ঢাকা, ২১ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার, ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

বাংলা একাডেমিতে কী হচ্ছে?

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার

বাঙালির মেধা ও মননের প্রতীক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর থেকে নানা কারণে আলোচনায় আসছে এই প্রতিষ্ঠানটি। হচ্ছে খবরের শিরোনাম। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও অমর একুশে বইমেলায় স্টল বন্ধের ঘটনায় নানা বিতর্ক-আলোচনা সর্বত্র। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে পুরস্কার প্রদানের পর পুরস্কৃতদের পেছনে রেখে প্রধান উপদেষ্টা, সংস্কৃতি উপদেষ্টা, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় যে ছবি প্রচার হয় তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে সর্বত্র। একের পর এক ঘটনায় বিব্রত খোদ একাডেমির দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এ নিয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও বেকায়দায় পড়েছে। বলা হচ্ছে- অতীতের ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ে এই প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। এর রেশেই এখন এমন ঘটনা ঘটছে। আইন, বিধি পরিবর্তন করে একাডেমিকে সঠিক ধারায় ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন মন্ত্রণালয় ও একাডেমির দায়িত্বপ্রাপ্তরা। 
সমালোচকরা বলছেন, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ বলে দিচ্ছে ঠিক পথে নেই একাডেমি। 

জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার পরপরই সমালোচনা শুরু হয়। তালিকায় নাম আসে এমন কয়েকজনকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আগের সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ট এবং সমর্থক হিসেবে পরিচিত এই লেখকদের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এ ছাড়া কোনো নারী লেখক স্থান পাননি এই তালিকায়। সমালোচনার মুখে তিনজনকে বাদ দিয়ে পুরস্কারের তালিকা ছোট করা হয়। একাডেমি সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে বলছেন, নীতিমালার কারণে আগের সরকারের ঘনিষ্ঠজনরাই জুরি কমিটিতে ছিলেন। এ কারণে তাদের পছন্দ গুরুত্ব পায়। এই নীতিমালা সামনে যাতে না থাকে তার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। 

সর্বশেষ তসলিমা নাসরিনের বই রাখা নিয়ে উত্তেজনার জেরে বইমেলায় ‘সব্যসাচী’ নামের একটি স্টল বন্ধ করে দেয়া হয়। সোমবার সন্ধ্যায় বইমেলার সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকা ‘সব্যসাচী’ নামের স্টল ঘিরে একদল লোক জড়ো হয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। তারা স্টলটি বন্ধ করে দেয়ার দাবি তোলেন। তখন ওই প্রকাশনীর প্রকাশক শতাব্দী ভবের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। উত্তেজনার মধ্যে পুলিশ এসে প্রকাশককে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিয়ে যায়। পরে উত্তেজিত লোকজন সেখানে গিয়েও বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ ‘সব্যসাচী’র স্টল ত্রিপল দিয়ে ঢেকে বন্ধ করে দেয়। এই স্টলের বিরুদ্ধে নাস্তিকতা প্রচারের অভিযোগ তুলে সেটি গুঁড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে রোববার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক ব্যক্তি পোস্ট দেন। ওদিকে ঘটনার পর বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছেন। 

এবারের পুরস্কার  প্রসঙ্গে- বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম মানবজমিনকে বলেন, পুরস্কারের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ব্যাপার। বাংলা একাডেমির পুরস্কার নিয়ে স্পর্শকতা প্রতিবছরই হয়। এ বছর আমাদের সুযোগ ছিল এটা না হওয়া। এ বছর বাইরের সম্পূর্ণ যে কোনো চাপ বা রাষ্ট্রনৈতিক ব্যাপার থেকে মুক্ত থেকে আমরা এটা করেছি। কিন্তু যেহেতু এখন রাজনৈতিকভাবে এবং সাংস্কৃতিকভাবেও একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতি মধ্যে আমরা আছি। সেটা আমাদের পুরস্কার সংক্রান্ত  ব্যাপারগুলোকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। বইমেলা প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, আর বইমেলায় যে ঘটনাগুলো ঘটেছে। সব ঘটে নাই, কিছু ঘটেছে। বইমেলা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বাইরের জিনিস নয়। এর অনেকগুলো দিক আছে। যেগুলো আসলে পুলিশি ব্যাপার। এটা বইমেলার ভিতরে ঘটেছে বলেই বাংলা একাডেমির ব্যাপার হয়ে যাবে না। তবে বিষয়টিতে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা আমরা সেভাবেই ডিল করার চেষ্টা করেছি। যেটা আইনি ব্যাপার সেটা পুলিশ ঠিক করবে। যেটা মেলার শৃঙ্খলার ব্যাপার সেটা বাংলা একাডেমি করবে। যেহেতু বাংলা একাডেমির মেলায় একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এজন্য বাংলা একাডেমি ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন- বাংলা একাডেমির একজন পরিচালক। যে ব্যাপারগুলো বাইরে ঘটছে তার কিছু প্রভাব বাংলা একাডেমির মেলায় এসে পড়েছে। সেগুলোর সবগুলো বাংলা একাডেমির নিয়ন্ত্রণে মধ্যে থাকার ব্যাপার নয়। এটা বাংলা একাডেমির প্রভাব বলয়ের ব্যাপার নয়। এটা অনেকগুলো রাষ্ট্র ডিল করছে, অনেকগুলো পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। বাংলা একাডেমি হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেটা মানুষের সঙ্গে অতিমাত্রায় সম্পৃক্ত। ফলে প্রতিক্রিয়াটাও বড় হয়। কিছু ঘটনা ঘটবে, তারপর সেভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। নিয়ন্ত্রণ নিতে হয়। এগুলো আসলে বাংলা একাডেমির প্রধান কাজ নয়।

পাঠকের মতামত

ছবিটি আমি দেখনি, কিন্তু ছবির বর্ণনা শুনে বুঝা গেল ঘটনাটা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এধরনের একটি অনুষ্ঠানে তো কে কোথায় বসবেন এমন একটি আসন বিন্যাস থাকে বা থাকার কথা। তাহলে প্রধান উপদেষ্টা কোথায় কোন আসনে বসবেন তা নির্ধারণ করা থাকে বা থাকার কথা। এখন এই আসন বিন্যাস কে করেছে? তাকে রিমান্ড দিলেই এই অনুষ্ঠানের এই বিতর্কটির সমাধান পাওয়া যাবে। কারণ হয়তো আসন এমন ভাবে সেটিং হয়েছে যেন প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যদেরকে সামনে বসিয়ে একটি বিতর্ক তৈরি করা যায়। এটা একটা ষড়যন্ত্র হতে পারে। অন্য কিছুও হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি সন্দেহ করার মত। কিছুদিন আগে দেখলাম একটি ফটো, যে লাল গালিচায় খাল খনন উদ্ভোধন। সেটা কিন্তু মানতে পারিনি। আসলে বর্তমান সরকারের সমস্যাটা কি? এর সমাধানই বা কি?

সোহাগ
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status