শরীর ও মন
কক্সবাজারের মহেশখালীতে বহুল প্রতীক্ষিত এক্সিলারেট হোপ হসপিটাল উদ্বোধন
স্টাফ রিপোর্টার
(২ মাস আগে) ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৭:৫৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৮:২৫ অপরাহ্ন

কক্সবাজারের মহেশখালীতে এক আনন্দ মুখর পরিবেশে এক্সিলারেট হোপ হসপিটাল উদ্বোধন করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের বঞ্চিত লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় আশ্রয়স্থল হবে এই হসপিটাল, এমনটি আশা করেন দ্বীপবাসী। ৩০ বেডের এই হসপিটালে প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছে বহির্বিভাগ, গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী সেবা, নবজাতক এবং শিশু চিকিৎসা সেবা, স্বল্পপরিসরে প্যাথলজি/ল্যাব টেস্ট, পরিবার পরিকল্পনা কাউন্সেলিং ও পদ্ধতি ইত্যাদি দিয়ে। পরবর্তীতে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা জরুরি বিভাগ, নরমাল ডেলিভারি, সিজারিয়ান ডেলিভারি, আন্তঃবিভাগ, প্যাথলজি/ল্যাব টেস্ট, আল্ট্রাসাউন্ড, ইসিজি, টেলিমেডিসিন, ফার্মেসি, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা চালু হবে।
গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে উপস্থিত থেকে হোপ হসপিটালটির উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. নুরুন নাহার চৌধুরী; আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত ও এক্সিলারেট এনার্জি উপদেষ্টা পিটার ডি হাস; এক্সিলারেট এনার্জির এশিয়া-প্যাসেফিকের ভাইস প্রেসিডেন্ট রামন ওয়াংদি; এক্সিলারেট এনার্জির কান্ট্রি ম্যানেজার হাবিব ভুঁইয়া; মহেশখালী উপজেলার ইউএনও মো. হেদায়েত উল্যাহ্; হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কে এম জাহিদুজ্জামান; মহেশখালী উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহফুজুর রহমান। অতিথিরা ফিতা কেটে এই হসপিটালের শুভ উদ্বোধন করেন।
কক্সবাজার জেলার ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন মহেশখালী উপজেলা একটি দ্বীপ। ৩৬২ দশমিক ১৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস। ভৌগোলিক কারণে জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ কষ্টসাধ্য, ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায়, রোগীদের জন্য তা চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই দুর্ভোগ আরও প্রকট। অতীতে সময়মতো চিকিৎসার অভাবে অনেক মা ও শিশুর মৃত্যুও ঘটেছে। এটাই নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছিল এখানকার মানুষ। কিন্তু আমেরিকা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জি ও হোপ ফাউন্ডেশন এর যৌথ উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবার এই করুন নিয়তিকে উত্তরণের প্রত্যয়ে এবং সরকারের পাশাপাশি মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নির্মাণ করা হয়েছে এক্সিলারেট হোপ হসপিটাল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, মহেশখালীবাসী মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিল। এক্সিলারেট হোপ হসপিটালের মাধ্যমে দ্বীপবাসীর জন্য চিকিৎসা সেবার নতুন দ্বার উন্মোচন হল। ড. নুরুন নাহার চৌধুরী এক্সিলারেট ও হোপ ফাউন্ডেশনের যৌথউদ্যোগে নির্মিত এই হসপিটাল স্থানীয় নাগরিকদের জরুরি মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন।
পিটার ডি হাস বলেন, টেকসই উন্নয়নের একটি লক্ষ্য হল সকল নারী ও শিশুর জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। আমরা এই হসপিটালের মাধ্যমে দ্বীপবাসীর মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। হোপ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথভাবে এই হসপিটাল নির্মাণের মাধ্যমে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করার সুযোগ করে দেয়ায় আমরা হোপ এর প্রতিষ্ঠাতা ডা. ইফতিখার উদ্দিন মাহমুদ এর উপর কৃতজ্ঞ।
উল্লেখ্য, আমেরিকা প্রবাসী শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ইফতিখার মাহমুদে ১৯৯৯ সালে 'হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন এন্ড চিলড্রেন অব বাংলাদেশ' প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের বিশেষকরে, মা ও শিশুদের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা ২০০৭ সাল থেকে মহেশখালীতে ছোট একটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা শুরু করেছিলাম। মহেশখালীবাসীর উন্নত চিকিৎসাসেবার জন্য একটি হসপিটাল নির্মাণ দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল। অবশেষে তা পূরণ হয়েছে। দ্বীপবাসী মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার সরকারের যে অঙ্গীকার তা পূরণে এই হসপিটালের মাধ্যমে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
হসপিটালটির শুভ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণ করা হয়েছিল। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রায় দুইশতাধিক মানুষ এই চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারী মিস আমেনা বেগম বলেন, মহেশখালীতে আগে কোন হসপিটাল ছিল না। আমরা অনেক কষ্ট করেছি। এখন আমাদের কাছেই হসপিটাল হয়েছে। আমাদের অনেক উপকার হবে। দীর্ঘদিনের বঞ্চিত লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় আশ্রয়স্থল হবে এই হসপিটাল, এমনটি আশা করেন দ্বীপবাসীও।