প্রথম পাতা
সচিবালয়, এনবিআর, নগর ভবন অচল
স্টাফ রিপোর্টার
২৬ মে ২০২৫, সোমবার
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল দাবিতে আন্দোলনে গতকাল দিনভর প্রায় অচল ছিল প্রশাসনের কেন্দ্র সচিবালয়। সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-কে কালাকানুন উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবিতে এই আন্দোলন করছেন সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। তাদের চলা আন্দোলনের মধ্যেই গতকাল রাতে অধ্যাদেশটির গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। ওদিকে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে কর্মবিরতির কারণে অচলাবস্থা বিরাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর-এ। গতকাল দিনভর কর্মবিরতি শেষে বিকালে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে। নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পর সন্ধ্যায় অর্থ মন্ত্রণালয় ৩১শে জুলাইয়ের মধ্যে এনবিআর ভাগ করার অধ্যাদেশ সংশোধন করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপরই ঐক্য পরিষদ তাদের কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। তবে অসহযোগ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এনবিআর-এ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে কর্মবিরতি ও অসহযোগ চলায় এই প্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের অচলাবস্থাও কাটেনি। ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ দেয়ার দাবিতে গতকালও নগর ভবন অবরুদ্ধ করে কর্মসূচি পালন করেন তার সমর্থকরা।
সচিবালয়ে দিনভর বিক্ষোভ, অচলাবস্থা
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদনের প্রতিবাদে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে দিনভর বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। সচিবালয়ের ভেতরে দ্বিতীয় দিনের মতো তারা এই বিক্ষোভ-মিছিল করেন। এতে কাজে স্থবিরতা দেখা দেয় সচিবালয়ে। কর্মচারীরা এই অনুমোদিত খসড়াটিকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন হচ্ছে। বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়।
এদিকে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে বাদামতলায় শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়ো হতে থাকেন। ১০টা নাগাদ বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীতে পূর্ণ হয়ে যায় সচিবালয়ের এ চত্বর। ১০টার কিছু পর বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম ও মহাসচিব মো. মুজাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মিছিল শুরু হয়। এরপর সেখানে যোগ দেন সভাপতি বাদিউল কবীর ও মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত পরিষদের অপর অংশ। আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী এসোসিয়েশনসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যান্য সংগঠন যোগ দেয় মিছিলে। মিছিল করার সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয়ের কর্মচারী ‘এক হও লড়াই করো’, ‘অবৈধ কালো আইন, মানি না, মানবো না’, ‘আমাদের দাবি আমাদের দাবি, মানতে হবে মানতে হবে’-ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। ৬ নম্বর ভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামনে দিয়ে নতুন ভবন, ক্লিনিক ভবনের সামনে দিয়ে ১১ নম্বর ভবনের সামনে আসে। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয় এলাকা প্রদক্ষিণ করতে থাকেন। এরপর তারা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে ৪ নম্বর ভবনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে তার দপ্তরে দেখা করতে যান। তবে তিনি দপ্তরে ছিলেন না।
পরে মিছিল নিয়ে তারা সচিবালয়ের এক নম্বর ফটক বা প্রধান ফটকের কাছে গিয়ে বসে পড়েন। সেখানে সংযুক্ত পরিষদ ও আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী এসোসিয়েশনের নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় প্রধান ফটক বন্ধ করে দেন দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রায় ২০ মিনিটের মতো ফটক বন্ধ ছিল। এ সময় সচিবালয় থেকে কেউ বের এবং প্রবেশ করতে পারেনি। পরে মিছিল নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৬ নম্বর ভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে অবশ্য বিকাল ২টার দিকে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কর্মচারী নেতারা। একজন নেতা বলেন, উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান তাদের বলেছেন দাবির বিষয়টি তিনি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরবেন।
