প্রথম পাতা
কেন আটক মেঘনা আলম?
স্টাফ রিপোর্টার
১২ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার
মডেল ও মিস আর্থ বাংলাদেশ-২০২০ বিজয়ী মেঘনা আলমের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পুলিশ জানিয়েছে, অপহরণ নয় মেঘনা আলমকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যাচার ছড়ানো, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ও দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এজন্য তাকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে হেফাজতে রাখা হয়েছে। এর আগে, বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুক লাইভে এসে মেঘনা আলম অভিযোগ করেন পুলিশ পরিচয়ধারীরা তার বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। লাইভটি প্রায় ১২ মিনিট চলার পর বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে সেটি ডিলিটও হয়ে যায়। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মডেল মেঘনার বাসা থেকে বুধবার রাতে তাকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেঘনা আলমকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালত বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(১) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে তাকে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটকের আগে বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুক লাইভে মেঘনা অভিযোগ করেছিলেন, ভাটারা থানা পুলিশ পরিচয়ে কিছু লোক তার বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকেছে। তিনি লাইভে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ পরিচয়ধারীরা প্রথমে পরিচয় গোপন করে বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু দরজা না খোলায় একপর্যায়ে তারা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার বাসায় মাদক আছে বলে দাবি করে। এ কথা শুনে তিনি আতঙ্কিত হয়ে বলেন, আমি কখনো মাদক নেই না। আমাকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। একপর্যায়ে লাইভে থাকা অবস্থাতেই মেঘনা তার আইনজীবীকে ফোন করেন। পরে আইনজীবীর পরামর্শে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করেন। সেই কল শেষ হওয়ার আগেই পুলিশ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করছে বলে লাইভে জানান মেঘনা। এরপর অন্য একটি কক্ষে গিয়ে তিনি দরজা বন্ধ করে দেন। সেটিও ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে কয়েকজন। তবে দরজা ভেঙে কারা ভেতরে ঢুকেছে, তা লাইভে দেখা যায়নি। ভেতরে ঢুকেই একজন নারী মেঘনার হাত থেকে তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন। এরপরই লাইভটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে মেঘনার বোন তাসিন আফরিন দিয়ানা ফেসবুকে দেয়া এক পোস্ট করে বলেন, আমার বোনকে অপহরণ করা হয়েছে। দুই ঘণ্টা ধরে মিসিং।
গতকাল ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাকে অপহরণ করার অভিযোগ সঠিক নয়। সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্ক মিথ্যাচার ছড়ানোর মাধ্যমে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অবনতির অপচেষ্টা করা এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।
পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, মডেল মেঘনাকে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক করা হয়েছে। আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী, ক্ষতিকর কাজ থেকে নিবৃত রাখার জন্য সরকার যেকোনো ব্যক্তিকে আটক রাখার আদেশ দিতে পারবেন। আবার এই আইনের ৩(২) ধারা অনুযায়ী, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যদি সন্তুষ্ট হন যে, এই আইনের নির্দিষ্ট ধারার ক্ষতিকর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কেউ জড়িত, তাহলে ওই ব্যক্তিকে আটক রাখার আদেশ দেবেন। এই আইনে অনুযায়ী বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বা প্রতিরক্ষার ক্ষতি করা, বাংলাদেশের সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সংরক্ষণের ক্ষতি করা, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বা জননিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার ক্ষতি করা, বিভিন্ন সমপ্রদায়, শ্রেণি বা গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণাবোধ বা উত্তেজনা সৃষ্টি করা, আইনের শাসন বা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা বা উৎসাহ প্রদান করা বা উত্তেজিত করার কাজে যুক্ত ব্যক্তিকে আটকাদেশ দেয়া যায়। এছাড়া জনসাধারণের জন্য অত্যাবশ্যক সেবা বা অত্যাবশ্যক দ্রব্যাদি সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করা, জনসাধারণ বা কোনো সমপ্রদায়ের মধ্যে ভীতি বা আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বা আর্থিক ক্ষতি করার কাজে যুক্তকে এই আইনে আটকে রাখা যায়। ২০২০ সালের ৫ই অক্টোবর মেঘনা আলম ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ’- প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার এবং নারীদের স্বাবলম্বী করতে নারী উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগের জন্য এই পুরস্কার লাভ করেন তিনি।