বিশ্বজমিন
বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীকে দেয়া হলো রেকর্ড ক্ষতিপূরণ
মানবজমিন ডিজিটাল
(১ মাস আগে) ২৫ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার, ২:১৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৮:১৪ অপরাহ্ন

একজন জাপানি ব্যক্তি হত্যার অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার আগে প্রায় ৫০ বছর মৃত্যুদণ্ডের সাজা ভোগ করেছেন। তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২১৭ মিলিয়ন ইয়েন (১.৪৫ মিলিয়ন ডলার ) দেয়া হবে। আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, এটি ফৌজদারি মামলায় দেশের সর্বকালের বৃহত্তম অর্থ প্রদান। ১৯৬৮ সালে আইয়াও হাকামাতাকে (৮৯) তার বস, বসের স্ত্রী এবং তাদের দুই সন্তানকে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু পুনর্বিচারের পর গত বছর এই অভিযোগ থেকে তিনি খালাস পেয়েছিলেন।
হাকামাতার আইনজীবীরা সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলেন, যুক্তি দিয়েছিলেন যে তাদের মক্কেলকে ৪৭ বছর বিনা অভিযোগে জেলের পেছনে কাটাতে হয়েছে। যার জেরে হাকামাতা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত বন্দী হয়ে উঠেছেন। এটি তার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলেছে। বিচারক কুনি কোশি আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন, সেইসঙ্গে সম্মত হয়েছেন যে হাকামাতা ‘অত্যন্ত গুরুতর’ মানসিক এবং শারীরিক ব্যথা ভোগ করেছেন।
জাপান সরকার হাকামাতাকে এই আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেবে। হাকামাতার মামলাটি জাপানের দীর্ঘতম এবং দৃষ্টান্তমূলক কেসগুলোর মধ্যে একটি। নজিরবিহীনভাবে তাকে পুনর্বিচারের সুযোগ দেওয়া হয় এবং ২০১৪ সালে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
গত সেপ্টেম্বরে জাপানের দক্ষিণ উপকূলের একটি শহর শিজুওকাতে আদালতের সামনে শত শত লোক ভিড় করেছিলেন যখন বিচারক হাকামাতাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা থেকে খালাস দেন। হাকামাতা অবশ্য শুনানির জন্য আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। তার মানসিক অবস্থার অবনতির কারণে তাকে পূর্ববর্তী সব শুনানি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল।
কারাগার থেকে মুক্তি পাবার পর হাকামাতা তার ৯১ বছর বয়সী বোন হিডেকোর তত্ত্বাবধানে থাকতেন। হিডেকো তার ভাইয়ের মাথার ওপর থেকে হত্যার বদনাম মেটাতে কয়েক দশক ধরে লড়াই করেছেন। হাকামাতা ১৯৬৬ সালে একটি মিসো প্রসেসিং প্ল্যান্টে কাজ করছিলেন যখন তার বস, বসের স্ত্রী এবং তাদের দুই সন্তানের মৃতদেহ টোকিওর পশ্চিমে শিজুওকায় তাদের অগ্নিদগ্ধ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। চারজনকেই ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছিল।
কর্তৃপক্ষ হাকামাতার বিরুদ্ধে একটি গোটা পরিবারকে হত্যা, তাদের বাড়িতে আগুন লাগানো এবং নগদ ২ লক্ষ ইয়েন চুরি করার অভিযোগ এনেছিল। হাকামাতা প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন, কিন্তু পরে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেয়া হয় বলে দাবি হাকামাতার। জোর করে বয়ান আদায় করতে রোজ তার ওপর ১২ ঘন্টা ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলতো বলে জানিয়েছেন এই প্রৌঢ়।
১৯৬৮ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কয়েক বছর ধরে আইনি লড়াইয়ের পর হাকামাতার আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, মৃতদের পোশাক থেকে উদ্ধার করা ডিএনএ-এর সাথে হাকামাতার ডিএনএ মেলেনি। জোর করে হাকামাতাকে ফাঁসানো হয়েছিল বলে যুক্তি দেন তার আইনজীবীরা। যদিও তাকে ২০১৪ সালে পুনর্বিচারের অনুমতি দেয়া হয়েছিল, কিন্তু দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার জেরে পুনঃবিচার শুরু হতে হতে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সময় লেগে যায় । হাকামাতার মামলাটি জাপানের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সেইসঙ্গে পুনঃবিচারের জন্য অত্যধিক সময় নেয়া এবং জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র : বিবিসি