খেলা
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শান্তদের চ্যালেঞ্জ যেখানে
স্পোর্টস রিপোর্টার
১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার
সাকিব আল হাসান নেই। তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ টেস্ট খেলা ছেড়েছেন। জাতীয় দলে বেশ কিছুদিন থেকেই নতুন মুখের আনাগোনা। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দলের উন্নতি হলেও টেস্টে এখনো যেন পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। শুধুমাত্র নিজেদের দেশের মাটিতে সাফল্য এসেছে। এর মধ্যে সবেচেয়ে বেশি অর্জন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। টেস্টে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ১৮ বার। এর মধ্যে টাইগাররা জিতেছে ৮ ম্যাচে আর ড্র তিনটিতে। এর মধ্যে দেশের মাটিতেই ৬ ম্যাচে জয়। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশ দলের যে অবস্থা তাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ টপ অর্ডারে। বিশেষ করে ওপেনিং জুটি নিয়ে টাইগারদের হতাশার শেষ নেই। গেল দুই বছরে তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েসের বিকল্প হিসেবে যারা এসেছেন তারা হতাশই করেছেন। এজাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম অনিক, লিটন কুমার দাসরা গেল তিন (২০২২-২০২৫) বছরে টেস্ট দলে ওপেন করতে এসে ব্যর্থ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫ ইনিংস খেলা জয় ৫০৩ রান করেছেন কোনো সেঞ্চুরি ছাড়া। তার চেয়ে অবশ্য এক ইনিংস কম ব্যাট করে জাকির করেছেন ১ সেঞ্চুরি ও ৪ ফিফটিতে ৫৮৪ রান। এ সময়ে সাদমান ৭ ইনিংসে করেছেন কোনো সেঞ্চুরি ছাড়া ৩৬৪ রান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে এই তিনজনই ওপেনিংয়ে ভরসা। আর তাদের শুরুটাই হতে পারে সফরকারিদের বিপক্ষে দলের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। জাতীয় দলের সাবেক নির্বাচক হান্নান সরকার বলেন, ‘ওদের আরো কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। ওপেনিংটা বরাবরই আমাদের টেস্ট দলের চিন্তা।’ শুধু কি তাই সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচেও আছে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় টাইগারদের বড় হারের স্মৃতি।
রোববার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট শুরু। ২০২০-এ দেশের মাটিতে টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ দল। দারুণ এক জয় দিয়ে সুখ স্মৃতি আছে টাইগারদের। প্রতিপক্ষকে তারা ইনিংস ও ১০৬ রানে হারিয়েছিল। প্রথম ইনিংস খেলতে নেমে জিম্বাবুয়ে ২৬৫ রানে অল আউট হয়। জবাব দিতে সেবারও দলের ওপেনিংয়ে ব্যর্থতার পরও মুশফিকুর রহীমের ডাবল সেঞ্চুরি, সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভের সেঞ্চুরিতে ৫৬০ রান করে বাংলাদেশ। লিড নেয় ২৯৫ রানের। তবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বড় ব্যাবধানেই হারে সফরকারীরা। এরপর জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়েও এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজে টাইগাররা হারারেতে জয় তুলে নেয়। কিন্তু দিন যতই গড়িয়েছে টাইগাররাও দুর্বল হয়েছে দলের অভিজ্ঞদের হারিয়ে। বাংলাদেশ দল সবশেষ টেস্ট খেলেছে গেলবছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। দুই ম্যাচের সিরিজে জয় নিয়ে দেশে ফিরেছে। তবে তার আগে টানা ৪ ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। এর মধ্যে দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি ও ভারত সফরে দুটি ম্যাচে হার দেখে টাইগাররা। শেষ পাঁচ ম্যাচে হারের অন্যতম কারণ ব্যাটিং ব্যর্থতা। বিশেষ করে দেশের মাটিতে একটিতে পরাজিত হয় ৭ উইকেটে। আরেকটিতে ইনিংস ও ২৭৩ রানে। সব মিলিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও চিন্তার নাম ব্যাটিং। প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগে দলের নেই কোনো টেস্ট প্রস্তুতিও।
১৩ই এপ্রিল থেকে সিলেটে টেস্ট ক্যাম্প শুরু করেছে টাইগাররা। মূলত মাঠে নামার আগে ক্যাম্পের প্রস্তুতি হবে টাইগারদের ভরসা। কিন্তু গতকাল থেকে সিলেটে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ দল মাঠে নামার আগে বেশ কিছুক্ষণ বৃষ্টির কারণে অনুশীলন করতে পারেনি। বলতে গেলে গেল দুই দিন শুধু ব্যাটিং ও বোলিং অনুশীলন করেছে দল। এত স্বল্প প্রস্তুতি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ গেল কয়েক মাস টাইগাররা খেলেছে সাদা বলে টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে ফরম্যাটে। সবশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও খেলেছে ওয়ানডে ফরম্যাটে। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলে যোগ দেয়ার আগে ৫০ ওভারের ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে খেলেছেন টাইগাররা। বলতে গেলে চার দিনের ফরম্যাটের জন্য যে প্রস্তুতির প্রয়োজন সেই ঘাটতি থেকেই গেছে।
সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটি হবে টাইগারদের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ। ২০১৮ এর নভেম্বরে এই মাঠেই সফরকারীদের বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেছিল ১৫১ রানের বড় ব্যাবধানে। শুধু কি তাই সিলেট মাঠে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের দুই ইনিংসেই ব্যাটিং ব্যর্থতার লজ্জাও কম নয়। প্রথম ইনিংসে ১৪৩ ও দ্বিতীয়টিতে ১৬৯ রানে অল আউট হয়েছিল স্বাগতিকরা।