বিশ্বজমিন
জাতিসংঘের সতর্কবার্তা গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা
মানবজমিন ডেস্ক
(৮ ঘন্টা আগে) ১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৭:১৬ অপরাহ্ন

গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে। জাতিসংঘ-সমর্থিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইসরাইলি অবরোধে বিপর্যস্ত গাজায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বর্তমানে অনাহারের ঝুঁকিতে। এ বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ অঞ্চলটি পূর্ণাঙ্গ দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি। এই তথ্য উঠে এসেছে ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনে (আইপিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, গাজার মোট জনসংখ্যা ২৩ লাখের মধ্যে প্রায় সবাই এখন চরম খাদ্যসংকটে। এর মধ্যে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ মানুষ ‘দুর্ভিক্ষ-সমতুল্য’ বিপর্যয়ের পর্যায়ে রয়েছে- যা খাদ্য নিরাপত্তার সর্বোচ্চ সতর্ক স্তর। অক্টোবর মাসের তুলনায় পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। তখন এই ‘দুর্ভিক্ষ’ স্তরে ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ। গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের অবরোধ মার্চের শুরু থেকে কঠোরভাবে জারি রয়েছে। এই সময়ে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরাইল আবার সামরিক অভিযান শুরু করে।
আইপিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সামরিক পরিকল্পনা এবং মানবিক সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার কারণে ত্রাণ ও প্রয়োজনীয় পণ্য গাজায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে ১১ই মে থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুর্ভিক্ষের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, প্রাণহানি, অপুষ্টি ও দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে এখনই জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার। কারণ, দুর্ভিক্ষ ঘোষণার জন্য যে শর্তগুলো পূরণ হওয়া দরকার- যেমন ২০ শতাংশ জনগণের কাছে খাবার না থাকা, শিশুদের মধ্যে মারাত্মক অপুষ্টি এবং অপুষ্টিজনিত মৃত্যুহার বৃদ্ধি- তা এখন অনেকটাই পূরণ হওয়ার পথে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়কালে ৬ থেকে ৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৭১ হাজার জন অপুষ্টিতে ভুগবে। এর মধ্যে ১৪,১০০ জনের অবস্থা হবে চরম সংকটজনক। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উপপরিচালক বেথ বেচডল বলেন, কয়েক মাসে গাজায় পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে খারাপ হয়েছে। মার্চ থেকে কঠোর অবরোধ শুরু হওয়ার পর মানবিক এবং এমনকি বাণিজ্যিক পণ্য সরবরাহও কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ইসরাইল সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার দাবি করেন, আমরা যতটা সম্ভব বেশি ত্রাণ ঢোকানোর চেষ্টা করেছি, তাই দুর্ভিক্ষ ঘটেনি। তবে তিনি হামাসকে দায়ী করেছেন সাহায্যপণ্য চুরির জন্য। হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ইসরাইলই ইচ্ছাকৃতভাবে ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে’ ব্যবহার করছে। আইপিসি রিপোর্টটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, গাজা এখন মানবিক বিপর্যয়ের চরম প্রান্তে। অবরোধ, সংঘাত, এবং ত্রাণ বিতরণের ব্যর্থতা মিলিয়ে একটি গোটা জনগোষ্ঠী আজ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। বিশ্ব সম্প্রদায় যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এই সংকট আরও গভীরতর হবে এবং হাজার হাজার প্রাণের ঝুঁকি দেখা দেবে।