শেষের পাতা
প্রস্তাব পেলে পাক ভারত মধ্যস্থতায় রাজি বাংলাদেশ
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
বাংলাদেশ বা তৃতীয় কোনো দেশের মধ্যস্থতা কিংবা বিবদমান দুই দেশের আলাপ-আলোচনা যেভাবেই হোক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার অবসান চায় বাংলাদেশ। এমনটাই জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বাংলাদেশ নিজে থেকে মধ্যস্থতার ভূমিকা নেয়ার চেষ্টা করবে না জানিয়ে তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা আগ বাড়িয়ে কিছু করতে চাই না। তবে প্রস্তাব পেলে দুই দেশের মধ্যকার আলোচনাকে ফ্যাসিলিটেড করতে বা মধ্যস্থতার ভূমিকা নেয়ার প্রশ্নটি একেবারে উড়িয়ে দেননি বাংলাদেশের অন্তর্বর্র্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। গতকাল মন্ত্রণালয়ে পূর্ব ঘোষিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট। আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি চাই। দীর্ঘদিন ধরেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে সংঘাতময় সম্পর্কের মধ্যে আছে। আমরা চাই না যে এখানে বড় কোনো সংঘাত সৃষ্টি হোক, যা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাইবো যে তারা নিজেরা আলাপ-আলোচনায় সমস্যাগুলো সমাধান করে ফেলুক। আমরা দেখেছি, এরই মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দু’একটা দেশের কাছ থেকে এসেছে। মধ্যস্থতা বা দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনা, যেভাবেই হোক, আমরা চাইবো যেন দ্রুত তাদের উত্তেজনা প্রশমিত হোক। উভয়ে শান্তি বজায় রাখুক। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকায় বাংলাদেশ যাবে কিনা? এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি মনে করি না যে, এই মুহূর্তে আমাদের মধ্যস্থতার কোনো ভূমিকা নেয়ার চেষ্টা করা উচিত। আমরা চাইবো যে তারা নিজেরা নিজেরা এ সমস্যার সমাধান করে ফেলুক। তারা যদি আমাদের সহায়তা চায় যে আপনারা মধ্যস্থতা করুন, তাহলে আমরা যাবো। উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতিমধ্যে ইরান ও সৌদি আরব পাক-ভারত উত্তেজনায় মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে পারি কিনা? এমন প্রশ্ন উঠছে প্রায়শই।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে যে দেশটিতে প্রায় এক হাজার অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী করছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে। জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা এ ব্যাপারে শুধু পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। এর বাইরে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা আমাদের কোনো কিছুই জানায়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চিঠি দেয়া হলে দেখতে হবে, তারা বাংলাদেশের নাগরিক কিনা। যদি বাংলাদেশের নাগরিক হন, তাহলে অবশ্যই তাদের ফেরত নেবো। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিক কিনা, সেটাও প্রমাণ সাপেক্ষ। কারণ, আমরা জানি যে ভারতেও প্রচুর বাংলাভাষী মানুষ আছেন। কাজেই বাংলায় কথা বললেই যে বাংলাদেশের মানুষ, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে কিনা? উপদেষ্টা বলেন, আধুনিক জামানায় সবকিছু সবাইকে কমবেশি প্রভাবিত করে। কাজেই কোনো কিছু আমাদের একটুও প্রভাবিত করবে না, সেটা আমি বলি না। তাদের যেই সংঘাত সেটা আমাদের সরাসরি প্রভাবিত করার কিছু নাই। কারণ, আমরা এতে কোনো পক্ষ নিইনি। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেকোনো সংঘাত বা সম্পর্ক খারাপ হলে প্রভাব পড়ে। তবে তাদের কাছ থেকে আমাদের যদি কোনো স্বার্থ থাকে আমদানি করার, আমরা করবো। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারত সীমান্তে বাড়তি নিরাপত্তার তাগিদ সংক্রান্ত প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, এটা হয়তো নিরাপত্তা নিয়ে যারা সরাসরি কাজ করেন তারা বলতে পারবেন। এই মুহূর্তে আমার কাছে এরকম কোনো তথ্য নেই।