অভিযোগ উঠেছে, সাড়ে চার দশক আগের বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ধারা’ সংযোজন করে অধ্যাদেশের খসড়াটি করা হয়েছে। অধ্যাদেশের খসড়ায় শৃঙ্খলা বিঘ্ন, কর্তব্য সম্পাদনে বাধা, ছুটি ছাড়া কর্মে অনুপস্থিত, কর্তব্য পালন না করার জন্য আত্মপক্ষ সমর্থনের পর্যাপ্ত সুযোগ না দিয়ে চাকরিচ্যুতির বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সহজেই শাস্তি, এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। অধ্যাদেশের খসড়াটিকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আখ্যায়িত করে তা পুনর্বিবেচনার দাবি করছেন কর্মচারীরা।
গতকাল সচিবালয়ের প্রধান ফটক আটকে বিক্ষোভ করার সময় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর ঘোষণা দেন সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে ফিরবেন না। তিনি বলেন, এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে যে অপপ্রয়াস নেয়া হচ্ছে, আমরা তাদের এই অপপ্রয়াস রুখে দেবো ইনশাআল্লাহ। এটি নিবর্তনমূলক আইন।
অধ্যাদেশ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যা বললেন: ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যে রকম যেটা যে সময়ে দরকার পড়ে, সেই সময়ে সেটা করা হয়। গতকাল আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট ও কাঁচা চামড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভা এবং আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। গত ২২শে মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর সচিবালয়ে বিক্ষোভ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সচিবালয়ে বিক্ষোভকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কী ভাবছেন?- এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যে আইনটা হচ্ছে এটা এরকম কিনা ২০১৮ সালে সংশোধন হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার একটা সংশোধন করে ইলেকশনটা যাতে ম্যানুপুলেট করতে পারে, ওই রকম কিছু কিছু সংশোধন করেছিল। ওই সংশোধনটা শুধু বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। আগে যে রকম আইনটি ছিল ওটাই করা হয়েছে। তারপরও যদি তাদের কোনোরকম (আপত্তি) থাকে, তারা আলোচনা করতে পারেন, কেবিনেট ডিভিশন কিংবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। আলোচনা করে সমস্যাটা সমাধান করে নেবেন। কেন এ সময়ে এই অধ্যাদেশ করা জরুরি-এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটার ব্যাখ্যা তো আমি দিতে পারবো না, কেন এটা দিতেছে। যে রকম যেটা যে সময় দরকার পড়ে, সেই সময় সেটা দেয় (করা হয়)। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ২০১৮ সালে (আইনটা) পরিবর্তন হয়েছে। এখন আবার একটু সংশোধন হয়েছে। এটাতো ওই রকম কিছু না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার কর্মকর্তাদের
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আগামী ৩১শে জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পৃথকের অধ্যাদেশ সংশোধনের ঘোষণা আসার পর অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। তবে লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি যথারীতি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পরিষদ এই তথ্য জানায়। তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে স্পষ্ট যে, এনবিআর বিলুপ্ত হবে না; বরং এটিকে সরকারের একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় আরও শক্তিশালী করা হবে। রাজস্ব নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে আলাদা একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে এবং অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনের পূর্ব পর্যন্ত জারিকৃত অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হবে না। রাজস্ব সংস্কারের লক্ষ্যে সরকারের এই ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। একইসঙ্গে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে টেকসই রাজস্ব সংস্কারের লক্ষ্যে সরকারের এই প্রত্যয়কেও আমরা স্বাগত জানাই। এর ফলে বাংলাদেশ একটি আন্তর্জাতিক মানের স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী রাজস্ব এজেন্সি প্রতিষ্ঠার পথে যাত্রা শুরু করলো বলে আমরা মনে করি। সরকারের এই ঘোষণার ফলে আমাদের এতদিনের দাবি ও কর্মসূচির যৌক্তিকতা দেশবাসীর নিকট প্রমাণিত হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আগামীকাল (আজ) থেকে ঘোষিত কর্মবিরতির কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলো। তবে, আমাদের দ্বিতীয় দাবি এখনো পূরণ হয়নি। আমরা আশা করছি, সরকার খুব শিগগিরই আমাদের দ্বিতীয় দাবির পক্ষে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত প্রদান করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমরা দেশবাসীকে কথা দিয়েছিলাম আমাদের দাবি আদায় হলে আমরা নির্ধারিত অফিস সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময়ে কাজ করে অনিষ্পন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করবো। সে মোতাবেক প্রয়োজনের নিরিখে অফিস সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময়ে