ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রথম পাতা

আহমেদাবাদ ট্র্যাজেডি

মিনিটেই প্রাণ গেল ২৪১ জনের

মানবজমিন ডেস্ক
১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

গুজরাটের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত, চলছে উদ্ধার অভিযান

ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী হলো ভারত। বৃহস্পতিবার দেশটির গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে ঘটে গেল এক ট্র্যাজিক দৃশ্য। ভয়াবহ ওই বিমান দুর্ঘটনায় একজন ব্যতীত আরোহীর কেউই বেঁচে ফেরেনি। নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।  মোদির পাশাপাশি বিশ্বের অন্য নেতারাও শোক প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। যিনি ওই বিমানের যাত্রী ছিলেন। তার আসনক্রম ১১-এ। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক। তাকে বিশ্বাস নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে ২০৪টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে তারা। এ দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা যাত্রীরাই কেবল প্রাণ হারাননি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিমানটি যেই ভবনে আছড়ে পড়েছে- সেটি ছিল মেডিকেল শিক্ষার্থীদের হোস্টেল। সেখানেও পাঁচ ইন্টার্ন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনাকবলিত ওই  হোস্টেলের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই জনকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বিমানটিতে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। যাদের মধ্যে ২৩২ জন সাধারণ যাত্রী ও ১০ জন ক্রু সদস্য। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, বিমানটি আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১টা ৩৯ মিনিটে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে।  যেটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার সিরিজের একটি বিমান ছিল। যাত্রীদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন বৃটিশ, একজন কানাডীয় এবং সাতজন পর্তুগালের নাগরিক ছিলেন। 

উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরই বিধ্বস্ত হয়েছে বিমানটি। দুর্ঘটনার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)কে বিপদ সংকেত পাঠান। তবে ততক্ষণে বিমানের কন্ট্রোল আর তার হাতে ছিল না। ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, পাইলটের কাছ থেকে বিপদ সংকেত পেয়ে এটিসি যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তার পরই বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর জানা যায়। বিমানটি রানওয়ে ২৩ থেকে ওড়ার এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এটিসি’র সঙ্গে। ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে বিমানটি মাটি থেকে ৬২৫ ফুট উচ্চতায় ছিল। সেটি দ্রুতগতিতে নিচের দিকে নেমে আসতে শুরু করে। তারপরই সেটি মেঘানিনগরের কাছে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের একটি ছাত্রাবাসে আছড়ে পড়ে। ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য বলছে, বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি ভিটি-এএনবি। বিমানটি এদিনই দিল্লি থেকে অহমেদাবাদে আসে। তারপর সেটি লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বিমানে থাকা যাত্রীদের ১১ জন শিশু বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া লন্ডনের উদ্দেশ্যে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে আরোহী হয়েছিলেন গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি। জোন ওয়ান থেকে বিমানে তার বোর্ডিংয়ের সময় ছিল দুপুর ১২টা ১০ মিনিট। তার আসন নাম্বার ছিল ২ডি। বিজয় রুপানির ঘনিষ্ঠ প্রশান্ত বালা আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, তিনি বিজয়কে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়ে এসেছেন। ওই বিমানে লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল তার। যাত্রীদের বিমান পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার বাসেও উঠেছিলেন বিজয়।

বলা হচ্ছে ভারতের ইতিহাসে এটিই বোয়িং বিমানের দুর্ঘটনা, যেখানে বিধ্বস্তের পর যাত্রীদের কেউই বেঁচে ফেরেননি। এ ঘটনায় শোক জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই দুর্ঘটনাকে হৃদয়বিদারক বলে উল্লেখ করেছেন। এক্সের পোস্টে তিনি বলেছেন, আহমেদাবাদের এই দুর্ঘটনা আমাদের হতবাক ও দুঃখিত করেছে। এটি এমন এক হৃদয়বিদারক ঘটনা যা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। এই দুঃখের মুহূর্তে, বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সকলের প্রতি আমি সমবেদনা প্রকাশ করছি। মোদি আরও লিখেছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার সঙ্গে যুক্ত মন্ত্রী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি। এক্সে এক পোস্টে বিমান আরোহীদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার। এ ছাড়া দেশটি এ বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বৃটেনের রাজা চার্লস বলেছেন, ওই দুর্ঘটনায় তিনি ও রানী ক্যামেলিয়া ‘নিদারুণভাবে হতবাক’। রাজ পরিবারের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে চার্লসের বার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, বিমানের যাত্রী, তাদের পরিবার ও বন্ধুদের জন্য প্রার্থনা ও সমবেদনা। জরুরি পরিষেবাগুলোর বীরত্বপূর্ণ প্রচেষ্টার প্রতি সম্মান জানিয়েছেন রাজা চার্লস। এ ছাড়া এই হৃদয়বিদারক ও  বেদনাদায়ক সময়ে যারা সাহায্য এবং সমর্থন প্রদান করেছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি। নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বৃটিশ হাইকমিশন এক্সের এক পোস্টে সমবেদনা জানিয়ে বলেছে, এই দুর্ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। এক্সে এক পোস্ট দিয়ে তিনি বলেছেন, আহমেদাবাদে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। যাত্রীদের প্রতি আমার সমবেদনা। আরও বলেছেন, ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটন ও জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছে বৃটেন। ভারতে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ওই সংবাদ ‘হৃদয়বিদারক’। এসময় বিমানের যাত্রী, তাদের পরিবার ও ভারতীয় জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। ভারতে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত থিয়েরি ম্যাথু বলেছেন, বিমান দুর্ঘটনার সংবাদে ফ্রান্স গভীরভাবে মর্মাহত। ফ্রান্সের পক্ষ থেকে বিমানে থাকা যাত্রী ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।

