ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

ভারত

পশ্চিমবঙ্গে আনার হত্যার তদন্ত এখনো চলছে, খুনের মোটিভ অজানা

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা

(২ মাস আগে) ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ১১:০৭ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৭:৩৫ অপরাহ্ন

mzamin

ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার মোটিভ এখনও অজানা। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডি খুনের মোটিভের কোনও কারণ এখন পর্যন্ত  জানাতে পারেনি বলে সূত্রে জানা গেছে। আর তাই আদালতে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তাতেও খুনের কারণ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। আরও একাধিক অভিযোগপত্র পেশ করার সম্ভবানা রয়েছে বলে জানা গেছে।

আনারের কন্যার সঙ্গে তার শরীরের হাড় ও মাংসের ডিএনএ পরীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্টে মিল পাওয়া গেছে। তবে চূড়ান্ত ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পাওয়া গেলেই পরবর্তী অভিযোগপত্র পেশ করা হবে পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে। আনারের দেহাংশ আনারের কিনা তা নিশ্চিত হতেই ডিএনএ পরীক্ষা জরুরি ছিল। সে অনুযায়ী কলকাতা পুলিশের সিআইডির অনুরোধে গত নভেম্বরেই আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস (ডরিন) কলকাতায় এসে নমুনা দিয়ে যান। সিআইডি সূত্রে খবর, তদন্ত কাজ এখনো চলছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাত আদালতে আনারের খুনের ঘটনায় জিহাদ হাওলাদার এবং ‘কসাই’ সিয়াম হোসেনকে আসামি করে প্রায় ১২০০ পৃষ্ঠার প্রথম অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। তবে অভিযোগপত্রে খুনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। বাংলাদেশ পুলিশও খুনের মোটিভ জানাতে পারেনি বলে জানা গেছে। এই খুনের ঘটনায় বাংলাদেশে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার করা হযেছে দুই জনকে।
তবে পুলিশের অনুসন্ধানে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের  ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ আনারের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীন। তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে আসল কারণ জানা যাবে বলে দুই দেশের পুলিশের ধারণা।

সর্বশেষ খবর, অভিযোগপত্র জমা পড়লেও এখনো চার্জ গঠন করা হয়নি। ফলে বিচার শুরুর প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে। 

বাংলাদেশের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে কলকাতার নিউটাউনের বিলাসবহুল সঞ্জীবা গার্ডেন আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে ২০২৪ সালের মে মাসে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। এর আগে ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে আসেন। কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে পরদিন বেরিয়ে নিখোঁজ হন। সেদিনই বিশ্বাসের মোবাইলে আনারের ফোন থেকে বার্তা পাঠিয়ে বলা হয়, জরুরি কাজে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। পরে আরও বার্তা পাঠিয়ে বলা হয়, তিনি ব্যস্ত রয়েছেন। তাকে যেন ফোন না করা হয়। ১৭ মে পর্যন্ত কোনও খবর না পেয়ে ১৮ মে আনার কন্যার অনুরোধে স্থানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন গোপাল বিশ্বাস। পুলিশের তরফে শুরু হয় অনুসন্ধান। ২২ মে সকালে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, নিউ টাউনের এক আবাসনে খুন হয়েছেন আনার। কিন্তু তার লাশের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।

কলকাতা পুলিশের সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করে তদন্তের দায়িত্ব নেয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নির্দেশে এই তদন্ত শুরু করেছিল বলে পুলিশ সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছিল। 

পরে জিহাদ হাওলাদার ও সিয়াম হোসেন নামে দুই বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করে জানা যায়, আনারকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর বাথরুমে নিয়ে গিয়ে পেশায় কসাই সিয়াম চামড়া ছাড়িয়ে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে মাংস ও হাড় আলাদা করে। এবং তা কয়েকটি প্লাস্টিকের ব্যাগে করে সুটকেসে ভরে নিকটবর্তী একটি খালে ফেলে দেয়। কিছু দেহাংশ ফেলা হয় কমোডের মাধ্যমে সেপটিক ট্যাঙ্কে। লাশ খণ্ডিত করে সরিয়ে ফেলার পর গোটা ফ্ল্যাটটি পানি ঢেলে পরিষ্কার করা হয় রক্তের দাগ মুছতে। 

