শেষের পাতা
তিন বিষয়ে রোডম্যাপ চায় এনসিপি
স্টাফ রিপোর্টার
২৫ মে ২০২৫, রবিবার
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন তিনটি বিষয়ে রোডম্যাপ একসঙ্গে হওয়া উচিত বলে মনে করছে জুলাই পরবর্তী শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এছাড়াও সরকারে থাকা দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে এনসিপি’র কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।
গতকাল দুপুরে বাংলামোটরে এনসিপি’র অস্থায়ী কার্যালয়ে সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন- এই তিনটির রোডম্যাপ একসঙ্গে প্রকাশ করা উচিত। সবপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সুষ্ঠু সমাধানের দিকে যাওয়া। পাশাপাশি, রাজনৈতিক দলগুলো এবং আমাদের জনগণের প্রত্যেককে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তাহলে জনমনে এবং সব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি তৈরি হবে, আস্থার জায়গায় তৈরি হবে। আওয়ামী লীগ আমলের নির্বাচন আদালতের মাধ্যমে এক ধরনের বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা না করে স্থানীয় নির্বাচন দ্রুত দেয়া হোক। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে জনগণের দুর্ভোগ দূর হবে। আমরা মনে করছি, নির্বাচন কমিশন আস্থার জায়গা হারিয়েছে। আস্থার জায়গা ফিরিয়ে না আনলে এই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়া সম্ভব না।
গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা ছিল, প্রত্যাশা আছে। গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বিচার, সংস্কার এবং মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিতের জন্য শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুধু কি সরকার? নাকি গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের সরকার?
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটা গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে তৈরি হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষার, সেটা বাস্তবায়নের একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে। শুধু নির্বাচন আয়োজন নয়, বরং জুলাই গণহত্যাসহ বিগত আমলের অপরাধগুলোর বিচার এবং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে সরকারকে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব থেকেই রাজনৈতিকভাবে সবপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সমাধানের দিকে যাবেন। জুলাই ঘোষণাপত্রের যে নির্ধারিত সময় দেয়া হয়েছে, সেই সময় কিন্তু আগাচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদানের ব্যবস্থা করা উচিত।
দুই ছাত্র উপদেষ্টার বিষয় উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, তারা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে আছেন। আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। তারা রাজনীতি বা নির্বাচন করতে চাইলে সরকারে থেকে তা পারবে না। সরকার থেকে বের হয়ে তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদেরকে এনসিপি’র সঙ্গে সংযুক্ত করে অপপ্রচার ও হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই দু’জনের সরকারে থাকা প্রসঙ্গে নাহিদ আরও বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে তারা সরকারে রয়েছেন। শহীদ পরিবার এবং আহতদের পুনর্বাসন, অপরাধীদের বিচার এবং সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাগুলো তদারকি করার জন্য তারা অন্তর্বর্তী সরকারে গিয়েছিলেন। ফলে তারা সরকার থেকে কখন বের হবেন বা আদৌ বের হবেন কি না, সেটা তাদেরই সিদ্ধান্ত।
সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে যে পরিবর্তনের আশা ছিল, সেটি ব্যর্থ হওয়ার লক্ষণ এখন স্পষ্ট। নির্বাচন, বিচার ব্যবস্থা ও সংস্কারসহ সবকিছুতেই আজ ধোঁয়াশা।
সরকারের করিডোর সংক্রান্ত বিষয় জানিয়ে তিনি বলেন, এই ইস্যুতে আমরা সরকারের কাছ থেকে দুইরকম বক্তব্য পেয়েছি। পরবর্তীতে তারা এটিকে ত্রাণ দেয়ার উদ্দেশ্যে বললেও, আমরা মনে করি এটি একটি জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনসিপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রমুখ।