ঢাকা, ৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৬ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রথম পাতা

অগ্নিঝরা জুলাই

রাব্বি হত্যার বিচার কি পাবো?

ফাহিমা আক্তার সুমি
৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

চোখে এখন আর পানি নেই। মাস পেরিয়ে বছর এলো কিন্তু আমাদের ক্ষত মুছেনি। রাব্বি ছিল আমার একমাত্র ভাই। স্বপ্ন ছিল বড় প্রকৌশলী হবে। পরিবারের দুঃখ ঘুচাবে। সেই স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে গেল গুলিতে। ভাইয়ের মৃত্যুর বিচার কি পাবো? স্মৃতি বুকে জড়িয়ে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন ২০২৪-এর ৪ঠা আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে গুলিতে নিহত শহীদ ইসমাঈল হোসেন রাব্বির বোন মিম আক্তার। রাব্বির বাবা মো. মিরাজ দিনমজুর। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন রাব্বির বাবা-মা।
শহীদ রাব্বির বোন মিম আক্তার মানবজমিনকে বলেন, আবার জুলাই ফিরে এসেছে কিন্তু একজনও শহীদ ভাইয়ের মৃত্যুর বিচার হয়নি এখনো। আমার কাছে সম্মান এটা না মাথায় হাত বুলিয়ে আবেগ দেখানো। ওই সিমপ্যাথি আমরা চাই না। আমার কাছে সম্মান মানে আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার। শুধু আমার ভাই না, এক বছরে দেশে যদি একটা শহীদ ভাইয়ের মৃত্যুর বিচার কার্যকর হতো তাহলে নিজেকে বুঝাতে পারতাম। এখানে মূল হলো শেখ হাসিনার বিচার কার্যকর করা। তাহলে আমরা মনে করবো শহীদদের প্রতি যথেষ্ট মূল্যায়ন করেছে। 

তিনি বলেন, আমার ভাই কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না, সে দেশের মানুষ হয়ে আন্দোলনে নেমেছিল। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি আমার ভাইকে নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করেছে। আমার ভাই তো চলে গেছে আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। কিন্তু এভাবে মৃত মানুষকে নিয়ে কাড়াকাড়ি না করে আহত যে ভাইয়েরা আছে তাদের খোঁজ নেন, তাদের খোঁজ নেয়াটা বেশি জরুরি। আমি কোনো সিমপ্যাথি চাই না, আমি বিচার চাই, বিচার। আমার বাবা-মায়ের জন্য রাব্বি আর ফিরে আসবে না, তাদের আমাকে দেখতে হবে সারা জীবন। আমি টিউশনি করি। বাবা-মায়ের শরীর তেমন একটা ভালো নেই। তারা আর স্বাভাবিক ভাবে থাকতে পারবে না। সেই ৪ঠা আগস্ট থেকে আমাদের পরিবারে কারও মুখে হাসি নেই, সব সময় মনে হয় আমাদের জীবনটা থেমে গেছে। এই ঘোর অন্ধকার হাজার কিছুর বিনিময়েও কোনোদিন কাটবে না। একটা মাত্র ভাই ছিল আমার। ভাইয়ের ছিন্নভিন্ন মাথা চোখের সামনে ভাসতে থাকে, কি করে এই দৃশ্য ভুলে যাই। এই এক বছরে মায়ের কান্না একদিনের জন্য থামেনি। বাবাও একেবারে ভেঙে পড়েছেন। রাব্বি বেঁচে থাকা অবস্থায় যাত্রাবাড়ীতে যে বাসায় ভাড়া ছিলাম সেই বাসা ছেড়ে দিয়েছি, সেখানে থাকলে মা সারাক্ষণ রাব্বির ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। কেউ খোঁজও নেয় না আমরা কেমন আছি। বাবার খুব স্বপ্ন ছিল তার একমাত্র ছেলে প্রকৌশলী হবে। রাব্বি যে স্কুলে পড়তো সেখানে গিয়ে প্রায়ই খুঁজতে থাকে বাবা। রাব্বি খুব সৌখিন ছিল, অভাবের সংসার হলেও খুব আদরে একমাত্র ভাইকে বড় করেছি। গত কয়েকদিন আগে ওর কিছু ব্যবহৃত পোশাক বের করেছি; মনে হচ্ছে রাব্বির শরীরের গন্ধ এখনো ছড়িয়ে পড়ছে। বাবা-মা ও আমরা দুই বোন জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছি কিন্তু রাব্বিকে আমরা কখনো কষ্ট বুঝতে দেইনি। আমার সেই ভাইয়ের নিথর দেহ একটা রাত মর্গের ফ্রিজে রাখা ছিল। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে।

সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে মিম বলেন, ২০২৪ সালে রাব্বি এসএসসি পাস করে এরপর তাকে শরীয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ইলেট্রনিক্স ডিপার্টমেন্টে ভর্তি করা হয়। সেখানে মেসে থাকতো। রাব্বির স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হবে, কিন্তু সে স্বপ্ন গুলিতে কেড়ে নিলো। ২০২৪- এর ১৫-১৬ই জুলাই শরীয়তপুরে দুইবার আমার ভাই ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়। এটা শোনার পরে ১৭ই জুলাই ভাইকে ঢাকা নিয়ে আসি। ঢাকাতে এসে পরের দিন আবার আন্দোলনে যায়। ১৯শে জুলাই সে শাহবাগে গিয়ে বুকের বামদিকে একটা ছররা গুলি বিদ্ধ হয়। সে সময় তিনদিন জ্বরে ভুগেছে। ৪ঠা আগস্ট আমি টিউশনি করাতে যাওয়ার আগে ওকে রেখে দরজা বন্ধ করে যাই। পরে এসে দেখি ও বাসায় নেই। মোবাইলে কল দেই রিসিভ করে না। মাসহ যাত্রাবাড়ী, দয়াগঞ্জ, ধোলাইপাড় ও অন্যান্য জায়গা খুঁজে কোথাও পাইনি রাব্বিকে। সন্ধ্যার পর থেকে ওকে খুঁজতে রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত পাইনি। পরের দিন ভোরে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে কোনো ওয়ার্ড, কেবিন খুঁজতে বাকি ছিল না। একজন লোক বলে একটু মর্গে গিয়ে দেখার জন্য। সেখানে গিয়ে দেখি রক্তমাখা একটা স্ট্রেচারে পড়ে ছিল আমাদের রাব্বি। মিম বলেন, এখন আমাদের একটাই চাওয়া আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার।

পাঠকের মতামত

হাসিনাকে কয়েক হাজার কোটিবার ফাঁসি দিলেও জনতা সঠিক বিচাী পাবে না। হাসিনাকে মমি বানিয়ে কিয়ামত পরযন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।

জনতা
৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status