প্রথম পাতা
হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন ট্রাইব্যুনালে
স্টাফ রিপোর্টার
২ জুলাই ২০২৫, বুধবার
জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমাতে ৩ লাখ ৫ হাজার ৩১১ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুধু ঢাকাতেই ৯৫ হাজার ৩১৩ রাউন্ড তাজা বুলেট ব্যবহার করা হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আবেদন করেন প্রসিকিউশন। তখন হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ট্রাইব্যুনালের কাছে সময় মঞ্জুর করার আর্জি জানান। পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনাল ৭ই জুলাই শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। মঙ্গলবার দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই দিন নির্ধারণ করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, সহীদুল ইসলাম সরদার, ফারুক আহমেদ, এমএইচ তামিম সহ অন্যরা। মামলায় হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। আসামিদের মধ্যে হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। তাদের পক্ষে মো. আমির হোসেনকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে শেখ হাসিনাকে জুলাই-আগস্টে নৃশংসতার ‘মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। জুলাই আন্দোলন দমাতে সারা দেশে ৩ লাখ ৫ হাজার ৩১১ রাউন্ড গুলি ছোড়ে আইনশৃক্ষলা বাহিনী। শুধু ঢাকাতেই ৯৫ হাজার ৩১৩ রাউন্ড তাজা বুলেট ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও আন্দোলন দমাতে প্রায় ১৫০০ লোককে হত্যা করা হয়েছে, ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে গুলি করে আহত করা হয়েছে, নারীদের ওপর সহিংসতা ও যৌন নির্যাতন করা হয়েছে, ‘টার্গেট’ করে শিশুদের হত্যা করা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পর লাশ ও জীবিত মানুষকে একত্রিত করে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, নিহতদের জানাজার নামাজ পড়তে বাধা দেয়া হয়েছে, আহতদের হাসপাতালে নিতে, চিকিৎসা দিতে, এমনকি পোস্টমর্টেমেও বাধা দেয়া হয়েছে। এই সমস্ত কর্মকাণ্ডগুলো তদন্ত করে প্রধান মাস্টারমাইন্ড এবং হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছেন। হাসিনার এই অনৈতিক হুকুম বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সেটা আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন তদারকি করতেন। শুনানিতে তিনি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন জানান।
শুনানিতে আসামি পক্ষের রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক মামলা। তিনি এই মামলার নথিপত্র ২৫শে জুন পেয়েছেন। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার সময় পাননি। তা ছাড়া তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাই তার প্রস্তুতির জন্য ১৫ দিন সময় প্রয়োজন। ট্রাইব্যুনাল ৬ দিন সময় মঞ্জুর করে আগামী সোমবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। সেদিন আসামি পক্ষে যুক্তি তুলে ধরবো। মামলার অপর আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন কারাগারে আছেন। গতকাল তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানিতে অংশ না নেওয়ার কথা জানান।