ঢাকা, ১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রথম পাতা

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ

আশা ছাড়ছে না বাংলাদেশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার
১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনায় সফলতা আসবে বলে এখনো আশাবাদী বাংলাদেশ। সরকারের সর্বোচ্চ মনোযোগ এখন ওয়াশিংটনে- এমন মন্তব্য করে সেগুনবাগিচার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন- নেগোসিয়েশন শেষ হয়নি। ফের বসছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। এ আলোচনা চলবে আগামী কয়েক ঘণ্টা। তিনি বলেন- ট্যানেলের শেষ প্রান্তে আমরা আলো দেখতে পাচ্ছি। এদিকে বুধ ও বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় ওয়াশিংটনে বৈঠক নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পারস্পরিক শুল্ক সংক্রান্ত দ্বিতীয় দফা আলোচনার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর)। বুধবার শুরু হওয়া আলোচনাটি বৃহস্পতিবার অবধি চলবে জানিয়ে বলা হয়- প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলেছে- বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেয়া বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে সরাসরি উপস্থিত থাকবেন। তবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ঢাকা থেকে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেবেন। আলোচনায় যোগ দিতে ইতিমধ্যে বাণিজ্য সচিব ও একজন অতিরিক্ত বাণিজ্য সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন। বাংলাদেশ আশা করছে, গত ২৭শে জুন অনুষ্ঠিত প্রথম দফার আলোচনার অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে দ্রুত একটি চুক্তি সম্পাদন করা সম্ভব হবে। স্মরণ করা যায়, বাংলাদেশ রপ্তানি পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রকে। চলতি বছর থেকে ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ১লা আগস্ট থেকে এটি কার্যকর হবে। হাতে সময় মাত্র ২১ দিন। এই সময়ের মধ্যে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে বাড়তি শুল্ক গুনতে হবে বাংলাদেশকে। উল্লেখ্য, গত ২রা এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের ওপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ পালটা শুল্ক আরোপ করে। দুই শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশের জন্য এখন ৩৫ শতাংশ করায় সব মিলিয়ে ১লা আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের মতে, ১লা আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে ভালোভাবে দরকষাকষি করতে পারলে শুল্কহার কমতে পারে। অন্যথায় ঘোষিত হারই কার্যকর হবে। সেক্ষেত্রে বিপদের শেষ থাকবে না। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সামনে এক মাস রেখে গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুল্ক আরোপ সংক্রান্ত ডকুমেন্ট হ্যান্ডওভার করা হয়েছে। নেগোসিয়েশনের ডেট দেয়া হয়েছে। যেটা তাদের পক্ষ থেকেই দেয়া হয়েছে। এর মানে, নেগোসিয়েশনের দরজা খোলা রয়েছে। আমরা আলোচনায় যুক্ত হচ্ছি। বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখানে আছেন। সেখানে অংশ নিতে আমি মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো। আশা করি, কিছু একটা ফল আমরা পাবো আলোচনার মাধ্যমে।’ নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে শুল্ক কমাতে না পারলে আমদানি-রপ্তানির ওপর চাপ পড়বে কিনা-প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, ‘প্রেসার হবে, সেটা সবাই বুঝতে পারছি। সেটা যাতে না হয়, সেজন্য আমরা যাচ্ছি আলোচনা করতে। আশা করছি ভালো কিছুই পাবো।’

বাংলাদেশের প্রত্যাশা এবং…

এদিকে বাংলাদেশ আশা করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ২০ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে। সরকারের যুক্তি ছিল, ভিয়েতনামের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো ২০ শতাংশ শুল্ক সুবিধা পেলে বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক আরও কম হওয়া উচিত। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটনে রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন- শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব না হলে ৩৫ শতাংশ শুল্কই বহাল থাকবে, যা দেশের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য একটি বড় আঘাত হবে। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ ভাগই আসে তৈরি পোশাক থেকে। আর একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। গত বছর মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির বাজারে মোট রপ্তানি পণ্যের ৮৭ শতাংশ হচ্ছে তৈরি পোশাক। গত বছর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই হিসাবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৬১৫ কোটি ডলার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক কমানোর শর্ত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব পণ্য বাংলাদেশ আমদানি করে সেসব পণ্যে পর্যায়ক্রমে শুল্ক, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি হ্রাস চেয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে সরকারি খাতে ফুড ড্রিংক, বোয়িং বিমান ও মিলিটারি ইক্যুইপমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা গম, সয়াবিন, এয়ারক্রাফট ও অন্যান্য মেশিনারির ওপর ডিউটি খুব কম। তুলা আমদানিকে আরও অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তুলা আমদানির ওপর ২ শতাংশ এআইটি আছে। সেটি প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি যাতে বেশি হয় সেজন্য কিছু সুবিধা দেয়ার চিন্তা করছে সরকার।
 

পাঠকের মতামত

ব্যবসায়ীরা শাসক হলে কেমন তার প্রমান যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ।

মিলন আজাদ
১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৩:১৬ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status