ঢাকা, ৬ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৯ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

খেলা

লঙ্কান রেনেসাঁ বনাম ‘বাংলাদেশ ২.০’

ইশতিয়াক পারভেজ, কলম্বো থেকে
৬ জুলাই ২০২৫, রবিবার
mzamin

১৩ই জুন, কলম্বোর বিমানবন্দর থেকে সহকর্মীদের সঙ্গে গলের পথে যাত্রা করছিলাম। গাড়ির ড্রাইভার যখন শুনলেন আমি বাংলাদেশের সংবাদকর্মী, তখন নিজেই আলাপ জুড়ে দিলেন। তার প্রথম প্রশ্ন ছিল, ‘বাংলাদেশ এখন কেমন আছে?’ যেহেতু আমি ক্রিকেট সিরিজ কভার করতে এসেছি, প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো টাইগারদের নিয়েই জানতে চাইছেন। কিন্তু না, ভুল ভাঙিয়ে দিলেন। জানতে চাইলেন, গণ-আন্দোলনে তোমার দেশের সরকারের যে পরিবর্তন হয়েছে, এখন সেখানকার অবস্থা কেমন? সমস্যা কি দূর হয়েছে? ক্রিকেট রেখে তার এমন প্রশ্নের কারণও ছিল। লঙ্কানরা এমন একটি গণ-অভ্যুত্থানের পর ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করছে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত লঙ্কা সফরে এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে অসংখ্যবার। আমার মতো একই অভিজ্ঞতা হয়েছে এখানে আসা বেশিরভাগ মানুষেরই, কারণ দুই দেশের মানুষই এখন আছে একই ধরনের স্বপ্ন আর লড়াইয়ে। যা নিয়ে দারুণ এক ব্যাখ্যা দিলেন শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আন্দালিব ইলিয়াস। তিনি টাইগার ক্রিকেটের দারুণ ভক্তও। রাষ্ট্রদূত হিসেবে যেখানেই থাকেন, দেশের খেলা হলেই তিনি ছুটে যান দেখতে। গলে টেস্ট এবং কলম্বোতে ওয়ানডে সিরিজ দেখতেও তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন। দেশ থেকে আসা ক্রীড়া সাংবাদিকদেরও দাওয়াত দিতে তিনি ভোলেননি। তার বাসভবনে বসেই জানালেন শ্রীলঙ্কার রেনেসাঁ বনাম ‘বাংলাদেশ ২.০’ স্বপ্নের কথা। সেই সঙ্গে দেশের স্কুল ক্রিকেটের পুনর্জাগরণ নিয়েও নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরেন। দুই দেশের সম্ভাবনা এক অভিন্ন যাত্রা বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত আন্দালিব ইলিয়াস। বললেন, ‘শ্রীলঙ্কার বর্তমান যে রাষ্ট্রপতি, তিনি বলেন রেনেসাঁ, পুনরুত্থান বা নবজাগরণ হয়েছে। আমরা বলি বাংলাদেশ ২.০। দুটো দেশই একই দিকে যাচ্ছে।’ তিনি ব্যাখ্যা করলেন, শ্রীলঙ্কা তাদের ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনাও যেভাবে ভেঙে পড়েছিল, বর্তমান সরকারও সেটি একটি শক্ত অবস্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তার মতে, ‘আমাদের রিজার্ভ তলানি থেকে বাড়ছে, আমি বলব, আমরা এখনো শক্ত অবস্থানে চলে এসেছি এমনটা নয়। কারণ আমাদের যাত্রা এখনো অব্যাহত। দুটি দেশেরই ভবিষ্যৎ অনেক ভালো। আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক বেশ ভালো। এখানে শিক্ষা খাতে আমাদের অবদান আছে।’ খেলার প্রসঙ্গ উঠলে তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, ‘আর খেলার কথা কী বলব! আমাদের ক্রিকেট, ফুটবল, এমনকি দাবা দল এখানে এসে খেলে যাচ্ছে। আমি গত ১০ মাস ধরে এখানে আছি, এর মধ্যে কতগুলো দল যে বাংলাদেশ থেকে এসে খেলে গেছে, তার হিসাব নেই! নারী ক্রিকেটাররা এল, এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ দল, এখন জাতীয় দল খেলছে। আমাদের দেশেও ওরা খেলতে যাচ্ছে বিভিন্ন ইভেন্ট নিয়ে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, একসঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশের উত্থান, সেটা অসাধারণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।’ তবে লঙ্কায় থেকে তিনি দুই দেশের ক্রিকেটের উন্নতি বড় এক পার্থক্য অনুধাবন করেছেন। এক কলম্বোতেই তিনটি আন্তর্জাতিক টেস্ট ভেন্যু। এছড়াও এই শহরে মাঠ যে ছড়িয়ে আছে জালের মতো। যেখানে সারাদিন দেখা মেলে কোন না কোন ক্রিকেট ম্যাচের। বিশেষ করে স্কুল ক্রিকেট তো এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চেয়েও বেশি মূল্যায়ন হয়। দুই দেশের এই বাস্তবতা রাষ্ট্রদূত ইলিয়াস স্বীকার করে বলেন, ‘আমি ক্রিকেট খুব একটা বুঝি না। তারপরও যতটা খবর রাখি, তাতে শ্রীলঙ্কার যে ক্রিকেট, তার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে একটু আক্ষেপ তো হয়। শ্রীলঙ্কার তৃণমূল পর্যায়ে খেলাধুলার বিস্তার, বিশেষ করে স্কুল ক্রিকেট, সেটি একটি অনন্য উদাহরণ হতে পারে। তারা স্কুল পর্যায়ে যেভাবে প্রোমোট করে, পেট্রোনাইজ করে তা সত্যিই অসাধারণ।’ তিনি একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বললেন, ‘আমি সিংহলিজ স্পোর্টস গ্রাউন্ডের পাশেই থাকি। একদিন মাঠের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখলাম মাঠের বাইরে বিশাল ভিড়, জার্সি, পতাকা বিক্রি হচ্ছে। দর্শকরা ছোটাছুটি করছে, স্লোগান দিচ্ছে, অনেক গাড়ির ভিড়। এমনটা দেখে তার সঙ্গে থাকা ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলাম, এখানে কি কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ কিংবা বিপিএলের মতো শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লীগের কোনো ম্যাচ হচ্ছে? কিন্তু ড্রাইভার জেনে এসে বলল, এখানে কলম্বোর দুটি স্কুলের ম্যাচ হচ্ছে। স্কুল টুর্নামেন্টের ফাইনাল চলছিল সেদিন। এর জন্য যে পরিমাণ ভিড়, তা ছিল অবিশ্বাস্য! ফাইনালে যে দলটা জিতল, তাদের বাসে করে পুরো শহর ঘোরানো হলো, পুরো কলম্বো শহর! আমার বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম ব্যান্ডপার্টি গান বাজিয়ে তাদের বিজয় উদযাপন করছে। এই স্কুল ক্রিকেটের জন্য উৎসাহটা ফিরিয়ে আনতে হবে।’ 
স্কুল ক্রিকেট নিয়ে তিনি নস্টালজিক হয়ে বলেন, ‘আমাদের ছোটবেলায় “নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট” খুবই জনপ্রিয় ছিল। ভীষণ পছন্দ ছিল আমার। আমি যে স্কুলে পড়েছি, খেলার সময় গিয়ে সেখানে আনন্দ নিয়ে স্লোগান দিতাম।’
লঙ্কা সফরে গলে টেস্ট ড্র করে আশা বাড়িয়ে দিয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু কলম্বো টেস্ট ও প্রথম ওয়ানডে হার আবার হতাশ করে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো চাই বাংলাদেশ জিতুক, সেটি যার সঙ্গেই খেলুক না কেন! আমাদের দেশের খেলা, আশায় থাকি যে জিতবে। এমন আশার যথেষ্ট কারণও আছে, কারণ আমাদের ভালো একটা দল আছে। তাই একটা ম্যাচ হারলেও আশা করি পরের ম্যাচটা আমরা জিতব।’
শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের সম্পর্ক দারুণ বলে জানান রাষ্ট্রদূত ইলিয়াস। আবারো জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক বেশ ভালো। এখানে শিক্ষা খাতে আমাদের অবদান আছে। আর খেলার কথা কি বলব! আমাদের ক্রিকেট, ফুটবল, এমনকি দাবা দল এখানে এসে খেলে যাচ্ছে। আমি ১০ মাস আছি, এর মধ্যে কতগুলো দল যে বাংলাদেশ থেকে এসে খেলে গেছে, তার হিসাব নেই। নারী ক্রিকেটাররা এল, এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ দল, এখন জাতীয় দল খেলেছে। আমাদের দেশেও ওরা খেলতে যাচ্ছে বিভিন্ন ইভেন্ট নিয়ে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, একসঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশের উত্থান, সেটা অসাধারণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।’  রাষ্ট্রদূতের কথায়, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা শুধু প্রতিবেশী দেশই নয়, বরং তারা একই স্বপ্ন ও লক্ষ্যের পথে হেঁটে চলেছে, যেখানে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা তাদের অভিন্ন ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করছে।
 

খেলা থেকে আরও পড়ুন

খেলা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status