বাংলাদেশেও আনার কন্যার দায়ের করা অপহরণ মামলা শুরু হয় একই সঙ্গে। এক পর্যায়ে বাংলাদেশে চারজনকে আনার খুনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই মামলায় ৬ মার্চের মধ্যে অভিযোগপত্র জমা দিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছে বলে বাংলাদেশের মিডিয়া সূত্রে জানা গিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডি তদন্ত করতে গিয়ে আটকদেড় বয়ান থেকে জানতে পারে যে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আনারকে হত্যা করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় বসে এই খুনের পরিকল্পনা করা হয় বলে পুলিশের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান। তবে আনার খুনের সঙ্গে জড়িতরা একজন বাদে সকলেই বাংলাদেশি নাগরিক। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আনারকে খুনের জন্য ৫ কোটি রুপি দিয়েছিলেন আনারের বন্ধু মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীন। আনার কলকাতায় আসার অনেক আগেই তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। আরও কয়েকজন এসেছিলেন বাংলাদেশ থেকে। তবে শাহীন কাঠমান্ডু হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেলেও অন্যরা খুন কার্যকর করার জন্য কলকাতাতেই ছিলেন।

একটি সূত্রমতে, আনারকে বাংলাদেশ থেকে টোপ দিয়ে কলকাতায় আনা হয়েছিল। একজন নারীকেও ব্যবহার করা হয়েছিল হানিট্র্যাপ হিসেবে।

এদিকে আনারকে হত্যার জন্য আটক দুইজনকে পরিকল্পনাকারীরা আনার হত্যার চার পাঁচ দিন আগেই নিউ মার্কেটের একটি হোটেলে রেখেছিল। ১৩ মে তারা সকলে সঞ্জীবা গার্ডেনের ফ্ল্যাটে হাজির হয়। সেদিনই আনারকে খুন করা হয়।

আটকদের জেরা করে পুলিশ একাধিকবার নিকটবর্তী খালে তল্লাশি চালিয়ে খুনের প্রায় এক মাসের মাথায় প্লাস্টিকের ব্যাগভর্তি দেহাংশ উদ্ধার করে। এছাড়া আবাসনের সেফটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার করা হয় বেশ কিছু পরিমাণ মাংস।

পুলিশ অনুসন্ধানে আরও জানতে পারে যে, আনার খুনের সময় আরও যারা ছিলেন তারা খুনের কয়েকদিন পরে ঢাকায় ফিরে যান। গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে  বাংলাদেশের এক গোয়েন্দা প্রতিনিধিদল কলকাতায় এসে আটকদের দুইজনকে জেরা করে। বাংলাদেশে আটকদের জেরা করে পাওয়া তথ্য জানানো হয় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডিকে।   

তবে খুনের মোটিভ নিয়ে সিআইডির তদন্তকারীরা এখনো ধন্দে। রাজনৈতিক রেশারেশি নাকি বেআইনি স্বর্ণ কারবারের হিস্যা নিয়ে বিরোধের পরিণতিতে এই নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড,  সেটাই ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের।

বাংলাদেশের মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, গোটা পরিকল্পনা কার্যকর করার দায়িত্বে ছিলেন শিমুল ভুঁইয়া। মুস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সল আলী খুনের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এবং তারা খুনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।  

মানবজমিনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, আনার খুনের ঘটনায় সম্পৃক্ততা থাকার কারণে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে বাবুকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। 

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলেই খুনের মোটিভ সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যেতে পারে।

ভারত থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

ভারত সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status