ভারত
ছাব্বিশের নির্বাচনেও বিশেষজ্ঞ সংস্থা আইপ্যাকে ভরসা মমতার
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা
(১ মাস আগে) ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার, ৯:২৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৭:১১ অপরাহ্ন

২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষজ্ঞ সংস্থা ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটির (আইপ্যাক) উপরই ভরসা রাখছেন। বৃহস্পতিবার দলের মহাসমাবেশের মঞ্চ থেকে মমতা দলের নেতাদের স্পষ্ট জানিয়েছেন, আইপ্যাকের বিরোধীতা করা যাবে না। তিনি জানিয়েছেন, এদের সঙ্গে কো-অপারেশন করতে হবে। এদের নামে উল্টোপাল্টা বলা বন্ধ করুন। তার কারণ, আপনাদের বুঝতে হবে কাজটা সবাইকে মিলে একসাথে করতে হবে।
অথচ এই মমতাই কদিন আগে দলের পরিষদীয় সভায় আইপ্যাক নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছিলেন, যা খুব ‘প্রশংসাসূচক’ ছিল না। তবে এই দশদিনে মমতার এই ভোলবদলে বিজেপির পেশাদার এজেন্সি নিয়ে মাঠে নেমে পড়ার পাল্টা হিসেবে দেখছেন তিনি। এ ব্যাপারে মমতার সঙ্গে আইপ্যাকের বর্তমান প্রধান প্রতীক জৈনের বৈঠকও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। আর দলের নেতা-কর্মীদের বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি প্রশান্ত কিশোর নয়, প্রতীক জৈনের আইপ্যাকের উপর ভরসা রেখে নির্বাচনে লড়বেন।
দলের মহাসম্মেলনের মঞ্চ থেকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আইপ্যাক এখন আর প্রশান্ত কিশোর (পিকে)-এর সংস্থা নয়। তাই তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না । বর্তমান আইপ্যাকের সঙ্গে আগের আইপ্যাকের পার্থক্য বোঝাতে তিনি বলেছেন, পিকের আইপ্যাক এটা নয়। ওরা অন্য জায়গায় কাজ করে। ও (পিকে বা প্রশান্ত কিশোর) একটা রাজনৈতিক দলও করেছে। এটা একটা নতুন টিম। সবাই জানে। মমতা এদিনের নির্দেশে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, আইপ্যাক-র বিরুদ্ধাচরণ তিনি চাইছেন না।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির অভূতপূর্ব সাফল্যের পরে তৃণমূলের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন ভারতের অন্যতম সফল ভোট কুশলী হিসেবে পরিচিত প্রশান্ত কিশোর (পিকে)। তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরের খবর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই পিকের সাফল্যকে নজর রেখেই তারই সংস্থা আইপ্যাককে নিয়ে আসেন। দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তাতে আপত্তি জানাননি। আইপ্যাকের কাজ চলতো অভিষেকের ক্যাম্পাস স্ট্রিটের অফিস থেকে। পিকের নেতৃত্বে আইপ্যাক দু’বছর কাজ করে পশ্চিমবঙ্গে। ২০২১ সালের বিধানসভাথ নির্বাচনে ২১৩টি আসন জিতে মমতা তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার নেপথ্যে আইপ্যাকের ভূমিকা অনস্বীকার্য ছিল।
সেবার নির্বাচনের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো সামাজিক প্রকল্পকে হাজির করানোর নেপথ্যে ছিলেন পিকেই। তবে সেই বিধানসভা নির্বাচনের পর ভোটকুশলীর কাজ থেকে অবসর নেন পিকে। ২০২২ সালে তার সঙ্গে সম্পর্কও ছিন্ন করে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে পিকের সহকারী প্রতীক জৈন এখন আইপ্যাকের কর্ণধার। সোজাসুজি বলতে গেলে আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পর্ক এখনও অটুট। তারা শাসকদল এবং রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে মিলেই কাজ করে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করেছিল আইপ্যাক। রাজ্যে বিজেপিকে অনেকটা পিছনে ফেলে তৃণমূল কংগ্রেস ২৯টি আসনে জয়ী হয়।
বস্তুত, মমতা বৃহস্পতিবারের সভায় বলেছেন, পাঁচটি আসনে কারচুপি করে তাদের হারিয়ে দেয়া হয়েছে। নইলে তৃণমূল লোকসভায় ৩৪টি আসন পেত। দলের শীর্ষ নেতারা মেনে নিয়েছেন, আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনেও বড় ভূমিকা নেবে প্রতীকের নেতৃত্বাধীন আইপ্যাক। কেননা দলনেত্রী জানিয়ে দিয়েছেন,কাজটা সবাইকে মিলে একসাথে করতে হবে।
তবে দলের মধ্যম স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে আইপ্যাক নিয়ে ক্ষোভ দলের কাজে নাক গলানোর জন্য। অনেক নেতার মতে, আইপ্যাক দলের মধ্যে দল তৈরি করে ফেলছে। কুণাল ঘোষের মতো নেতাও একদা বলেছিলেন, প্রতীক জৈনকে দলের সভাপতি বানিয়ে দেয়া হোক।
অভিযোগ, আইপ্যাকের কর্মীরাই সর্বত্র ঘুরে ঘুরে নিজেদের পছন্দমতো প্রতিনিধি তথা প্রার্থীর নাম সুপারিশ করে। দলের জেলা বা গ্রামীণ এলাকার নেতাদের কোনো কথাই শুনতে চায় না। এছাড়া টাকার বিনিময়ে প্রার্থী বাছাইয়ের অভিযোগ রয়েছে আইপ্যাকের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র প্রকাশ্যে বলেছেন, আমাদের পার্টিতে টাকা পয়সার লেনদেন ছিল না। এই একটা এজেন্সি পার্টিতে ঢুকল। তারা এ সব শুরু করল। দলের আরেক প্রভাবশালী নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও অভিযোগ করেছেন, আইপ্যাকের লোকেরা টাকার বিনিময়ে লোকাল এরিয়ায় গিয়ে যাকে-তাকে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে দিচ্ছেন। এই সব ক্ষোভের উদগীরণ সত্ত্বেও দলনেত্রী সকলের মুখ বন্ধ করিয়ে আইপ্যাকে ভরসার কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।