ঢাকা, ৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৬ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রথম পাতা

হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম রায়

স্টাফ রিপোর্টার
৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ১১ মাসের মাথায় প্রথম কারাদণ্ড হয়েছে শেখ হাসিনার। আদালত অবমাননার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। মামলার অপর আসামি ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আহমেদ বুলবুলের ২ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, হাসিনা ও বুলবুলের এই কারাদণ্ড হবে বিনাশ্রম এবং তারা যেদিন আত্মসমর্পণ করবেন বা গ্রেপ্তার হবেন, সেদিন থেকে কার্যকর হবে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই প্রথম কোনো মামলায় শেখ হাসিনার কারাদণ্ড হলো। মামলায় শুনানি করেন, ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর  মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন, মো. আব্দুস সোবহান তরফদার, মো. সহিদুল ইসলাম সরদার, এসএম মইনুল করিম সহ অন্যান্য প্রসিকিউটররা। অপরদিকে হাসিনা ও শাকিলের পক্ষে শুনানি করেন- রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এওয়াই মশিউজ্জামান। 

কয়েক মাস আগে ‘২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’- এমন বক্তব্যসহ শেখ হাসিনার ফোনকলের একটি অডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। অডিও’র এ বক্তব্য শেখ হাসিনার উল্লেখ করে তিনি ও শাকিল আকন্দ বুলবুলের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার মামলা করে প্রসিকিউশন। সেই মামলায় গতকাল চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করা হলো। রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী এডভোকেট মো. আমির হোসেন। তিনি বলেন, প্রসিকিউশন থেকে আদালতে যে বক্তব্য রেখেছেন তার সঙ্গে আমার দ্বিমত রয়েছে। এই সাজার রায়ে আমি সন্তুষ্ট নই। সাজার বিষয়ে রায় দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।
রায়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা সাবমিশনে বলেছি তর্কিত ফোনালাপটি পুলিশের সিআইডি’র মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তারা রিপোর্ট দিয়েছে, এটি জেনুইন একটি কনভারসেশন। তিনি বলেন, আদালত সবার আর্গুমেন্ট শুনে, সিআইডি’র ফরেনসিক রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, তর্কিত এই কনভারসেশনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী, সাক্ষী, তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ যারা এ বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, তাদের হত্যা করা, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া এবং নানাভাবে তাদের হুমকি দিয়েছেন। যেটা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী এই ট্রাইব্যুনালের বিচারাধীন প্রক্রিয়াকে প্রেজুডিস করার অপরাধ। এই অপরাধ চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনা ও শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দণ্ডিত করেছেন। শেখ হাসিনাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও শাকিল আকন্দ বুলবুলকে ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এটাও নির্দেশ দিয়েছেন যে, যেদিন তারা আত্মসমর্পণ করবেন অথবা পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে, তারপর থেকে এ সাজা কার্যকর হবে।

শুনানিতে যা বলেন- চিফ প্রসিকিউটর
শুনানিতে তাজুল বলেন, শেখ হাসিনা ‘এ-টিম’ নামে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ‘সুশান্ত দাশ গুপ্তা’ পেজটির এডমিন। তদন্ত সংস্থা গাইবান্ধায় যাওয়ার পর থেকে পেজটি বন্ধ রয়েছে। শেখ হাসিনা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলার সময় উপজেলা চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকে ফোনে বলেন, যারা এখন বেশি বাড়াবাড়ি করছে, দেখ- ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই শত্রুরা টিকে কিনা। কাউকে পালাতেও দেয়া হবে না। এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে শাকিল বলেন, জি নেত্রী, আলহামদুলিল্লাহ্‌। আপনার কথায় আমরা ভরসা রাখছি। হাসিনা বলেন, একদম একদম। তখন বুলবুল বলেন, আপনি একটু মাথা ঠাণ্ডা রেখে আপনার কৌশলে এগিয়ে যান নেত্রী। হাসিনা বলেন, ঠিক আছে, আমি সবাইকে বলছি, তোমরা শুধু দুই মাস অপেক্ষা করো। কিছু বলো না। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি নেত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ওরা ফেল করবে, আর আমরা যদি কিছু করি, তখন বলবে আমাদের জন্য করতে পারে নাই। সেটা আর বলার মুখ নেই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও ইউনূসের গুটি গুটি চেহারা...।  হাসিনা বলেন, মামলা, আমার তো শুধু গোবিন্দগঞ্জ না, সারা দেশে ২২৭টি মার্ডার কেস। আমি বলছি, সবাই তালিকা করো। তোমরাও তালিকা করো। ২২৭ মার্ডারের লাইসেন্স পেয়ে গেছি। এক মামলায় যে শাস্তি, সোয়া ২০০ মামলায় একই শাস্তি। তাই না। ঠিক আছে সেই শাস্তি নেবো। তার আগে সোয়া ২০০ হিসাব করে নেবো। এটা যেন মাথায় থাকে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ইনশাআল্লাহ্‌, ইনশাআল্লাহ্‌। শেখ হাসিনা বলেন, এবার একবার আসতে পারলে কেউ ফেলাইতে পারবে না ইনশাআল্লাহ্‌।

এ সময় তানভীর হাসান ট্রাইব্যুনালকে জানান, ঘটনা তদন্তে তানভীর হাসান জোহা ২৯শে জুন গাইবান্ধায় গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বুলবুলের স্ত্রী চাঁদপুরে একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। বুলবুল  নিয়মিত তার স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বুলবুলের সিমটি বন্ধ থাকলেও সেটির আইএমি কোড চালু রয়েছে। ফোনটি বর্তমানে সাভার এলাকায় রয়েছে। আমরা অডিওটির বিস্তারিত পরীক্ষা করি। অডিওটি যে ফাঁস করেছে তার সঙ্গেও কথা বলি। আমরা ঘটনার ফরেন্সিক পরীক্ষা করেছি। এটি জেনুইন একটি কনভারসেশন। শেখ হাসিনা ও শাকিল আকন্দ বুলবুল পলাতক আছেন। তাদের আত্মসমর্পণ করতে দু’টি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। তারপরও তারা হাজির না হলে তাদের জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করেন ট্রাইব্যুনাল। সেই রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালে তার যুক্তি তুলে ধরেন। অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এওয়াই মশিউজ্জামানও তার বক্তব্য তুলে ধরেন। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ট্রাইব্যুনাল এই রায় দেন।
ওদিকে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ  হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার কার্যক্রম চলছে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status