ভারতে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার শোক, সহায়তার প্রস্তাব
এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিধ্বস্তের ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা এক শোক বার্তায় তিনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের সহায়তারও প্রস্তাব দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং শোক বার্তাটি গণমাধ্যমে শেয়ার করে। নরেন্দ্র মোদিকে লেখা বার্তায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ২৪২ জন যাত্রী নিয়ে আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়া বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মর্মান্তিক বিধ্বস্তের সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় যেসব পরিবার তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে আমরা তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। কঠিন এ সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও তাদের প্রিয়জনদের জন্য আমাদের প্রার্থনা ও সহানুভূতি রয়েছে। আমরা ভারতের সরকার ও জনগণের প্রতি সংহতি জানাচ্ছি এবং যেকোনো ধরনের পরিপূর্ণ সহায়তা করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত আছে।
 

পাঠকের মতামত

নিহত পরিবারের প্রতি ভারতের সরকার দায়িত্ব তাদেরকে সহায়তা করা

Ridoy
১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ২:২১ অপরাহ্ন

নিশ্চয়ই প্রতিটি দুর্ঘটনা এক শোকাবহ তাকদীর — বর্ণনাতীত এক ট্র্যাজেডি, নীরবতার মাঝে খোদা লেখা। এটি আসে অপ্রত্যাশিতভাবে, অদৃশ্য থেকে বজ্রাঘাতের ন্যায়, বিদীর্ণ করে হৃদয়, এক ব্যথা নিয়ে যা বলা যায় না, এক দুঃখ নিয়ে যা ভাগ করা যায় না। মানুষ কতই না দুর্বল, পৃথিবীর বুকে স্বপ্ন নিয়ে হাঁটে, তবুও জানে না কখন তাকদীর নেমে আসবে। তারা বলে, ‘সাধারণ দুর্ঘটনা’ — কিন্তু ব্যথার মাঝে কিছুই সাধারণ নয়, কষ্টের মাঝে কিছুই সরল নয়। এ এক আগুনে মোড়ানো পরীক্ষা, আত্মার গভীরে লেখা এক প্রলাপ। অতএব, ধৈর্য ধরো হে হৃদয়, কারণ যা লেখা হয়েছে, তা হিকমতের বাইরে নয়। আমরা তো আল্লাহরই, এবং তাঁরই দিকে আমাদের প্রত্যাবর্তন। যেখানে শব্দ থেমে যায়, সেখানে অশ্রু ঝরে; জিহ্বা নিশ্চুপ, আর হৃদয় এমন এক বোঝা বহন করে যা বলা যায় না। হে আল্লাহ, আপনি যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রভু, এই দুঃখে কেবল আপনার দিকেই আমরা মুখ ফিরাই। নিঃসন্দেহে, বিষাদ নেমে এসেছে—কারণ হঠাৎ করেই অনেক প্রিয় জীবন চিরতরে হারিয়ে গেছে। কিন্তু আপনি, হে পরম দয়ালু, আপনি প্রত্যেক প্রাণের অভিভাবক, আপনি জানেন সেইসব যা হৃদয় উচ্চারণ করতে পারে না। আপনি শোকাহতদের ধৈর্য দিন, হারিয়ে যাওয়াদের আলো দিন, আর যারা আপনার কাছে ফিরে গেছে তাদের শান্তি দিন। নিশ্চয়ই, আমরা আপনারই এবং আপনার দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। — ড. জাহাঙ্গীর মিয়া Indeed, every accident is a decree cloaked in sorrow — a tragedy beyond description, a moment carved in silence. It strikes without warning, Like a thunderbolt from the unseen, Tearing through hearts with pain not spoken, With grief not shared. How fragile is man, Walking upon the earth with dreams, Yet unaware of the hour fate shall descend. A plain accident, they call it — But there is nothing plain in pain, Nothing simple in suffering. It is a test wrapped in fire, A cry etched into the soul. So be patient, O heart, For what is written was never without wisdom. And to Allah we belong, and to Him is the return. Tears fall where words fail; the tongue is silenced, and the heart bears a burden too heavy to speak. Ya Allah, Lord of the heavens and the earth, only to You do we turn in this sorrow. Verily, sadness descends, for lives have been lost—suddenly, and with no warning. But You, O Most Merciful, are the Guardian of every soul, the One who knows what the heart cannot utter. Grant patience to the grieving, light to the lost, and peace to those returned to You. Indeed, to You we belong, and to You is our return. — DR. Jahangir Miah

DR. Jahangir Miah
১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ৩:১৮ পূর্বাহ্ন

Very sad news, feeling bad

Saidur rahaman
১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন

এটাকে আবার সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদী হামলা বলে না ফেলে কয়েকদিন বাদে।

আব্দুল্লাহ
১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status