প্রথম পাতা
আমেরিকাকে চীনের পাল্টা জবাব
মানবজমিন ডেস্ক
১২ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার
যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপের পাল্টা জবাব দিয়েছে চীন। এবার তারাও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা দিয়েছে। আজ শনিবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। বুধবার তারা মার্কিন পণ্যের ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশ করে। এর মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের প্রকৃতি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলো। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, চীন তার পাল্টা পদক্ষেপই নিচ্ছে বার বার। তবে চীন এটাও বলেছে, এরপর যুক্তরাষ্ট্র আবার পাল্টা শুল্ক দিলে তারা আর এতে ‘সাড়া দেবে না’। তারা এটাও বলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা আরোপিত অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ শুল্ক আরোপের বিষয়টি আন্তর্জাতিক এবং অর্থনৈতিক বাণিজ্যের নিয়মনীতি, মৌলিক অর্থনৈতিক আইন এবং সাধারণ জ্ঞানকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করছে এবং এটি সম্পূর্ণ একতরফা ধমকা-ধমকি ও জবরদস্তি। বেইজিংয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য রপ্তানির ওপর আরোপিত শুল্ক অর্থনীতিতে বাস্তবিক কোনো তাৎপর্য ছাড়াই একটি সংখ্যার খেলায় পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, বার বার শুল্ক বৃদ্ধি কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘গুণ্ডামি এবং জবরদস্তি’কে আরও উন্মোচিত করবে। এটি একটি রসিকতায় পরিণত হবে। মাত্র এক সপ্তাহ আগেও চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। সেটা এখন বাড়তে বাড়তে ১৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে। গত ২রা এপ্রিল ডনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের যেসব দেশের পণ্যে উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন, ৯ই এপ্রিল বুধবার তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই দিনই তিনি জানান যে চীন, কানাডা ও মেক্সিকো বাদে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওপর ধার্যকৃত পাল্টা শুল্ক আগামী ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। তবে এই ৯০ দিন, দেশগুলোর সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে। একই দিনে চতুর্থ বারের মতো চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বাজারে চীনের পণ্যে সর্বশেষ ধার্যকৃত শুল্ক ছিল ১০৪ শতাংশ। বুধবার তা কার্যকর হওয়ার দিনই আবার বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশ করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সমপ্রতি বলেছিলেন, আমি আগেই সতর্ক করেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যদি কোনো দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তবে তারা সঙ্গে সঙ্গে নতুন ও অনেক বেশি হারে শুল্কের মুখোমুখি হবে।
এই প্রতিক্রিয়ায় চীন বলে, চীনকে চাপ বা হুমকি দিয়ে কখনোই লাভ হবে না। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, তাদের সরকার উস্কানিকে ভয় পায় না। এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, প্রতিশোধমূলক শুল্ক নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে আরও একটি অভিযোগ করেছে চীন। গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের বর্ডার ট্যাক্স ১০ শতাংশ বাড়ানোর পর ডব্লিউটিও’র কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেছিল চীন। এরপরে গত সপ্তাহে ডব্লিউটিওতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে তারা বিবাদ সংক্রান্ত আরেকটি আবেদন দাখিল করে। যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে উচ্চ শুল্কের সম্মুখীন দেশগুলো এখন চীনের মতো তাদের অভিযোগও ডব্লিউটিও’র বিরোধ নিষ্পত্তি আদালতে নিয়ে যেতে পারে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউটিও’র আপিল সংস্থায় বিচারক নিয়োগে বাধা দেয়া শুরু করে। সংস্থাটি তাদের ক্ষমতার চেয়েও বেশি ভূমিকা রাখছে এই যুক্তিতে ওই পদক্ষেপ নেয় তারা। ফলে এই আদালত মূলত বর্তমানে কাজ করতে পারছে না এবং নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয়েও খুব কমই ব্যবস্থা নিতে পারছে ডব্লিউটিও। প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ চীনের জনগণকে কীভাবে প্রভাবিত করছে? বিবিসি’র সাংবাদিক স্টিফেন ম্যাকডোনেল বলেছেন, চীনা ক্রেতাদের স্থানীয় ব্র্যান্ড কেনার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ অব্যাহত থাকায় বেইজিং এখনো অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে রয়েছে। এদিকে চীনের ঘোষণার পর, ইউরোপীয় স্টক মার্কেটগুলো লাল রঙে প্রবেশ করেছে। এর মানে হলো প্রারম্ভিক লেনদেনে সামান্য বৃদ্ধি পাওয়ার পর তিনটি প্রধান স্টক সূচক এখন নিম্নমুখী। পতনশীল বাজারের মানে হলো বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন বেশির ভাগ কোম্পানি মুনাফা হারাচ্ছে। কারণ তারা বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের প্রবণতা পণ্যের চাহিদা কমিয়ে দেবে এবং দাম বাড়িয়ে দেবে।