কাজ চলবে বলে আমরা ঘোষণা করছি। আগামীকাল দুপুর ১২টায় এনবিআর প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিং করে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে এর আগে গতকাল বিকালে এনবিআর বিলুপ্তির প্রতিবাদে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির ডাক দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনে পরিষদ জানায়, সোমবার থেকে দেশের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে কর্মসূচি পালন করা হবে। সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, ওষুধ ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের আমদানি কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের এমন ঘোষণার পরপরই অর্থ মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সাম্প্রতিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে কিছু অস্পষ্টতা রয়ে গেছে, তা প্রতীয়মান হচ্ছে। এ বিষয়ে নিম্নরূপ অধিকতর স্পষ্টীকরণ করা হলো। প্রথমত, এনবিআরকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারের একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে। দ্বিতীয়ত, বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ও বিসিএস (কর) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে এনবিআর শক্তিশালীকরণ এবং একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠনের মাধ্যমে রাজস্ব নীতি পৃথক করার কাঠামো কীভাবে প্রণীত হবে, তা এনবিআর, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। তৃতীয়ত, এনবিআর শক্তিশালী করা এবং রাজস্ব নীতি প্রণয়ন কার্যক্রম পৃথক করার আগামী ৩১শে জুলাইয়ের মধ্যে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সব সংশোধনী আনা হবে। প্রয়োজনীয় সংশোধনের পূর্ব পর্যন্ত জারিকৃত অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হবে না। বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় আরও জানায়, সরকার আশা প্রকাশ করছে যে এই ঘোষণার মাধ্যমে কর এবং কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব উদ্বেগের অবসান ঘটবে এবং দেশের রাজস্ব আহরণ ও রাজস্ব সেবা প্রদানকারী সব দপ্তর অবিলম্বে পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এমন প্রেস বিজ্ঞপ্তির পর পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
এর আগে গত ১২ই মে রাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ভাগ করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করে সরকার। পরে ১৩ই মে থেকে এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে টানা অবস্থান ও কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করে আসছেন দেশের প্রধান রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটির কর্মীরা। এ আন্দোলনের মধ্যেই গত শনিবার রাজস্ব ভবনে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও র?্যাব সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ছিলেন বলে অনেকের মুখে শোনা গেছে। এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারা সরাসরি বাদানুবাদে না গেলেও ভবনের ভেতরে সংবাদ সম্মেলন করতে বাধা দেন। পরে ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন হয়।
নগর ভবনের অচলাবস্থা কাটেনি
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার দাবিতে নগর ভবনের সামনে অবস্থান করেছেন তার সমর্থক ও করপোরেশনের কর্মচারীরা। ১০ দিন ধরে সিটি করপোরেশনের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কাটেনি নগর ভবনের অচলাবস্থা। গতকাল সকাল ১০টার পর থেকে নগর ভবন প্রাঙ্গণে জড়ো হন কর্মচারী ও সমর্থকরা। এ সময় ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।
ইশরাক সমর্থকরা বলেন, আমরা চাই ইশরাক হোসেনের শপথ অনুষ্ঠান করে তাকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হোক। ইশরাক হোসেন মেয়রের চেয়ারে বসলেই আমরা বাড়ি ফিরবো। এর আগে আন্দোলন চলমান থাকবে।
ওদিকে বৃহস্পতিবার ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে দেয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কী উদ্যোগ নেয় তা পর্যবেক্ষণের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে সেদিন আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন ইশরাক।
এর আগে গত ১৪ই মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। ২০২০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। প্রশ্নবিদ্ধ ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩রা মার্চ মামলা করেন ইশরাক। গত ২৭শে মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম। রায় পাওয়ার পর ২৭শে এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ওদিকে ইশরাককে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ই মে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।