শেষের পাতা
গাজায় নরক যন্ত্রণার হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
মানবজমিন ডেস্ক
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার
গাজায় নরক যন্ত্রণা শুরু হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের এমন হুমকিতে যেমন ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে গাজায় ধ্বংসস্তূপের মাঝে ফিরে আসা মানুষের। তেমনি গা শিউরে উঠার মতো শিহরণ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব জুড়ে। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবরের পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজাকে নির্জন দ্বীপ বানিয়ে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে তিনি প্রায় সফল হয়েছেন। তবে বিশ্ববাসীর কারণে তিনি পুরোপুরি সফল হননি। এরই মধ্যে অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। তার প্রথম দফায় বেশ কিছু জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বাকি জিম্মিদের শনিবার দুপুরের মধ্যে মুক্তি দেয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, এ সময়ের মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি না দিলে ইসরাইলের উচিত যুদ্ধবিরতি বাতিল করে দিয়ে গাজায় নরকের আগুন জ্বালানো। এর ফলে সারাবিশ্বে তোলপাড় চলছে। হামাস বলেছে, ইসরাইল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুঁতেরা হামাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে। এ অবস্থায় গতকাল ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ’র। এক্ষেত্রে তাকে গাজাবাসীকে তার দেশে ঠাঁই দেয়ার জন্য চাপ দিতে পারেন ট্রাম্প। বৈঠকের আগে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে গাজা দখলে তার পরিকল্পনাকে সহযোগিতা না করে এবং গাজাবাসীকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি করে, তাহলে জর্ডান ও মিশরের সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। হামাসের হাতে আটক থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেয়ায় বিলম্ব হওয়ার পর ইসরাইলের মিত্র ট্রাম্প বলেছেন, শনিবারের মধ্যে যদি গাজা থেকে সব জিম্মিকে মুক্তি দেয়া না হয় তাহলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করা উচিত হবে ইসরাইলের। যদি জিম্মিদের ফেরত না দেয় তাহলে সেখানে (গাজা) নরকের যন্ত্রণা দেখা দেবে। আমি কি বলতে চাইছি তা হয়তো হামাস বুঝতে পারবে। সোমবারই হামাস জানিয়ে দিয়েছে, ইসরাইল গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এ জন্য পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত জিম্মিদের মুক্তি দিতে বিলম্ব করবে হামাস। উল্টো একে পুরোপুরি যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন বলে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে ইসরাইল। একই সঙ্গে তাদের সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করেছে। তাদেরকে গাজায় যেকোনো রকম সম্ভাব্য অভিযানের জন্য সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রেখেছে। তবে মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে, এরই মধ্যে গাজার আকাশে ইসরাইলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমান টহল দিচ্ছে।
এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন ফিলিস্তিন ও ইসরাইলকে নিয়ে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন, তখন অনেকেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। বলেন, গাজাবাসীকে গাজা থেকে সরিয়ে জর্ডান ও মিশরসহ আরবের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তারপর গাজাকে বানানো হবে মধ্যপ্রাচ্যের ‘রিভেরা’। অর্থাৎ এর মধ্যদিয়ে গাজাবাসীকে তাদের ভূখণ্ড থেকে চিরতরে উৎখাতের একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়। গাজাকে দখল করে নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। সেখান থেকে সবকিছু সরিয়ে দিয়ে দখল করার ঘোষণা দেন। বার বার এই কথা বলেছেন এবং বলছেন। প্রথমে হোয়াইট হাউস থেকে গাজাবাসীকে অস্থায়ী সময়ের জন্য সরিয়ে দেয়ার কথা বলা হলেও, ট্রাম্প তেমন ইঙ্গিত দেননি। তার প্রশাসনের কেউ কেউ বলেছেন, এই দেশান্তরী করা হবে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য। রোববারও ট্রাম্প এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের গাজা সম্পর্কে বলেছেন, আমি গাজা কিনে নিতে এবং এর মালিক হতে বদ্ধপরিকর। পরের দিন সোমবার ফক্স নিউজের এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, একবার দেশ থেকে সরিয়ে দেয়ার পর ফিলিস্তিনিদের আর তাদের দেশে ফেরার অধিকার থাকবে না। কারণ, তিনি ফিলিস্তিনিদের জন্য অন্য কোথাও স্থায়ী আবাস গড়বেন। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেয়ার জন্য তিনি জর্ডান ও মিশরের সঙ্গে চুক্তি করার কথাও বলেন। তবে তার এই আইডিয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছে জর্ডান ও মিশর।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন বিতর্কিত অবস্থানের কারণে পুরো গাজায় যেমন, তেমনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তেল আবিব থেকে ইসরাইলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক আকিভা এলদার বলেছেন, ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত অবস্থানের কারণে গাজা জুড়ে গভীর অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগে এমন একটা ধারণা ছড়িয়ে পড়েছিল যে, গাজা সমস্যার সমাধান করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু গাজায় অসংখ্য নিরপরাধ মানুষের জন্য তিনি এখন মৃত্যু সনদ চাইছেন। এলদার আরও বলেন, ইসরাইলের শতকরা কমপক্ষে ৬০ ভাগ মানুষ এই যুদ্ধ বন্ধ চান। কিন্তু ট্রাম্পের ঘোষণাকে এই যুদ্ধে ফেরার যুক্তি হিসেবে দেখানোর সুযোগ পেয়েছেন নেতানিয়াহু।
