,UAE,..

No name
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ৫:৫১ অপরাহ্ন

সবার আগে মরুক গান্জুটে ও কি একটা নেতা আছে যে তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়া দরকার তারপর আমরা ভেবে দেখি।

Jewel
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ৫:২২ অপরাহ্ন

পাগল ময়ুখের চিকিৎসা তোরা আগে কর।

সোহাগ
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ৪:৩৯ অপরাহ্ন

Boycott Indian goods and services.

Fazle Ahmed
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩:৪৭ অপরাহ্ন

"পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্রের মতে, বাংলাদেশের যে রোগীরা চিকিৎসা করাবেন বলে স্থির করেছিলেন, তারা আসবেনই।" এরা যেনো পরিস্থিতি নরমাল হওয়ার আগেই মরে যান।

Nilima
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩:১৯ অপরাহ্ন

্লউ টেলা সালারা

হাবিবুরব রাহমান
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩:১৩ অপরাহ্ন

Hello Kelketa, how are you doing now? Feeling better?

SaZaChow
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ২:২৯ অপরাহ্ন

'পরের অহিত কল্প করে যেই জন; অগ্রে তার ক্ষতি হয় শাস্রের কথণ।'

মোহাম্মদ হারুন আল রশ
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ২:১৬ অপরাহ্ন

ভারতীয় টিভি উপস্থাপক ময়ুখ চৌধুরীদের উল্লম্ফন এখন গেলো কই? তারা এখন মুখে হাত দিয়ে বসে আছেন ভারতীয় অর্থনীতির করুন অবস্থা দেখে।মূত্রখোরদের লাফালাফি এখন দেখছিনা কেনো?

সৈয়দ নজরুল হুদা
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ২:১২ অপরাহ্ন

ভারত থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

ভারত সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status