শেষের পাতা
পুঁজিবাজার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৫ মে ২০২৫, রবিবার
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করেছিল। পুঁজিবাজার থেকে ২০১০-১১ সালে ২০ হাজার কোটি টাকা বের করে নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। তখন যেভাবে আইন দ্বারা কেস ফাইল করা দরকার ছিল সেটা হয়নি, যা করা হয়েছে সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।
শনিবার ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত এক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনায় পুঁজিবাজার: দর্শন ও অনুশীলন’ শীর্ষক এই সংলাপ ডিএসই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। আর প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন বিএসইসি কমিশনার মো. মোহসিন চৌধুরী, জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য মো. মোবারক হোসাইন, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, আইসিএমএবি’র সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে ড. দেবপ্রিয় বলেন, শাস্তি যদি না হয় অন্যায় ও দুর্নীতি রোধ করা যায় না। আমরা দেখেছি ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শেয়ারবাজারে অনিয়ম হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে পথে বসিয়ে দেয়া হয়। সে সময় বাজার থেকে বিপুল অর্থ বের করে নেয়া হয়। তার কোনো বিচার হয়নি। তিনি বলেন, বিচার না হওয়ার কারণে আমরা ২০১০ সালে আবারো একই ধরনের চিত্র দেখেছি। রাজনৈতিকভাবে সিন্ডিকেট করে পুঁজিবাজার থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা বের করে নেয়া হয়। এরমধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এই ঘটনায়ও কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যারা অনিয়ম করেছেন তাদের কেউ কেউ জেলে আছেন। তবে তারা জেলে আছেন অন্য ঘটনায়। পুঁজিবাজারের অনিয়মের কারণে এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
দেবপ্রিয় বলেন, অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারে সঞ্চয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশ্বে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার অন্যান্য খাতের থেকে অনেক বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, সঞ্চয় ও দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সেই ভূমিকা রাখতে পারছে না। এর কারণ পুঁজিবাজারে যার যে ভূমিকা, তারা সেই ভূমিকা পালন করেনি।
সিপিডি’র এই বিশেষ ফেলো বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজার পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে তারা কি নিজের সুশাসন নিশ্চিত করতে পারছে? আমার দৃষ্টিতে পারছে না। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার থেকে চালাক। সুতরাং আপনি যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থায় আরও বেশি চালাক ব্যক্তিকে দায়িত্ব না দেন, তাহলে ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন না।
অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারে অবস্থা আরও দুর্বল হচ্ছে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, শেয়ারবাজারে এই মুহূর্তে যে সমস্যা আছে এটা বৃহত্তর কাঠামোতে যদি আলোচনা না করি, তাহলে হবে না। আপনি যদি আলোচনা ছাড়া ঠিক সিদ্ধান্ত নেন, সেটাও ঠিক হবে না।
শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন আইপিও বন্ধ। এ ছাড়া এরই মধ্যে সূচকে অনেক পতনের মাধ্যমে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এ সমস্যা টোটকা ওষুধ দিয়ে সমাধান হবে না। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বড় উদ্যোগ নিয়ে সমাধান করতে হবে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে পুঁজিবাজার ক্যাসিনোতে পরিণত হয়েছিল। এখানে একটি গ্রুপ এসে খেলাধুলা করে চলে যায়। বিগত ১৫ বছর এভাবেই চলেছে। বাজারের গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। লুটপাট করতে করতে এমন অবস্থা হয়েছে যে, আর লুটপাটের জায়গা নেই। শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে ঠেকেছে। বাজারে তারল্য বাড়াতে হবে। বিশ্ববাজার থেকে তারল্য আনতে হবে।
দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। এই বিনিয়োগের উৎস হবে পুঁজিবাজার। ভবিষ্যতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হলে পুঁজিবাজারকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।