রাজনীতি
টেলিকম খাতে নতুন নীতিমালা একতরফাভাবে প্রণয়ন সমীচীন হবে না: ফখরুল
স্টাফ রিপোর্টার
(১১ ঘন্টা আগে) ৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২:০০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০০ পূর্বাহ্ন

জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে টেলিকম খাতে নতুন নীতিমালা একতরফাভাবে প্রণয়ন করা সমীচীন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ নীতি বাস্তবায়নের আগে তারা যেন পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের (এসএমই, বিশেষজ্ঞ, ভোক্তা সংগঠন) সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা করার পর নীতিমালা চূড়ান্ত করেন। বিশেষ করে সামনে জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে এই ধরনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা এ সময়ে একতরফাভাবে প্রণয়ন করা সমীচীন হবে না বলে বিএনপি বিশ্বাস করে।’
টেলিকম খাতে নতুন নীতিমালার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর সাম্প্রতিক ‘ড্রাফট টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি ২০২৫’ উদ্যোগের বিষয়টি বিএনপি’র দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও আমরা এই মুহূর্তে এ ধরনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছি। এই নীতির উদ্দেশ্য হলো লাইসেন্সিং পদ্ধতি সহজ করা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি উৎসাহিত করা এবং গ্রামীণ জনগণের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো-যা অবশ্যই ইতিবাচক একটি বিষয়।’
ফখরুল বলেন, ‘খসড়া নীতিমালাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, এতে কিছু গুরুতর সমস্যা রয়েছে যা টেলিকম খাতে সমতাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়নে বাধা দিতে পারে। বিএনপি গঠনমূলক মনোভাব নিয়ে এই খসড়ার সম্ভাব্য দুর্বলতা, অস্পষ্টতা এবং বড় মোবাইল অপারেটরদের (এমএনও) পক্ষে অধিক সুবিধা পাওয়ার কিছু ধারা তুলে ধরছে-যা ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (এসএমই) এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।’
বাজারে একচেটিয়া আধিপত্যের ঝুঁকির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একাধিক সেবাখাতে মালিকানা রাখার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে বড় মোবাইল অপারেটররা একাধিক খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এতে প্রতিযোগিতা কমে যাবে এবং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়বে।’
এসএমই-দের আর্থিক সংকটে পড়ার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ডি-রেগুলেশনের (নিয়ন্ত্রণ শিথিল) পরে এসএমই, বিশেষ করে স্থানীয় আইএসপি বা ছোট টেলিকম অপারেটরদের সম্পদ ও দায়বদ্ধতা নিয়ে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা না থাকায় তারা বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়তে পারে।’
বিদেশি মালিকানার অনির্দিষ্ট সময়সীমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য মালিকানার সীমা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে, যা বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে এবং খাতের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে।’
অস্পষ্ট ও অনির্ধারিত বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ক্রস-ওনারশিপের ফাঁকফোকর: উল্লম্ব ও সমান্তরাল মালিকানার বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যার অভাবে বড় কোম্পানিগুলো আরও বাজার দখল করে নিতে পারে।’
এন্টারপ্রাইজ সার্ভিসের সীমা অস্পষ্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মোবাইল অপারেটরদের ফাইবার-ভিত্তিক ব্যবসা সংযোগ সেবা কোথায় সীমাবদ্ধ তা স্পষ্ট নয়, ফলে বিবাদ ও অসাম্য তৈরি হতে পারে।’
নতুন প্রযুক্তির বিষয়ে স্পষ্টতা নেই উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড বা নতুন ডিজিটাল সেবা নিয়ে নীতিতে কোনো সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা নেই, যা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে।’
একক লাইসেন্সের বাধা এসএমই-দের জন্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আইএসপি লাইসেন্স একীভূত করার ফলে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সুবিধা পাবে। এএনএসপি লাইসেন্সে স্পেকট্রামের ওপর নির্ভরতা বড় কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে রাখবে। ‘ফিক্সড টেলিকম’ লাইসেন্স খোলা থাকলেও সারা দেশে সেবা দিতে হবে এবং উচ্চ মান বজায় রাখতে হবে, যা এসএমই-দের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’
বড় কোম্পানির অবকাঠামো আধিপত্য প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বড় মোবাইল কোম্পানিকে এন্টারপ্রাইজ ব্রডব্যান্ড বাজারে প্রবেশ করতে দিলে ছোট কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে এবং একচেটিয়া পরিবেশ তৈরি হবে, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’
নীতিমালায় বিদ্যমান অপারেটরদের সুবিধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিছু নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বড় কোম্পানির সুবিধা বজায় রাখা হয়েছে, যা প্রতিযোগিতা নয় বরং আধিপত্য বাড়াবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খসড়া নীতিমালায় লাইসেন্স ফি, শর্তাবলী, কার্যকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই প্রকাশ করা হয়নি-যা স্বচ্ছতার অভাব নির্দেশ করে। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই, এসএমই, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গ্রাহক সংগঠনসহ সব পক্ষকে নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করার পর যেন এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই সঙ্গে এই প্রস্তাবিত নীতিমালার একটি পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক পরিণামও বিশ্লেষণ করা হোক-বিশেষ করে এসএমই ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সম্ভাব্য ক্ষতি, কর্মসংস্থান হ্রাস এবং অর্থনীতির ওপর প্রভাব বিবেচনায় রেখে এটি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ধরনের জাতীয় পর্যায়ের টেলিকম নীতি প্রণয়নে অবশ্যই সতর্কতা, স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নিতে হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায়, তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়। বিএনপি বিশ্বাস করে, সবার জন্য উপকার বয়ে আনে-এমন নীতিই গ্রহণযোগ্য। ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে সমতা ভিত্তিক উন্নয়ন এবং জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকারেই আমরা কাজ করে যাব।’
ফখরুলের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত
এই ফখরুলরা এখন এদেশের জনগনের নতুন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে, বর্তমান জনগনের সরকারের কোন ভাল উদ্যোগই তাদের ভাল লাগে না। গনতন্ত্রের আড়ালে এদেশে আর পরিবার তন্ত্র জনতা মেনে নিবে না।
ফখরুরা নিজেরা কিছু করে নাই অন্যকেও করতে দিবে না। জল ঘোলা করাই তাদের মূল কর্ম।