ঢাকা, ৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৬ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রথম পাতা

গণহত্যায় ১৭৯১ মামলা, ৫টির প্রতিবেদন দেয়ার প্রস্তুতি

শুভ্র দেব
৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে সারা দেশে গণহত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে দেড় হাজারেরও বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, দলের নেতা-কর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসরদের আসামি করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলন শেষ হয়ে গেল গুলিতে। ভাইয়ের
শুরুর বছরপূর্তি হলেও এসব মামলার মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিবেদন দেয়ার পর্যায়ে রয়েছে। অনেক মামলায় গণহারে আসামি করা, অনেক অজ্ঞাত আসামি থাকায় তদন্তে সময় যাচ্ছে বলে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে। 

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ৯ মাসে সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, সাবেক মন্ত্রী, সরকারি বড় কর্মকর্তা, পুলিশ, চিকিৎসক, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে  ১ হাজার ৭৯১টি। এসব মামলায়  ৩ লাখ ৭ হাজার ৫৭২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে এজাহারনামীয় আসামির সংখ্যা ৭৪ হাজার ৭০৯। আর অজ্ঞাতনামা আসামি ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৩। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ হাজার ৯১ জন আসামি। এর বাইরে জুলাই মাসে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষার্থীদের ওপর ২৬৪টি হয়রানি মামলা করেছিল।
সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে গত বছরের আগস্ট মাস থেকে গণহত্যা মামলা শুরু হয়। ওই মাসে ২৬৮টি মামলা হয়েছিল। মামলায় এসব মামলায় এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছিল ২৬ হাজার ২৬৪ ও অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছিল ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৫৫ জনকে। ওই মাসে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ২৫৪ জনকে। সেপ্টেম্বর মাসে মামলা হয়েছিল ২৩৮টি। এসব মামলায় ১৯ হাজার ২৮৩ জনকে এজাহারনামীয় ও ৩০ হাজার ২৩৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। অক্টোবরে মামলা করা হয় ১ হাজার ৯২টি। এসব মামলায় ১২ হাজার ১৮০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ১৫ হাজার ৭৯৯ জনকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নভেম্বর মাসে সারা দেশে ৭২টি মামলা করা হয়। ৫ হাজার ৮৫৬ জনের নাম উল্লেখ ও ৫ হাজার ৫১৭ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। ডিসেম্বর মাসে ১৭টি মামলায়  ১ হাজার ২০৯ জনকে এজাহারনামীয় ও ২ হাজার ১০০ জনকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে  ৭২টি মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ৫ হাজার ৮৫৬ জন। আর ৫ হাজার ৫১৭ জনকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে আসামি করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ৪ টি হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ৩৬০ জন ও ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মার্চ মাসে ৯টি মামলায় ১ হাজার ৯১৪ জনকে এজাহারনামীয় ও ১ হাজার ৮৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে ৩টি মামলায় ৭১৫ জনকে এজাহারনামীয় ও ৭০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মে মাসে ১৬টি মামলায় ১ হাজার ৭২ জনকে এজাহারনামীয় ও ২ হাজার ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। 

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম মানবজমিনকে বলেন, সব গণহত্যা মামলার তদন্ত চলছে। কিছু মামলার রিপোর্ট আমরা আদালতে পাঠাবো। বাকি মামলার প্রতিবেদন কবে দেয়া হবে, সুর্নিদিষ্ট কোনো তারিখ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এভাবে মামলার তদন্ত হয় না। আমরা তদন্তগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে করি যাতে তদন্ত নিখুঁত হয়। এতেকরে সময় এক বছর বা দেড় বছর লাগুক এতে সমস্যা নাই। তবে তদন্ত রিপোর্ট যেন কোর্টে গিয়ে ফেল না করে। এটা হলো আমার টার্গেট। কিছু একটা লিখে জমা দেওয়া আমার টার্গেট না। কতটা মামলার চার্জশিট দেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমপক্ষে ৫টি মামলার রিপোর্ট জুলাই মাসে জমা দেয়া হবে এবং সেগুলো শেরপুর, পটুয়াখালীসহ ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার মামলা। ঢাকার মামলা নিয়ে বলেন, ঢাকার মামলার চার্জশিট করতে পারি নাই। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে ঢাকার দু’টি মামলার চার্জশিট দেয়ার। এখনো বিভিন্ন থানায় গণহত্যা মামলা হচ্ছে। আসামি গ্রেপ্তার নিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই প্রকৃত আসামি গ্রেপ্তার। হাজার হাজার আসামি আমরা গ্রেপ্তার করি না। কিন্তু গ্রেপ্তার বাণিজ্য হয়ে যায়। আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা সত্ত্বেও গ্রেপ্তার বাণিজ্য হয়ে যাচ্ছে। নানা পন্থায় সেগুলো হচ্ছে। পুলিশেরও কিছু অসৎ লোক জড়িত আছে। তবে আমরা প্রকৃত আসামি গ্রেপ্তার করছি। এজন্য আমরা ওয়েট করছি। যখন পাই তখন গ্রেপ্তার করি। কিছু কিছু মামলায় দেড় হাজারের মত আসামি করা হয়েছে। তাই বলে আমরা সবাইকে কি ধরবো? এটা তো অন্যায়। আসামি গ্রেপ্তার আমাদের প্রধান উপজীব্য নয়। তদন্ত শেষ করে আদালতে পাঠাবো। এরমধ্যে আসামি যে কয়জন পারবো গ্রেপ্তার করবো। যাদেরকে পারবো না তাদের অনুপস্থিতিতে ট্রায়াল হবে। ফেরারি হয়ে সারাজীবন ঘুরে বেড়াবে। দুর্বিষহ জীবন হবে তার। 

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহদিন মালিক মানবজমিনকে বলেন, আসামিদের বাঁচানোর জন্যই একটা মামলায় যখন ডজন ডজন আসামি করা হয়েছে। যারা করেছে তারা না বুঝেই করেছে। মামলায় তিনশ’ জনের নাম দিলেন। পুলিশকে তো এদের নামে কিছু না কিছু তদন্ত করে বের করতে হবে। একটা থানায় যে পরিমাণ এসআই থাকে তারা সবাই মিলে তদন্ত করলেও এসব মামলার চার্জশিট দিতে বহু বছর লাগবে। তাই এই মামলাগুলোর তদন্ত ও বিচার শেষ হতে ১০ বছর লাগলেও আমি অবাক হবো না। তিনি এখন হয়তো অনেক সাক্ষী বলবে আমার সামনে হয়েছে, আমি ঘটনা দেখেছি। কিন্তু ১০ বছর পরে তো তাকে ডাকলে পাওয়া যাবে না। তখন তো সাক্ষীর মনেও থাকবে না। কী ঘটেছিল। এর ভেতরে তদন্ত কর্মকর্তাও বদলি হবেন। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা আসবেন। মূলকথা আওয়ামী লীগের সময় বিএনপিকে হেনস্তা করার জন্য যা করা হতো তারই পুনরাবৃত্তি হয়েছে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status