ওদিকে হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে জেরুজালেম থেকে তেলআবিব পর্যন্ত মহাসড়কে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। এ সময় তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি বহাল রাখার আহ্বান জানান। বিক্ষোভ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য নেতানিয়াহু সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়। অন্যদিকে কাতারে জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিষয়ের সহযোগী প্রফেসর আবদুল্লাহ আল আরিয়ান বলেছেন, যদি ইসরাইল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় তাহলে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি এখনো বহাল রাখা সম্ভব। যেকোনো মূল্যে গাজায় আবার যুদ্ধ শুরু হওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুঁতেরা। এক্সে এক পোস্টে তিনি হামাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, জিম্মিদের মুক্তির জন্য পরিকল্পিত উপায় অনুসরণ করতে। তিনি বলেন, উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির চুক্তি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। একই সঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে সমঝোতা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্পের হুমকির পর হামাস বলেছে, হুমকির কোনো মূল্য নেই। হামাসের সিনিয়র নেতা সামি আবু জুহরি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের স্মরণ রাখা উচিত যে, বাকি জিম্মিদের ফেরত নিতে ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে সম্পাদিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। উভয় পক্ষকে এটা মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে হুমকি দিয়ে কথাবার্তার কোনো মূল্য নেই। এতে শুধু পরিস্থিতি জটিল হয়। এমন প্রেক্ষাপটে বাকি জিম্মিদের ফেরত আনতে বদ্ধপরিকর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, আমাদের সব জিম্মিকে জীবিত ও মৃতদের ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আমরা অব্যাহতভাবে এবং বিরামহীনভাবে ব্যবস্থা নেবো।
এ অবস্থায় গাজার সালাহ আল-দিন রোড থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলছেন, প্রথম দিন থেকেই যুদ্ধবিরতি ছিল ভঙ্গুর অবস্থায়। অপ্রয়োজনে তা কার্যকর করতে বিলম্ব করা হয়। ইসরাইলি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও সামরিক পর্যায় থেকে বলা হয়, একবার যখন জিম্মিদের মুক্ত করা হবে, তার পরপরই ইসরাইল আবার যুদ্ধ শুরু করবে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ট্রাম্পের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে দেয়ার হুমকি। ফলে গাজার সর্বত্রই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যেসব মানুষ বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরে আবার নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন, সোমবার দিবাগত রাতে নাটকীয়ভাবে তা বদলে গেছে। গাজা সিটির উপর দিয়ে খুব কম উচ্চতায় উড়ছিল বিপুল পরিমাণ ড্রোন। দুই তিন ঘণ্টা ধরে আকাশে টহল দিচ্ছিল যুদ্ধবিমান। এর ফলে আবার যুদ্ধ শুরুর ভয় দেখা দেয়। সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন গাজার বেশির ভাগ মানুষ। ওদিকে গাজা নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে কমপক্ষে ১১০টি এনজিও। তারা একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাতে গাজা থেকে জোরপূর্বক ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার যেকোনো আহ্বানের বিরোধিতা করা হয়েছে। বিরোধিতা করা হয়েছে গাজাকে কিনে নেয়ার।
পাঠকের মতামত
হে আল্লাহ তুমি কি এই অসহায় নিশ্পাপ শিশুদের আহাজারী শুনছো না! মাবুদ তুমি ইসরায়েলকে ধ্বংস করে দাও এবং ট্রামকে পৃথিবীর আগুনে পুড়িয়ে ছারখার করে দাও। আমীন।
হে আল্লাহ্ অসহায়ের তুমিই সহায়। এ উন্মাদ দের কে নিবৃত করার তুমি ছাড়া আর নেই, আল্লাহ্ তুমি ওদের সমুচিত জবাব দাও, ওদেরকে নিপাত করে। পৃথিবীতে দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ সৃষ্টি কর।
হে আল্লাহ তুমি কি এই অসহায় নিশ্পাপ শিশুদের আহাজারী শুনছো না! মাবুদ তুমি ইসরায়েলকে ধ্বংস করে দাও এবং ট্রামকে পৃথিবীর আগুনে পুড়িয়ে ছারখার করে দাও। আমীন।
হে আল্লাহ! তুমি ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলমানদের রক্ষা করো। হে আল্লাহ! তুমিই একমাত্র সহায়।
আরে উন্মাদ সেই আগুনে তুই জ্বলে পুড়ে ছারখার হবি ।
যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজার আকাশে ইসরাইলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমান টহল। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে দেয়ার হুমকি, এগুলো যুদ্ধবিরতি সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, শুধু বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা না করে, সুন্দর ও ন্যায়সঙ্গত একটি সমাধান করলে ট্রাম্প সাহেব ইতিহাসে শ্রদ্ধা এবং স্মরণীয় হয়ে থাকবে,
এ সহায়তা প্রতারণা।