বাংলারজমিন
বিজিবি’র আপত্তিতে ভারত অংশে মনু নদীর বাঁধ মেরামত কাজ বন্ধ
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
২৬ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ চার বছরে মাত্র ৫০ শতাংশ হয়েছে। ভারত সীমান্তঘেঁষা ৪টি অংশে বিএসএফের বাঁধায় আড়াই বছর থেকে বন্ধ রয়েছে কাজ। নতুন করে আরেকটি স্থানে বিএসএফ বাধা দিয়েছে। ভারতের এই আগ্রাসী মনোভাবের জবাব সম্প্রতি বিজিবিও দিয়েছে। তাদের বাধায় ত্রিপুরা রাজ্যের ঊনকোটি জেলার কৈলাশহর শ্মশান ঘাট এলাকার ভারতীয় অংশে মনু প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ কয়েকদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ অংশে নদী তীরবর্তী লক্ষাধিক মানুষ বন্যা আতংকে আছেন। সূত্রমতে, বন্যা আর ভাঙন থেকে মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলাকে মুক্ত রাখতে ২০২০ সালের ২১শে জুন ৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদন হয়। প্রকল্পের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কুলাউড়া উপজেলায় কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসি ব্লক ও জিওব্যাগ তৈরির কাজ সম্পন্ন করে রাখে। কিন্তু ৪টি স্থানে ২০২৩ সালের ১৩ই জানুয়ারি থেকে বিএসএফের বাধার কারণে কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এ বছরও বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী তীরবর্তী ৪টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। এদিকে, বাংলাদেশ অংশে কাজ না হলেও ভারতের অংশে দিব্যি কাজ চলছে বিএসএফের উপস্থিতিতে। এ নিয়ে স্থানীয় সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশিদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। শরীফপুর বিজিবি’র একটি সূত্র জানায়, বিএসএফ যখন বাংলাদেশ অংশে মনু প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজে বাধা দিয়েছে। আমরাও তাদের অংশে কাজে বাধা দিয়েছি। স্থানীয়রা বলেন, গত বছরের আগস্টে ভয়াবহ বন্যায় টিলাগাঁও ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের কয়েক শতাধিক মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এর আগেও ২০১৮ সালের বন্যায় টিলাগাঁও, হাজীপুর, শরীফপুর ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নে অর্ধ-শতাধিক গ্রামের মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে প্রতিরক্ষা বাঁধ, নদী আর গ্রাম কোনোটির কোনো অস্তিত্ব থাকে না। বিএসএফের বাধায় বাংলাদেশ অংশে কাজ বন্ধ হলেও ভারতীয় অংশে ঠিকই কাজ চলছে। দ্রুত এ বিষয়টি নিরসন হোক। এদিকে, গত ১৮ই জানুয়ারি বিকালে সরজমিন তদন্ত করে বিএসএফ পানি সাগরের ডিআইজি রাজিব বাটসরাজ টিলা বাজার বিএসএফ ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ অংশে মনু নদে উঁচু বাঁধ নির্মাণ সঠিক নয় বলে জানান। ২১শে এপ্রিল প্রচারিত ত্রিপুরার কৈলাশহরের বেসরকারি টিভি চ্যানেলে নিউজ বাংলা সূত্র জানায়, বিজিবি’র আপত্তির মুখে কৈলাশহরের শশ্মানঘাট এলাকায় ভারতীয় অংশে মনু প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ ৪ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলিদ বলেন, কুলাউড়ায় এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বিএসএফের বাধায় শরীফপুর ইউনিয়নে চারটি স্থানে ১৪০০ মিটার কাজ বন্ধ রয়েছে। ৪টি স্থানের কাজের অনুমতি চেয়ে ২০২৩ সালে যৌথ নদী কমিশনের কাছে একটি পত্র প্রদান করা হয়। ইতিমধ্যে দু’দেশের যৌথ নদী কমিশনে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারতীয়দের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও তাদের বাঁধ অযৌক্তিক। এ অবস্থায় মনু নদীর কুলাউড়ার বিভিন্ন অংশে বাঁধে পাথরের ব্লক স্থাপন ও কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মকাবিল এলাকার ভাঙা বাঁধ মেরামত করা যাচ্ছে না বিএসএফের আপত্তির কারণে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, মনু নদীর বৃহৎ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে জেলা উন্নয়ন সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়। বিএসএফ কর্তৃক কাজে বাধার বিষয়টি সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তবে শিগগিরই শিকড়িয়ায় বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।