ঢাকা, ২৫ মে ২০২৫, রবিবার, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

অ্যালার্জিজনিত হাইপারসেনসিটিভিটি রোগ

ডা. দিদারুল আহসান
২০ মে ২০২৫, মঙ্গলবার

হাইপারসেনসিটিভিটি বা অতিসংবেদনশীলতা শরীরের অ্যালার্জিজনিত একটি চর্ম রোগ। তবে জটিল না। বর্তমানে বাংলাদেশে এই রোগটির ব্যাপক বিস্তার লক্ষ্য করা যায়। আমাদের কাছেও  চিকিৎসা নিতে এ ধরনের বহু রোগী এসে থাকেন। নির্দিষ্ট কোনো বস্তুর সংস্পর্শে এলে এ ধরনের রোগীর শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দেয়, হাঁচি-কাশি বা চুলকানি, খুসখুসে কাশির মতো সাধারণ উপসর্গ থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্টের মতো মারাত্মক কিছুও হতে পারে এ থেকে। খাদ্যবস্তুতে অ্যালার্জি থাকলে পেটব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তীব্রতা গুরুতর না হলেও কখনও কখনও কিডনি ও লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের জটিলতাও দেখা দিতে পারে। কখনও রোগী শকে চলে যায় বা অচেতন হয়ে পড়ে, এমনকি মারাত্মক ধরনের সংবেদনশীলতায় রোগীর মৃত্যুঝুঁকিও থাকে। তাই অ্যালার্জিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই।
কারণ
ব্যক্তিভেদে অ্যালার্জির কারণসমুহ আলাদা। দেখা যায় কারও ধুলাবালিতে অ্যালার্জি, কারও ফুলের রেণুতে, কারও উলের সংস্পর্শে, কারও আবার নির্দিষ্ট কোনো খাদ্যজনিত কারণে অ্যালার্জি হয়ে থাকে। সুগন্ধী কিংবা প্রাণীর লোমেও কারও কারও অ্যালার্জি থাকে। আবার কার্পেট, শতরঞ্জিতেও অ্যালার্জি থাকে অনেকের। কার কীসে অ্যালার্জি তা আগে জানা গুরুত্বপূর্র্ণ।  অনেক রোগী নিজেই অনেক ক্ষেত্রে বুঝতে পারেন কীসে তার অ্যালার্জি। তবে নতুন নতুন বস্তুর প্রতি অ্যালার্জি বা অতিসংবেদনশীলতা সৃষ্টি হওয়ার প্রবণতাও থাকে। তাই ভালো থাকার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। একজন ব্যক্তির ঠিক কোন কোন বস্তুতে অ্যালার্জি রয়েছে, পরীক্ষার মাধ্যমে তা নির্ণয় করার সুযোগ রয়েছে।
চিকিৎসা
অ্যালার্জির মূল চিকিৎসাই হলো এর মূল কারণকে এড়িয়ে চলা। কার্পেটে অ্যালার্জি থাকলে ঘরের কার্পেট সরিয়ে ফেলতে হবে। ধুলাবালুতে অ্যালার্জি থাকলে ঘর ঝাড়পোছ করার সময় দূরে থাকা। মানে যার যেটিতে অ্যালার্জি, সেটি এড়িয়ে চলতে হবে। 
নিয়ন্ত্রণে করণীয়
অ্যালার্জির চিকিৎসায় মূলত দুই ধরনের ওষুধ দেয়া হয়। কিছু ওষুধ রয়েছে, যেগুলো অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে। এগুলো দীর্ঘ মেয়াদে সেবনের পরামর্শ দেয়া হয়। এগুলোর তেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না। আর কিছু ওষুধ রয়েছে, যেগুলো অ্যালার্জির উপসর্গকে প্রশমন করে (অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ)। এগুলো আবার দীর্ঘ মেয়াদে সেবন করা উচিত নয়। এগুলোর কারণে ওজন বৃদ্ধি, রুচি বৃদ্ধি, মুখের শুষ্কতা হতে পারে। কোনোটির কারণে রক্তচাপ বাড়ে, কোনোটির কারণে বাড়ে রক্তের চর্বি। দীর্ঘদিন সেবনের ফলে রোগীর এক ধরনের নির্ভরশীলতা তৈরি হয়ে যায়, ওষুধ সেবন না করলে রোগী স্বস্তি পান না। তা ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ সেবন করলে দু’টি ওষুধের ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে কি-না, সেটিও খেয়াল রাখার বিষয়। তাই প্রয়োজন হলে অর্থাৎ অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দিলেই কেবল এসব ওষুধ খাওয়া উচিত, তাও চিকিৎসকের পরামর্শে।
কিছু কিছু ওষুধ আছে যা সেবনে রোগীর অ্যালার্জির প্রবণতা বাড়ে যেমন- ব্যথানাশক জাতীয় ওষুধ। তাই অন্য কোনো রোগের কারণে চিকিৎসা নিতে হলেও চিকিৎসককে আপনার অ্যালার্জির ইতিহাস জানানো জরুরি।
অনেক সময় তীব্র উপসর্গ উপশমে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়, যা অ্যালার্জির উপসর্গ খুব দ্রুত দূর করতে পারে। কিন্তু স্টেরয়েড দীর্ঘদিন সেবন করা খুবই বিপজ্জনক। অনেক রোগী অ্যালার্জি বাড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজে নিজে স্টেরয়েড খেয়ে ফেলেন কারণ তিনি জানেন এটি ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ। কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোনো ওষুধ খাবেন না। প্রেসক্রিপশনে কোনো ওষুধ কত দিন চলবে তা ভালো করে অনুসরণ করুন। আগে খেয়েছেন, উপকার পেয়েছেন বলে বারবার খাবেন না।
অ্যালার্জি কখনও পুরোপুরি সেরে যাবে না কিন্তু একে নিয়ন্ত্রণে রেখে ভালো থাকা যায়।
লেখক: চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট  গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৩২, গ্রীন রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা। রুম নম্বর-৪৩২, সাক্ষাতের সময়  বিকাল ৪-৬টা পিএম।
সেল-০১৭১৫-৬১৬২০০, ০১৭৩৩-৭১৭৮৯৪।

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status