ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যা বললেন মেঘনা

স্টাফ রিপোর্টার
১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

অন্য কারও সঙ্গে নয় শুধুমাত্র সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলানের সঙ্গেই সম্পর্ক ছিল বলে আদালতের কাছে দাবি করেছেন আলোচিত মডেল মেঘনা আলম। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী দেওয়ান সমিরকে তার বন্ধু বলা হচ্ছে, যা সঠিক নয়। তিনি দেওয়ান সমিরকে চেনেন না। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এমন দাবি করেন মডেল মেঘনা আলম। চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগে ১৫ই এপ্রিল মেঘনা, দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ধানমণ্ডি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবদুল আলীম। সেই মামলায় বলা হয়েছে, মেঘনা আলম, দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা জনৈক কূটনীতিকের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৬০ কোটি টাকা) অর্থ দাবি করেছেন। তবে মামলার এজাহারে ওই কূটনীতিকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ২৯শে মার্চ ধানমণ্ডির একটি রেস্তরাঁয় একটি গোপন বৈঠক হয়। বৈঠকে মেঘনা, সমিরসহ কয়েক ব্যক্তি অংশ নেন। এতে কূটনীতিকের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি ও আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। 

এই গোপন বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল প্রতারণা করে অর্থ আদায় করা। আসামিদের এই কার্যক্রমের কারণে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল মেঘনাকে আদালতে হাজির করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, বিচারকের অনুমতি নিয়ে মডেল মেঘনা আলম আদালতে কথা বলেন। তিনি আদালতের কাছে দাবি করেন, সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলানের সঙ্গেই তার পরিচয় ছিল। সৌদি রাষ্ট্রদূত তাকে ফোনও করেছিলেন বলে দাবি করেন। এদিকে আদালতে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিরা জানান, মডেল মেঘনা আলম দাবি করেন, সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। অন্যদিকে দেওয়ান সমিরও দাবি করেন, তাকে মেঘনা আলমের ‘বয়ফ্রেন্ড’ বলা হচ্ছে। বাস্তবে মেঘনা আলমের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। মামলার ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি। মামলায় মডেল মেঘনাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। অন্যদিকে দেওয়ান সমিরকে পাঁচদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয়া হয়। ঢাকার সিএমএম আদালত এ আদেশ দেন। 

এদিকে ধানমণ্ডি থানার মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, মেঘনা আলম, দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতপরিচয় ২/৩ জন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিক/প্রতিনিধি ও দেশীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করিয়ে কৌশলে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধপন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে তাদের সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে আসছে। দেওয়ান সমির KAWAII Group নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং সানজানা ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠানের ফার্মের মালিক মর্মে জানা যায়। এছাড়া ইতিপূর্বে মির আই ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। বিভিন্ন আকর্ষণীয়, স্মার্ট মেয়েদের তার প্রতিষ্ঠানে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছে সহজে যাতায়াত নিশ্চিত করা এবং দেওয়ান সমির তার ম্যানপাওয়ার ও অন্যান্য ব্যবসাকে অধিকতর লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে চক্রান্তের অংশ হিসেবে অসৎ উদ্দেশ্যে তার সহযোগী আসামিদের সহায়তায় ও অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কুটনীতিককে টার্গেট করে ব্লাকমেইল করে বড় অঙ্কের টাকা চাঁদা হিসেবে দাবি করে আদায় করে থাকে। পুলিশের একটি সূত্র দাবি করে, মেঘনা আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। যারা হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে অর্থ আদায় করতো। সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের সঙ্গে আট মাস আগে মেঘনার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে কৌশলে  প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে ৫০ লাখ ডলার দাবি করা হয়। যার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন মেঘলার বন্ধু দেওয়ান সমির। পরে চাপে পড়ে রাষ্ট্রদূত বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানান। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিবি পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। পরে ডিবি ঘটনার সত্যতা পেয়ে মেঘনাকে তার বাসা থেকে আটক করেন। আটকের কিছুক্ষণ আগে গত ৯ই এপ্রিল রাতে বসুন্ধরার একটি বাসা থেকে ফেসবুক লাইভে এসে জানান পুলিশ পরিচয়ে কিছু লোক তার দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে। পরদিন আদালত তাকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেন। পরবর্তীতে গ্রেপ্তার করা হয় দেওয়ান সমিরকেও। এদিকে আটকের পরে মেঘনার পরিবার দাবি করেছে, সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে গত বছরের ৪ঠা ডিসেম্বর গোপনে তাদের বাগদান সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিয়ের পরে রাষ্ট্রদূত তার খোঁজ-খবর নিতেন না। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলা হয় এটি একটি সুপরিকল্পিত ব্ল্যাকমেইল চক্রান্ত। এদিকে মেঘনার গ্রেপ্তার ও ডিবি হেফাজতে রাখার প্রক্রিয়া নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তার বাবা। রোববার বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদির হাইকোর্ট বেঞ্চ গ্রেপ্তারের বৈধতা নিয়ে রুল জারি করেন। পুলিশের দাবি- মেঘনা আলমের মাধ্যমে বিদেশি কূটনীতিকদের টার্গেট করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন্ন এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। এই ঘটনার জেরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককেও সরিয়ে দেয়া হয়। মেঘনা আলম ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেন। তিনি বসুন্ধরা আবাসিকে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন এবং একজন উদ্যোক্তা এবং মডেল হিসেবেও কাজ করতেন।

পাঠকের মতামত

এই মেঘলার বাপকে আগে রিমান্ড দিতপ হবে

রহমান
১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ১:১১ অপরাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status