অনলাইন
সিন্ধু খাল প্রকল্পের প্রতিবাদে পাকিস্তানে বিক্ষোভ, ব্যাহত হচ্ছে পণ্য পরিবহন
মানবজমিন ডিজিটাল
(৫ ঘন্টা আগে) ২৯ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৪:২৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৮:১২ অপরাহ্ন
সিন্ধু নদে খাল তৈরির পরিকল্পনা করেছে পাকিস্তান সরকার। প্রতিবাদে গত ১০ দিন ধরে সিন্ধ প্রদেশের জাতীয় সড়ক অবরোধ চলছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছে, সিন্ধুর কিছু অংশে বিক্ষোভকারীরা জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ করে আন্তঃদেশীয় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় কারখানায় কাঁচামাল পৌঁছাতে পারছে না। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন।
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার প্রচেষ্টা রোববারও ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষও গুরুতর যানজটের আশঙ্কা করছে। যদিও সিন্ধুর ফেডারেল সরকার এবং পিপিপি সরকার প্রকল্পটি স্থগিত করতে সম্মত হয়েছে। ন্যাশনালিস্ট পার্টি, আইনজীবী এবং অন্যান্য নাগরিক সমাজের গোষ্ঠীগুলো এই আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না। সরকার স্থগিতাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
ডনের সুক্কুরের সংবাদদাতা জানিয়েছে, কান্ধকোট, কাশমোর, ঘোটকি, সুক্কুর ও খাইরপুর এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় হাজার হাজার পণ্যবাহী ভারী ট্রাক দীর্ঘ লাইনে আটকে আছে। প্রাদেশিক সরকার বিক্ষোভকারীদের রাস্তা খালি করার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও উৎপাদনকারী এবং পরিবহনকারীরা অব্যাহত অচলাবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন।
গত রোববার প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলী শাহের সঙ্গে দেখা করেন। যেখানে বিতর্কিত প্রকল্পগুলোর বিষয়টি এবং এর পরিণতি নিয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠকের সঙ্গে সম্পর্কিত সূত্রগুলো জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী কিছু রাজনৈতিক দলের দ্বারা এই বিষয়টিকে ‘কায়েমি স্বার্থে’ কাজে লাগানোর প্রচেষ্টার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রদেশের বিভিন্ন অংশে মূলত ন্যাশনালিস্ট পার্টিগুলোর দ্বারা পরিচালিত চলমান বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করেছেন। সিন্ধু সরকার জনসাধারণের উদ্বেগ মোকাবিলা এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সে সম্পর্কেও মুখ্যমন্ত্রী প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেন।
অবরোধের প্রতিবাদে অল পাকিস্তান গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যালায়েন্স সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির বাইরে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। করাচি পোর্ট ট্রাস্টের (কেপিটি) একজন কর্মকর্তা ডনকে বলেন, সিন্ধুতে রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে রপ্তানি পণ্যবাহী জাহাজ আসছে না। অন্যদিকে আমদানিকৃত পণ্যবাহী জাহাজ দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং বন্দর থেকে বের হচ্ছে না। পরিবহনকারীরা বলছেন, উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের উদ্বেগের পাশাপাশি তাদের চালক ও সাহায্যকারীরাও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়েছেন।
অল পাকিস্তান গুডস ট্রান্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নিসার জাফরিবলেন, ‘প্রায় ৩০,০০০ ট্রাক ও তেল ট্যাঙ্কারের চলাচল ব্যাহত হয়েছে। শুধু তাই নয় , প্রায় ৯০,০০০-১০০,০০০ চালক এবং তাদের সহকারীরা ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে মহাসড়কে তাদের যানবাহনের সঙ্গে আটকা পড়ে আছেন। তারা খাদ্য ও পানির সংকটেরও সম্মুখীন হচ্ছেন।
পরিবহনকারীরা আরও অভিযোগ করেছেন, বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনের ক্ষতি করেছে। এর জেরে ১০০টিরও বেশি কোরবানির পশু ইতিমধ্যেই মারা গেছে। জাফরি বলেন, সিন্ধু প্রদেশের পরিবহনমন্ত্রী শারজিল ইনাম মেমনের কাছ থেকে তিনি ফোন পেয়েছেন। তিনি তাকে আশ্বাস দিয়েছেন শিগগিরই রাস্তা পরিষ্কার করা হবে।
রোববার এক বিবৃতিতে মেমন সকল রাজনৈতিক দল এবং আইনজীবী সম্প্রদায়ের প্রতি পণ্য পরিবহনের সুষ্ঠু প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য রাস্তাগুলো পুনরায় চালু করার আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে কেউ আর কোনও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন না হন। তিনি বলেন, ‘রাস্তা বন্ধের কারণে জনসাধারণ, পশুপালন, আমদানি ও রপ্তানি খাত, কৃষক ও দরিদ্র মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত রাখতে হয়, তাহলে রাস্তাঘাট খুলে দেয়া উচিত, যাতে যান চলাচল ব্যাহত না হয়। ওভারসিজ ইনভেস্টরস চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, অয়েল কোম্পানিজ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল এবং সার ম্যানুফ্যাকচারার্স অব পাকিস্তান অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা সকলেই সতর্ক করে বলেছেন, লজিস্টিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত একটি গুরুতর সংকট তৈরি করছে।
সূত্র: ডন