অর্থ-বাণিজ্য
নতুন ১০টি দেশে ওষুধ রপ্তানির উদ্যোগ ওয়ান ফার্মার
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(২ দিন আগে) ১৭ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৮:৪৮ অপরাহ্ন

বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রপ্তানি দিন দিন বাড়ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে এই রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে চেষ্টা চালাচ্ছে ওয়ান ফার্মা লিমিটেড। আগামী তিন বছরে আফ্রিকাসহ নতুন ১০টি দেশে ওষুধ রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে কোম্পানিটি। ইতিমধ্যেই ওষুধ রপ্তানি বাড়াতে ও ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ বাড়ানোর পরকল্পনা নিয়েছে তারা। কোম্পানিটি বর্তমানে তিনটি দেশে রপ্তানি করছে। আরও কয়েকটি দেশে রপ্তানি করতে প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে কৃষি পণ্য রপ্তানি করতে চান তারা। সম্প্রতি বগুড়ার বিসিক শিল্পনগরীতে কারখানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ওয়ান ফার্মা ও এগ্রিকেয়ারের চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার।
ওয়ান ফার্মার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানির বিকল্প ওষুধ বাজারে দিতে সক্ষম হয়েছি। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। আমদানি না করে আমাদের কোম্পানি দেশে ওষুধ তৈরি করে কম দামে দিতে পারছি। আগামী দিনে এমন ওষুধ উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। তিনি আরও বলেন, আমরা আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি স্থাপন করে ভালো মানের ওষুধ তৈরি করে এখন বাজারে ছাড়ছি। আগামী দিনগুলোতে ভালো কোম্পানির ওষুধের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কম দামে বাজারে ওষুধ দিতে চাই।
চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান ক্যান্সারের বায়োটেক ওষুধ তৈরির প্লান্ট স্থাপন করছে। কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। আরও যন্ত্রপাতি আসছে। এগুলো স্থাপন করে দেশে তৈরি ক্যান্সারের ওষুধ বাজারে দেয়া সম্ভব হবে। ক্যান্সারের ওষুধ এখন বেশ ব্যয়বহুল। আমরা উৎপাদন করলে এই ওষুধ গরিব মানুষ কম দামে পেলে তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এই ওষুধ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে ইতিমধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আরও কিছু চুক্তি সই করার পরিকল্পনা আছে। দেশের বাজারের ৯৮ ভাগ ওষুধের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের প্রায় দেড়শটি দেশে রপ্তানি হচ্চে বাংলাদেশের ওষুধ।
জানা গেছে, ওষুধ রপ্তানি বাড়াতে কোম্পানিটে ব্যবসা সম্প্রসারণে যাচ্ছে। এ জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ বাড়ানোর পরকল্পনা করেছে। বিশেষ করে ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদনে এর বড় অংশ বিনিয়োগ হচ্ছে। ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদন শুরু হলে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি রপ্তানিতে বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে। ২০১৫ সালে এই ওষুধ কোম্পানি বগুড়ার বিসিক শিল্পনগরীতে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এই ওষুধ কারখানায় ২০০ শ্রমিক কাজ করছে। শতাধিক জেনেরিক ওষুধ এখন তৈরি করছে কোম্পানিটি।
ওয়ান ফার্মার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, আলজেরিয়া তাদের কোম্পানির ওষুধ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশটির সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এখন প্রক্রিয়াগত বিষয়গুলো চলছে। এটি শেষ হলে রপ্তানি সম্ভব হবে। এর বাইরেও আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অনুন্ননত দেশগুলোতে ওষুধ রপ্তানির বাজার বাড়ানো যাবে। দেশের বিভিন্ন কোম্পানি এখন ওষুধ রপ্তানির বাজার ধরছে। আমাদের কোম্পানি ১০০টি দেশে রপ্তানির টার্গেট করে কাজ করছে। আগামী ২ থেকে ৩ বছরে ১০ দেশে রপ্তানি করতে চাই। বর্তমানে আফগানিস্তান ও মিয়ানমারে রপ্তানি হচ্ছে। শ্রীলঙ্কা থেকে রপ্তানি আদেশ দিয়েছে। এই তিন দেশে এখন রপ্তানি হচ্ছে। ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদন শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২৬৯টিরও বেশি ছোট-বড় ওষুধ কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৪টি কারখানা নিয়মিতভাবে ওষুধ উৎপাদন করে যাচ্ছে। এসব কারখানায় প্রায় ৫ হাজার ব্র্যান্ডের ৮ হাজারেরও বেশি ওষুধ উৎপাদন করা হচ্ছে।
কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সাল থেকে ওষুধ রপ্তানি শুরু করে ওয়ান ফার্মা। ২০২৪ সালে ২ মিলিয়ন ডলারের ওষুধ আফগানিস্তানে রপ্তানি করেছে। চলতি বছরে ৩ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার আছে। এছাড়া মিয়ানমারে ৫০ হাজার ডলারের রপ্তানি হয়েছে। এই ওষুধ কোম্পানিটির বার্ষিক টার্নওভার ১৫০ থেকে ১৮০ কোটি টাকা। গত বছরে এই কোম্পানির প্রবৃদ্ধি ৬১ শতাংশ ছিল বলে দাবি করেছেন। কোম্পানিটি স্টরয়েড ও বায়োটেক ওষুধ তৈরি করছে।
ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওয়ান ফার্মা। এই গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার। তিনি বলেন, দেশে অনেক দিন ধরেই নাগরায়ন বাড়ছে। এই কারণে ফসল উৎপাদন বাড়ানো পরিকল্পনা থেকে ২০০২ সালে যাত্রা শুরু করে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার। তাদের এই কোম্পানি তখন থেকেই উচ্চফলনশীল জাতের দেশি বীজ বাজারে সরবরাহ করে আসছে। এই ফসল সংরক্ষণে কীটনাশক উৎপাদন করে বাজারে ছাড়াছে তাদের প্রতিষ্ঠান।
কোম্পানিটি এখন ধান, ভূট্টা ও সবজির উচ্চফলনশীল বীজ উৎপাদন করে বাজারে ছাড়ছে। শীর্ষস্থানীয় বীজ উৎপাদনকারী কোম্পানির বাজারের বড় অংশীদার। কোম্পানির হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট আবুল হাসান বলেন, আমরা প্রথম স্পেলেন্ডার ব্র্যান্ডের ওয়াটার ডিসপোজাবল গ্রানুলা কীটনাশক উৎপাদন করে বাজারে ছাড়ছি। এর ফলে অনেক নিরাপদে এই কীটনাশক ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে। কারণ এটি পাউডার ফ্রি হওয়ায় ব্যবহারে কোনো ক্ষতি নেই।