প্রথম পাতা
জুলাই বর্ষপূর্তিতে প্রধান উপদেষ্টা
স্বৈরাচার যেন আর মাথাচাড়া দিতে না পারে
স্টাফ রিপোর্টার
২ জুলাই ২০২৫, বুধবার
স্বৈরাচার যেন আর কখনো ফিরে আসতে না পারে সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করে তিনি বলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে তরুণ ছাত্র-জনতা, রিকশাচালক, শ্রমিকরা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন-সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট মাস জুড়ে আমরা গত বছরের প্রতিটি দিনকে আবারো পুনরুজ্জীবিত করবো। এই অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আবার নতুন করে শপথ নেবো এবং এটা আমরা প্রতি বছর করবো, যাতে স্বৈরাচার আর যেন মাথাচাড়া দিতে না পারে। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে মাসব্যাপী এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রতি বছর এই সময়টা উদ্যাপন করবো যাতে পরবর্তীতে আবার এই অভ্যুত্থান করার জন্য ১৬ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়। আমরা প্রতি বছর এটা করবো, যাতে স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন দেখা গেলেই তাৎক্ষণিক ভাবে আমরা তার বিনাশ করতে পারি। তিনি বলেন, আজ ইতিহাসের এক গৌরবময় ক্ষণ। এক বছর আগে, এই জুলাই মাসে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান রচনা করে আমাদের মুক্তির স্বাদ দিয়েছিল। জুলাই ছিল দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে এক অমোঘ ডাক, জনতার এক জাগরণ। সেই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল- ‘ফ্যাসিবাদের বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ, রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেয়া।’ তিনি আরও বলেন, আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরণ করার যে অনুষ্ঠানমালা নিয়েছি, এটা শুধু ভাবাবেগের বিষয় নয়, ক্ষোভ প্রকাশের বিষয় নয়। আমরা ১৬ বছর পরে বিরাট বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলাম অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এবং যে কারণে অভ্যুত্থান হয়েছিল, তাৎক্ষণিক তার যে লক্ষ্য ছিল সেটা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। কিন্তু তার পেছনে ছিল একটা বিরাট স্বপ্ন- নতুনভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণ, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ। প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি আরও বলেন, আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি, সেই সব তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, রিকশাচালকদের-যারা রাস্তায় নেমে গণতন্ত্রের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছিলেন; সাহস, ত্যাগ আর দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। জুলাইকে ঐক্যের মাসে পরিণত করার আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা আজ মাসব্যাপী যে কর্মসূচির সূচনা করছি, তা শুধুই স্মরণ নয় বরং একটি নতুন শপথ। গত বছরের জুলাইয়ে এ দেশের সকল শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, আমরা চাই, এই জুলাইয়ে সেই ঐক্য আবার সুসংহত হোক। তিনি বলেন, আমাদের এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য- জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার দাবি জানানো এবং রক্তের বিনিময়ে পাওয়া সংস্কারের এই সুযোগকে হারিয়ে না ফেলা। আমাদের সামনের পথ অনেক কঠিন, কিন্তু মস্ত বড় সম্ভাবনাও আছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জনগণ যখন জেগে ওঠে, তখন কোনো শক্তিই তাদের রুখে দিতে পারে না। সেই বিশ্বাস নিয়েই আমি আপনাদের আহ্বান জানাই-আসুন, এই জুলাই মাসকে পরিণত করি গণজাগরণের মাসে; ঐক্যের মাসে। জুলাই-আগস্টের পুনরুত্থান কর্মসূচির সাফল্য কামনা করে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন আবার নতুন করে জেগে উঠুক। আমাদের ঐক্য সর্বমুখী হোক, অটুট হোক আমাদের এই অনুষ্ঠানমালার লক্ষ্য। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর সি আর আবরার বক্তব্য রাখেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে “জুলাই শহীদ স্মৃতি বৃত্তি”: এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তরুণদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর “জুলাই শহীদ স্মৃতি বৃত্তি” প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর হাতে “জুলাই শহীদ স্মৃতি বৃত্তির” চেক তুলে দিয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এই বৃত্তির অধীনে বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজ ও ইনস্টিটিউটের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এককালীন সহায়তা প্রদান করা হবে। এ বছর ৭২৫টি প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার ৪০ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তিলাভ করবেন। দেশের প্রায় সোয়া দুই হাজার কলেজ এবং ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধান উপদেষ্টার হাত থেকে বৃত্তি গ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা হলেন- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের শিক্ষার্থী হাবীবা আক্তার, তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী এস এম আবু তালেব এবং ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী খন্দকার মাহমুদুল হাসান। উল্লেখ্য, জুলাই অভ্যুত্থানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২ জন শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছেন।