ঢাকা, ৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৫ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা আজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পদে পদে

স্টাফ রিপোর্টার
৩০ মে ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আর সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ে জিয়াউর রহমান শাহাদতবরণ করেছেন, সেই গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা আজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রতি পদে পদে। খুব শিগগিরই আমরা বাংলাদেশকে গণতন্ত্রে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত দেখতে পাবো এই হোক জিয়ার শাহাদতবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার। বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় গুলশানের বাসা থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন বিএনপি চেয়ারপারসন। সভায় জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীতে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

খালেদা জিয়া তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, প্রতিবছর মে মাসের এই দিনটি আমাদের পরিবারে আসে এক বেদনাবিধুর স্মৃতি নিয়ে। এইদিনে শুধু আমাদের পরিবার নয় বরং সমগ্র দেশই হয়ে পড়েছিল বেদনার্থ ও অভিভাবকহীন। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক অবিচ্ছেদ নাম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। যে চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা করে তিনি এদেশের সঙ্গে তার নাম অবিচ্ছেদ করেছিলেন। সেই চট্টগ্রামেই এক সফল, সৎ, দূরদর্শী ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। 

তিনি বলেন, এদেশে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা স্বনির্ভরতা ও উন্নয়ন এবং নিজস্ব জাতীয়তাবাদ সৃষ্টির অনন্য রূপকার শহীদ জিয়া। যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আর সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ে তিনি শাহাদতবরণ করেছেন, সেই গণতন্ত্র নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা আজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রতি পদে পদে। খুব শিগগিরই আমরা বাংলাদেশকে গণতন্ত্রে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত দেখতে পাবো। এই হোক জিয়ার শাহাদতবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার। এই লক্ষ্যে সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে চলার জন্য আমি বিএনপি’র সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। 

তিনি বলেন, মনে রাখবেন, সবার জন্য গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধানের যে রাজনীতি শহীদ জিয়া রেখে গেছেন, তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। আমরা তার বিদায়ী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

রাজনীতিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে: তারেক রহমান
সভায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি প্রধান বক্তা হিসেবে যুক্ত হন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, হাজারো শহীদের রক্তস্নাত বাংলাদেশে দীর্ঘ দেড় দশকে ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন হয়েছে। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে বর্তমানে। গণ-অভ্যুত্থানের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেয়া এই সরকার হয়তো বৈধ। তবে এই সরকার কোনো ভাবেই কিন্তু জবাবদিহিমূলক নয় এবং জনগণের কাছে এই সরকারের জবাবদিহি করার কোনো সুযোগও নেই। দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ১০ মাসেও জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি। ফলে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এই অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ার কারণেই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। 

তারেক রহমান বলেন, দেশের জনগণ সরাসরি নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে প্রস্তুত। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। গণতন্ত্রের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সংস্কার প্রস্তাব এরই ভেতর দেয়া হয়েছে। সংস্কারের ব্যাপারে কোনো রাজনৈতিক দলের তেমন কোনো আপত্তি নেই। তবে সংস্কার নিয়ে অযথা সময়ক্ষেপণে আপত্তি অবশ্যই রয়েছে। শুধু রাজনৈতিক দলের নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরেও বিভিন্ন সংগঠনও এ ব্যাপারে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে। এ কারণেই আমরা মনে করি, প্রস্তাবিত সংস্কার শেষ করে যদি ইনটেনশন সঠিক থাকে, গণতন্ত্রের পক্ষে থাকে- আমরা দাবি করেছি, ডিসেম্বরের ভেতরে নির্বাচন দিতে। তবে আমি এটাও মনে করি, বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে সংস্কার প্রস্তাব শেষ করে যেহেতু কমবেশি সকল বিষয়, অধিকাংশ দলগুলোর মধ্যে একমত রয়েছে, ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করা সম্ভব। 

তিনি বলেন, আমি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবারো আহ্বান জানাই, জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করুন। অবিলম্বে ডিসেম্বরের মধ্যেই সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন। এখানে অন্তর্বর্তী সরকারের জয় বা পরাজয়ের কোনো কিছুই নেই। বরং স্বাধীনতা প্রিয় জনগণকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়ে গণতন্ত্রকেই বিজয়ী করুন, করতে সাহায্য করুন।   

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের ভোটে নির্দিষ্ট মেয়াদের একটি স্থিতিশীল সরকার না থাকায় কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগও হচ্ছে না। গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি, ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো বলছে, নানা কারণে ইতিমধ্যে শত শত শিল্প কল-কারখানা বন্ধ হয়ে  গেছে। আরও অনেক কল-কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। ভিন্ন সেক্টরে এ ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। জনগণ তাদের সমস্যার কথা সরকারের কাছে তুলে ধরা বা বলার কোনো সুযোগ তারা পাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে স্বাভাবিক কারণেই জনগণের কোনই যোগাযোগ নেই। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমস্যা সম্ভাবনা কিংবা দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে অনেক উপদেষ্টাই জানেন না। তারা অফিসে বসে জনগণের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা হয়তো কেউ কেউ করছেন। জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছাড়া প্রশাসন নির্ভর, ফাইল নির্ভর হয়ে যদি সকল সমস্যা করাই যেতো তাহলে তো নিশ্চিয়ই রাজনৈতিক দল কিংবা রাজনীতি প্রয়োজন হতো না। 

তারেক রহমান বলেন, সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্র এবং সরকার পরিচালনায় জনগণের স্বার্থ, জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দেয়াই কিন্তু জরুরি। কারণ কোনো সরকার কিংবা সরকার প্রধানের নিজেদের চিন্তা জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা থেকেই কিন্তু শাসন, প্রশাসনে, মন-মগজে স্বৈরাচারের বীজ রোপিত হয়। রাষ্ট্র এবং সরকারে যাতে স্বৈরাচারের কবলে না পড়ে এ কারণেই রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। জনগণের ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একমাত্র রাষ্ট্র এবং সরকারকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ করা যায়।  

জিয়াউর রহমানের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আজকে রাজনীতিতেও শহীদ জিয়া সমানভাবেই প্রাসঙ্গিক। শহীদ জিয়ার রাজনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় নীতি ও পদ্ধতি এখনো আমাদের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। শহীদ জিয়া মানেই একটি স্বনির্ভর, আত্মমর্যাদাশীল এবং গণতান্ত্রিক একটি বাংলাদেশ। শহীদ জিয়া তার কর্মের মাধ্যমেই বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন গণতন্ত্রকামী এই বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে। তিনি জনগণের হৃদয়ে ভাস্বর হয়ে আছেন অর্জনে, গর্জনে নয়। স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া ইতিহাসের পাতায় অবিনশ্বর।    

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে চিকিৎসাধীন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আমরা এদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যে মানুষটির নাম অবিচ্ছেদ্য প্রিয় নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান সাহেবের নাম মুছে ফেলার ভয়াবহ চক্রান্ত হয়েছে বারবার। এই মহান ক্ষণজন্মা পুরুষের নামটি আসে মানুষের মধ্য থেকে। যে মানুষটি প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে বসে আছেন। যার সঙ্গে মাটি ও মানুষের সম্পর্ক তার নাম মুছে ফেলা যায় না।

জিয়াউর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে, বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে  গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ওদিকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামকে সম্পূর্ণ করবে বলে সভায় মন্তব্য করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান।  

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, মাত্র একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়েছে, তাহলে খুব তাড়াহুড়া করে সংস্কার করতে হবে। আমরা বলেছি, উপদেষ্টা পরিষদে সংস্কার করুন। সর্ষের মধ্যে ভূত রেখে সংস্কার সংস্কার করেন তাহলেও সংস্কার হবে না।  
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, গণতন্ত্রের জন্য বিএনপিকে আজও যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনে মানুষের জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র চায় না, তারা সব কথা বললেও নির্বাচনের কথা বলে না। বলে সংস্কার করবো, কিসের সংস্কার? সংস্কার করবে জনগণের প্রতিনিধিদের সরকার। সভায় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status