ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

জামায়াত নেতা আজহারের আপিলের রায় ২৭শে মে

স্টাফ রিপোর্টার
৯ মে ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের খালাস চেয়ে করা আপিলের ওপর রায় দিতে আগামী ২৭শে মে দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। গতকাল প্রসিকিউশন, রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রায়ের এ দিন ধার্য করেন। 

আদালতে আজহারের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ।  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম শুনানি করেন। আদালতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেনসহ জামায়াত নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শিশির মনির আদালতকে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার ছিল সাজানো। আইন সংশোধন, ট্রাইব্যুনাল গঠন সবই ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। বিচারের নামে অবিচার করে জামায়াতের নেতাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে। সবাই সংঘবদ্ধ অন্যায়-অবিচারের শিকার হয়েছেন। যা সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার লেখা ব্রোকেন ড্রিম বইয়ে উঠে এসেছে। অন্যায়ভাবে তার ফাঁসি কার্যকর করলে আমরা আদালতের সামনে আসতে পারতাম না। ৭১ সালে এটিএম আজহারের বয়স ছিল ১৮ বছর। তারা ১৮ বছরের ইন্টারমেডিয়েটের একজন শিক্ষার্থীকে কমান্ডার বানিয়ে সাজা দিয়েছেন। যেখানে ট্রাইব্যুনাল তাকে কমান্ডার হিসেবে উল্লেখ করেননি। কিন্তু আপিল বিভাগ নিজ উদ্যোগে তাকে কমান্ডার হিসেবে সাজা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আইনে যে সাক্ষীকে ক্রস একজিমেনেশন করার সুযোগ ছিল আপিল বিভাগ তা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আমরা কোনো কন্ট্রাডিকশন নিতে পারতাম না। তবে সেদিন বিচারপতি জিনাত আরা এসব অন্যায় অবিচারের বিচারিক প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু সেই বিচারিক প্রতিবাদ তখন শুনার কেউ ছিল না।  

পরে আদালত থেকে বের হয়ে শিশির মনির বলেন, আপিল বিভাগ যদি এটিএম আজহারকে খালাস দেন তাহলে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের যে নমুনা এই দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই কলঙ্ক থেকে বিচার বিভাগ আংশিক মুক্ত হবে। আমরা মনে করি জামায়াতে ইসলামী যে নজিরবিহীন নির্যাতন ও নিপীড়নের মধ্যে সময় পার করেছে এই রায়ের মধ্যদিয়ে সবার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার হবে। আজহারের বিষয়ে শিশির মনির বলেন, ১৮ বছরের ইন্টারমিডিয়েটে পড়ুয়া ছাত্রকে কমান্ডার বানিয়ে সাজা দিয়েছিল। অযৌক্তিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এটিএম আজহারকে সাজা দেয়া হয়েছে। আমরা আশাকরি আপিল বিভাগ এটিএম আজহারকে খালাস দিবেন।
প্রথম দিনের শুনানিতে যা বলেন: রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে জামায়াতের নেতৃবৃন্দের ফাঁসি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কার্যকর করা হয়েছে বলে আদালতকে জানান শিশির মনির। আজহার সাহেবের ফাঁসি কার্যকর করার জন্যও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে রায় দেয়া হয়েছিল। যাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোনো থানায় একটা সাধারণ ডায়েরিও ছিল না। চাক্ষুস যেসব সাক্ষীর ভিত্তিতে এটিএম আজহারকে সাজা দেয়া হয়েছে সেগুলো বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। এসব সাক্ষীর অনেকেই ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার দূর থেকে দেখেছেন। যা বৈজ্ঞানিকভাবে একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এসব সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ফাঁসি দেয়াটা আইনত ঠিক হয়নি। এমনকি এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ঠিকমতো হয়নি।  পুলিশের কাছে দেয়া ১৭ জন সাক্ষী আদালতে এসে সাক্ষ্য দেয়নি। পুলিশের কাছে দেয়া সাক্ষীকে আদালতের সাক্ষী দিয়েছে মর্মে গ্রহণ করা হয়। ফলে আসামিপক্ষ সাক্ষীদের ক্রসচেক করার সুযোগ পায়নি। যাদের ক্রসচেকের সুযোগ হয়েছে, তাদের অনেকেরই আদালতের বক্তব্যের সঙ্গে মামলার আইও’র কাছে দেয়া  স্টেটমেন্টের মিল পাওয়া যায়নি। সাক্ষীরা আদালতে না আসা সত্ত্বেও আমাদের কোনো কন্ট্রাডিকশন নিতে দেয়া হয় নাই। 

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা-হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো ৯ ধরনের ৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালের ৩০শে ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ে ২ নম্বর, ৩ নম্বর এবং ৪ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পান জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম। এ ছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১শে অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আপিল বিভাগের রায়ে ২, ৩, ৪ (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) ও ৬ নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখা হয়। আর ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়। ওই দিন আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রয়াত খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

 

 

পাঠকের মতামত

এটিএম আজাহারুল ইসলামের রায় স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের আমলের জুডিশিয়াল কিলিংএর নমূনা।বর্তমান আপিল ডিভিশন তাকে খালাস দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করবে বলে জাতি মনে করে।

সৈয়দ নজরুল হুদা
৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ১০:৪১ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status