খেলা
টেস্টে নতুন শুরুর প্রত্যয়
ইশতিয়াক পারভেজ, সিলেট থেকে
২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার
১৫০ টেস্ট ম্যাচ। মাত্র ২২ জয় ও ১৮ ড্র। গেল দুই যুগে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের অর্জন এটাই। হেরেছে ১১০ ম্যাচে। এই পরিসংখ্যান পরিষ্কার বলে দিচ্ছে এখনো সাদা পোশাকে রঙিন হতে পারেনি টাইগাররা। কিংবা বলা যায়, ২৪ বছরেও ক্রিকেটের এই অভিজাত ফরম্যাটে পায়ের নিচে স্পর্শ করতে পারেনি মাটি। এ বছর দেশের মাটিতে এখনো কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজ খেলেনি বাংলাদেশ। আজ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে দেশের মাটিতে বছরের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। চারপাশে চা বাগানে ঘেরা সিলেট স্টেডিয়াম শুধু এ দেশেরই নয় উপমহাদেশের যতগুলো অপরূপ স্টেডিয়াম আছে তার একটি। কিন্তু এখানেও টাইগারদের টেস্ট ক্রিকেটে নেই তেমন কোনো সুুখস্মৃতি। এই মাঠে তিন ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে। এর মধ্যে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরেছে বড় ব্যধানে। তবে শান্তর নেতৃত্বে এখানে টেস্ট ক্রিকেটে ইতিহাস রচনা করেছিল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিল ১৫০ রানের বড় ব্যবধানে। টাইগার অধিনায়ক মাঠে নামার আগে গতকাল দ্বিধাহীন কণ্ঠে জানিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটে এখান থেকেই তিনি করতে চান নতুন শুরু! নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, ‘ক্যাপ্টেন হিসেবে চিন্তা করি যে আমরা প্রত্যেকটা ম্যাচ যেন জেতার জন্য খেলি। এখানে কোনো সেলফ ক্রিকেট আসলে খেলার ইচ্ছা আমাদের কারোরই নাই। সো আমি যেটা একটু আগেও বললাম যে নতুন কিছু আসলে আমরা চেষ্টা করব এবং এটাও শুরু হবে আগামী কালকে (আজ) থেকে এবং আমার মনে হয় যে ওটার জন্য যে ধরনের মন মানসিকতা প্রিপারেশন থাকা দরকার প্লেয়াররা নিচ্ছে।’
শুধু নিজেরা নতুন করে শুরু করলেই যে সব বদলে যাবে এমনটাও বিশ্বাস করেন না টাইগার অধিনায়ক শান্ত। এ জন্য তিনি পাশে চান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে শুরু টিম ম্যানেজম্যান্টকেও। তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি আমি আশা করবো যে যারা ম্যানেজমেন্টে আছেন বা যারা ক্রিকেট বোর্ডে আছেন তারাও আমাদের হেল্প করবেন এই বিষয়গুলো নিয়ে। আমি বিশ্বাস করি যে যেহেতু আমাদের গত ২০-২২ বছরে টেস্ট ক্রিকেট একই রকম ছিল খুব বেশি উন্নতি হয়নি সো এই জায়গাটাতে নিশ্চয়ই আমাদের কিছু পরিবর্তনের দরকার আছে। সো ওই পরিবর্তনটাই করার আমরা চিন্তা করছি এবং আমি আশা করব যে এই পরিবর্তনটা আমাদের টেস্ট ক্রিকেটে কাজে লাগবে।’প্রশ্ন হচ্ছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ এই টেস্ট জিতবে তো! পরিসংখ্যান বলছে ২০২১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ১৮ বার। যেখানে টেস্টে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই সর্বাধিক ৮ ম্যাচে জয়। ছয়টি জয়ই এসেছে দেশের মাটিতে যার সবশেষটি ২০২০ এ। অন্যদিকে সিলেটের মাটিতে সফরকারীদের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছে মাত্র এক ম্যাচ। সেখানে মিলেছে ১৫১ রানের বড় ব্যবধানে হার। যা এই মাঠে টাইগারদের হারের লজ্জার একটি স্মৃতি বললেও ভুল হবে না। শান্তর নেতৃত্বে এবারের দলটি প্রায় নতুন। এই দলে অভিজ্ঞ বলতে মুশফিকুর রহীম ও মুমিনুল হক সৌরভ। টেস্টে দু’জনই সেরা ব্যাটার, তবে নেই ফর্মে। তাই কেমন হবে একাদশ তা নিয়েও আছে আলোচনা। যদিও টাইগার অধিনায়ক এ সব নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তিনি বলেছেন, ‘আসলে সবাই খেলার জন্য প্রস্তুত আছে। ইউজুয়ালি এই উত্তর অনেকবার দিয়েছি। আমার মনে হয় খুবই হেলদি একটা কম্পিটিশন আমার মনে হয় স্পেশালি যারা উইকেট কিপিং করবেন। সো আই হোপ যে কালকে যখন টসের পরে আপনারা জেনে যাবেন ইনশাল্লাহ।’ শুধু কি তাই! তরুণ নাহিদ রানা খেলবেন কিনা তা নিয়ে যেমন রেখেছেন রহস্য তেমন জানিয়েছেন এই পেসারের ওপর তার আস্থার কথাও। তিনি বলেন, ‘ম্যাচে যখন নাহিদ বল করবে আর অপোনেন্ট যখন ব্যাটিং করবে তখন আপনি তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখলে বুঝতে পারবেন যে নাহিদ রানা কত জোরে আসলে বল করে এবং হাউ এক্সট্রা অর্ডিনারি!’ প্রশ্ন আছে কেমন হবে সিলেটের উইকেট! তবে তা নিয়ে শান্ত খুব চিন্তিত নন। বেশ ভালোই ধারণা আছে তার সিলেটের উইকেট নিয়ে। তিনি বলেন, ‘সিলেটের সবসময় এরকম ভালো বাউন্সই থাকে সো এরকম উইকেট আমরা আশা করি যে ট্রু বাউন্সটা থাকবে এবং আমি আশা করব যে ম্যাচে এরকম উইকেটই থাকবে। অবশ্যই বৃষ্টিটা আমাদের কন্ট্রোলে নাই বাট প্লেয়ারদেরকে এডজাস্ট করতে হবে এবং আমার মনে হয় যে যদি কোনো কিছু আসেই আমি চাইবো না যে এটা একটা এক্সকিউজ হিসেবে দাঁড়া করাতে কারণ প্রফেশনাল ক্রিকেটার এই বিষয়গুলো হ্যান্ডেল করতে হবে।’ প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েকে কোনভাবেই ছোট করে দেখতে চান না শান্ত। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক বলেন, ‘ওইভাবে আয়ারল্যান্ড বা জিম্বাবুয়ে, এ ধরনের চিন্তা না করে আমার মনে হয় যে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে যে টিমের এগেনস্টে খেলি অবশ্যই আমাদের ওই এবিলিটি আছে যে এই হোমে ভালো রেজাল্ট করা। এবং আমি বিশ্বাস করি যে এ বছর যেই পাঁচটা ছয়টা টেস্ট ম্যাচ আমাদের আছে এই প্রত্যেকটা টেস্ট ম্যাচে ভালো রেজাল্ট আনা সম্ভব।’