অনলাইন
ফ্রান্স টুয়েন্টিফোরকে আনোয়ার ইব্রাহিম
ইরানে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের বোমাবর্ষণ ভুল পদক্ষেপ
স্টাফ রিপোর্টার, মালয়েশিয়া
(৮ ঘন্টা আগে) ৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম সম্প্রতি গাজা সংঘাত-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের যৌথভাবে ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর বোমাবর্ষণকে ‘ভুল পদক্ষেপ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই আক্রমণ কূটনৈতিক পথ উপেক্ষা করেছে এবং ইরানি জনগণের সহনশীলতা ও দৃঢ়তা সম্পর্কে কোনো বিবেচনা করেনি।’
দেশটির সরকারি নিউজ এজেন্সি বারনামা ফ্রান্স-টুয়েন্টিফোরে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, গাজা সংকট সমাধানের পথ কেবল বহুপক্ষীয় ও ন্যায্য আলোচনার মধ্য দিয়েই সম্ভব। আমি খুব একটা খুশি হইনি। কারণ আমি মনে করি, এগিয়ে যাওয়ার পথ একমাত্র সংলাপের মধ্য দিয়েই সম্ভব। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বহুবার ইরানকে ধ্বংস করতে চেয়েছে, কিন্তু কখনোই জনগণের সহনশীলতা ও দৃঢ়তাকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘এই হামলা ইরানি জনগণের সহনশীলতা, সক্ষমতা ও সংকল্পের কোনো মূল্যায়ন করেনি। আমরা যেটা স্বাগত জানাই, তা হলো যুদ্ধবিরতি।’
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর, বিশেষ করে ফ্রান্সের আহ্বান সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘এমন আহ্বান ন্যায্য ও সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। যদি তারা নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানায় এই ভিত্তিতে যে, পারমাণবিক প্রযুক্তিকে অস্ত্রায়িত করা উচিত নয়, তাহলে সেটা ন্যায্য। কিন্তু এই নীতি সর্বত্র প্রযোজ্য হতে হবে। এই বৈপরীত্য ও ভণ্ডামি এখন এতটাই স্পষ্ট যে, মানুষ আর তা মেনে নিচ্ছে না।’
‘এখন আর ঔপনিবেশিক বা সাম্রাজ্যবাদী যুগ নয় যে, আপনি যেকোনো কিছু চাপিয়ে দেবেন। এখন ন্যায্যতা থাকতে হবে—কেন ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে কিন্তু ইসরাইলের ওপর নয়? কেন এই দ্বিমুখী নীতি?’ প্রশ্ন তোলেন আনোয়ার ইব্রাহিম।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আনোয়ার বলেন, ‘এটি সহিংসতার জন্য নয়, বরং যুদ্ধবিরতির উদ্যোগকে সমর্থন করতেই তার সে পদক্ষেপ ছিলো।’ তিনি ব্যাখ্যা করেন, তিনি হামাস নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে সংলাপের পথ খুঁজে বের করতে। শান্তিচুক্তির উদ্যোগকে অগ্রসর করাই তার উদ্দেশ্য ছিল।
‘আমি সেখানে সহিংসতাকে উস্কে দিতে যাইনি, বরং সংলাপকে সমর্থন করতেই গিয়েছিলাম। তবে আমি এমন একজন নই যে, হামাসকে তো নিন্দা করবে, কিন্তু ইসরাইলের কাজ নিয়ে চুপ থাকবে’ —বলেন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার।
গাজা প্রসঙ্গে তার এ অবস্থান, কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে তুলনামূলক নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আনোয়ার বলেন, ‘এটি দ্বিমুখী নীতি নয়।’ তিনি জানান, মালয়েশিয়া তার অবস্থান স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এমনকি তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও কথা বলেছেন আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য।
আনোয়ার ইব্রাহিম আরো বলেন, ‘তিনি (পুতিন) আমাকে বলেছেন, তিনি প্রস্তুত—তবে যেন কেউ শর্ত না চাপায়। আমি কারো পক্ষ নিচ্ছি না। আমরা ভিন্ন অঞ্চলের, ছোট একটি দেশ, কিন্তু বন্ধুর মতো আমি তাকে অনুরোধ করেছি, যেন কোনোমতে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান খোঁজার পথ খোলা থাকে।’