প্রথম পাতা
এক দুর্ঘটনায় দু’টি স্বপ্নের মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার
২৬ মে ২০২৫, সোমবার
নির্মম। মর্মান্তিক। হৃদয়বিদারক। এক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ। সড়কে ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে দু’জনই না ফেরার দেশে। রোববার সকাল ৯টার দিকে বনানীর কাকলী এলাকায় ট্রাকের চাপায় তারা নিহত হন। নিহত আশফাকুর রহমান আসিফ (২৪) হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিপল ই বিভাগের ছাত্র ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাইক রাইড শেয়ার করে অর্থ উপার্জন করতেন। আর আসিফ মাহমুদ সম্পদ (২১) মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৫৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার বাবা ব্রেন টিউমারের রোগী। টঙ্গী হাই কেয়ার জেনারেল হাসপাতালে তার ব্রেন টিউমারের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। সেখান থেকেই খালার বাসায় কাপড়-চোপড় নিয়ে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় উপস্থিত লোকজন ট্রাকের হেলপার রবিউল ইসলামকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। চালক পালিয়ে গেছেন।
দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে তাদের দুই পরিবারে শোকের ছায়া নেমেছে। নিহত আসিফ লেখাপড়া শেষ করে কিছুদিন ধরে চাকরি খুঁজছিলেন। অনেক জায়গায় সিভিও জমা দিয়েছেন। কোথাও কোনো চাকরি না পাওয়ায় পরে অর্থ ও বেকারত্বের প্রয়োজনে রাইড শেয়ারিং শুরু করেন।
বনানী থানার ওসি রাসেল সরোয়ার বলেন, ঘটনার সময় মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল আসিফ। পেছনে বসা ছিলেন সম্পদ। মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ঢালে আসলে একটি কংক্রিট মিক্সার মেশিনের গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই দুইজন মারা যায়। গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে হেলপারকে আটক করা হয়েছে। মৃত আসিফের বন্ধু তালহা জোয়ার্দার জানান, আসিফের বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিসিক রোডের কুমারপাড়া এলাকায়। বাবার নাম মো. আলম। সে দিনাজপুরে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিপল ই বিভাগের পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় তেজগাঁও শাহিনবাগ এলাকায় মেসে থাকতো। বিভিন্ন জায়গায় চাকরি খোঁজার পাশাপাশি রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরসাইকেল চালাতো। এক ভাই এক বোনের মধ্যে আসিফ ছিল বড়।
বনানীর ওসি বলেন, দুর্ঘটনার পর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম এসেছিল। তারা তাদের রেসকিউ করে। কিন্তু ততক্ষণে তাদের মৃত্যু হয়। তিনি জানান, নিহত দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক সুরতহাল ও উদ্ধারের প্রক্রিয়া করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে তাদের ময়নাতদন্ত হবে।
এদিকে সম্পদের খালাতো ভাই কাজী সোহাগ হোসেন জানান, সম্পদের বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার তখলপুর গ্রামে। সম্পদের বাবার নাম মো. জাহিদুল ইসলাম। চট্টগ্রাম থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেন সম্পদ। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির চেষ্টায় ছিলেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সম্পদ ছিলেন বড়। কাজী সোহাগ আরও জানান, সম্পদের বাবা জাহিদুল ইসলাম বিজিবিতে চাকরি করেন। বেশ কিছুদিন আগে ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে জাহিদুল ইসলামের। কয়েকদিন আগে পরিবারের লোকজন টঙ্গী হাই কেয়ার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে ব্রেন টিউমারের অপারেশন হয়। ওই হাসপাতালেই ছিলেন সম্পদ, সম্পদের মা ও ছোট বোন।