অনলাইন
নাগরিক ঐক্যের চা-চক্রে রাজনৈতিক দলের নেতারা
সংকট নিরসন ও নির্বাচনের লক্ষ্যে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে
স্টাফ রিপোর্টার
(১ মাস আগে) ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ১০:১৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০২ পূর্বাহ্ন

দেশের চলমান পরিস্থিতি ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। গণতন্ত্রের পথে যাওয়ার প্রথম ধাপ নির্বাচন। ২০২৪ সালে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যের বিনিময়ে গণঅভ্যুত্থাণের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে বিতাড়িত করা সম্ভব হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান অনেক বিপ্লবী সৃষ্টি করেছে। এখন রাজনৈতিক ঐক্য করতে কোনো ফ্যাসিবাদ বাধা দিলে তাদেরকেও প্রতিহত করতে হবে। বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে ‘সংকট থেকে মুক্তি পেতে রাজনৈতিক ঐক্যমতের বিকল্প নেই’ শীর্ষক চা-চক্রে বক্তারা এসব কথা বলেন। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এই চা-চক্রের আয়োজন করেন। বক্তারা বলেন, বিগত ১৬ বছরের আন্দোলন সংগ্রাম ও জুলাই-আগস্টের ৩৬ দিনের আন্দোলনের মধ্যে বড় একটা সর্ম্পক রয়েছে। সবাই ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-জনতার এক লক্ষ্য থাকার কারণে শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত করা গেছে। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত সময়ে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। অন্যস্থায় বিপ্লব বেহাত হতে পারে। কারণ, নির্বাচন কেন্দ্রীক সংস্কারের পাশাপাশি দ্রুত সময়ে নির্বাচন দিতে বিলম্ব করলে ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরা নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখবে। বর্তমানে দেশে একটা সংকট রয়েছে, এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য করতে হবে। দ্রুততম সময়ে জাতীয় নির্বাচনের জন্য সকলকে একটা ‘সমঝোতা পরিষদ’ গড়ার কথাও বলেন তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদের শপথ নিয়েছে। তার মেয়াদ কত হবে সেটা দেওয়া নেই। নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে, নির্বাচন কমিশন যতই নিরপেক্ষ বলুক, সেটি কিন্তু কাজের কথা না। এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এখন ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করেছে, তাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য করতে হবে। কাউকে বাদ দেয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, সংবিধান নিয়ে বেশি বিরোধ নেই, আমি দেখেছি, আলী রীয়াজ সাহেব পাঠিয়েছেন। তবে ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান তুলনা করা ঠিক হবে না। ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যটাকে সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কারণ নিজেদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যমত না থাকার কারণে অনেক দেশে বিপ্লব হাত ছাড়া হয়ে গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমরা দেখেছি, আন্দোলনের পর একটা মার্শাল ল’ আসে। সেটি পাকিস্থান আমল থেকে দেখে আসছি। আন্দোলনের পর অন্তর্র্বতীকালী সময়ে নির্বাচন দিলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসে। এবারের আন্দোলন কিন্তু ভিন্ন, আমরা সবাই নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ২৪-এ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আলো দেখেছি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের অ্যাসেট। উনাকে পেয়ে আমরা গর্বিত। কিন্তু এখন সরকারের পথ চলা ভিন্ন দেখছি। স্বল্পকালীন সরকারের জন্য এত বড় ক্যানভাস করা প্রয়োজন ছিল না। শেখ হাসিনা তো ১৫ বছরে সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে অন্তর্বতী সরকারের উচিত ছিলো নির্বাচনমুখী হওয়া। আমরা সরকারে সংস্কার প্রতিবেদনগুলো ফেলে দেয়ার কথা বলছি না। এগুলো নিয়ে ভাবছি। শেখ হাসিনার পতনের পর কেউ আগের মতো দেশ চালাবে, এটা ভাবা যায় না। আমরা নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠন করে দেশ চালাবো। যত সমস্যার একমাত্র সমাধান নির্বাচন।
সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয় নির্বাচনে। নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হবে, বিএনপির ফলাফল তত ভালো হবে। তাদের কাছে অনুরোধ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলে তারা যেনো সংস্কার গুলো ঠিক মতো করে। একই সঙ্গে সতর্ক চোখ রাখতে চাই, তারা যেনো ভুল না করে। এজন্যই ঐক্য দরকার। তিনি বলেন, আগস্টের পর অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সেই সাথে চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ঐক্যমতের বিকল্প নেই। ঐক্যমতের মাধ্যমে সব সম্ভব। জাতীয় ঐক্যমতের জন্য কমিশন গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড মুহাম্মদ ইউনূস।
বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমি চাই সরকারের নিরপেক্ষ বৈশিষ্টা অক্ষুণ্ন রাখবেন। যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না তুলতে হয়। আমরা সরকারকে সফল ও কার্যকর করতে চাই। আমরা সহযোগীতা যোগাতে চাই। আপনারা জানা-অজানা কোনো এজেন্ডা নিয়ে কাজ করবেন না। আপনার যে দেশ চালাতে পারছেন না, এটা দেশের মানুষ জানে। কিন্তু তারপরও আমরা সমালোচনা করি, সরকার যেনো সঠিক পথে থাকে।
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, জাতীয় নেতৃত্বে বের করতে ছাত্রদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিন। এতে করে নেতৃত্বে বের হয়ে আসবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে, যেটি ব্যাবহার করে এক দলীয় বা ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠে। সেটির বিলোপ করতে হবে। ৭২-এর সংবিধান হাত ধরে আওয়ামী লীগ বারবার ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিল। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান একটা বিপ্লবের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। মানুষের নতুন স্বপ্ন তৈরি হয়েছে। ৭২-এর সংবিধানের একদলীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের সাথে প্রতারণা, আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠার যন্ত্র। যেটাকে পুরোপুরি বাতিল করতে হবে। বর্তমানে মানুষের অধিকারের আন্দোলনকে সামনে রাজনৈতিক সংকট হতে পারে বলে বাধা দেয়া যাবে না।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন স্বপন, দৈনিক সমকাল পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব রাফে সালমান রিফাত, বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশিদ ফিরোজ, সমাজকর্মী রুবি আমাতুল্লাহ, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, জাতীয় নাগরিক কমিটির আরিফুল ইসলাম আদীব প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
পাঠকের মতামত
CPB, BSD and other left parties are here. Where is the major stakeholder Islamic organizations? Is it call political concencious? Surely it is ill motivated.
সব দলের অংশগ্রহণে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচন চাই।
ইউছুপ সাহেব, বেশী মাতব্বরী দেখাতে গিয়ে জামাত আবার একঘরে হয়ে যাচ্ছে । আমি কাকে দাওয়াত দিবো, না দিবো সেটা আমার ব্যাপার,তাইনা? আপনি বেহায়ার মতো বলতে পারেননা-আমাকে কেনো দাওয়াত দিলেন না?
মান্না সাহেব, এখানে জামায়াতের কোন প্রতিনিধি নেই কেন?বিএনপি ব্যতীত জামায়াতের চেয়ে শক্তিশালী দল কোনটা? নাকি বিএনপিকে খুশী রাখতে জামায়াতের প্রতিনিধি নেই? এখন আপনারা আছেন বিএনপিকে খুশী রাখতে। আর বিএনপি আছে পতিত ফ্যাসিবাদের পরিবর্তে ভারতের নতুন খলিফা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে।
জামায়াত এখানে অনুপস্থিত !!! তারা এই আন্দোলনের বড় স্টেকহোল্ডার, তাদেরকে বাদ দিয়ে কিভাবে জাতীয় ঐক্যমত সম্ভব। বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে সংকীর্ণ মানসিকতা দেখিয়ে ঐক্যমত সম্ভব না। নেতাদেরকে অবশ্যই উদার হতে হবে।