শেষের পাতা
অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে ঐকমত্য চায় গণসংহতি
স্টাফ রিপোর্টার
২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবারঅংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি করা, বিদ্যমান ব্যবস্থায় সংস্কার না করে নির্বাচন হলে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার কথা জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। দল দুটি বলছে, দ্বিমতের বিষয়গুলো নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে দেয়া, ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন, টাস্কফোর্স গঠন, অর্থনীতি পুনর্গঠন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করা, জাতীয় সনদ তৈরির কাজগুলো ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে থাকবে। গতকাল জাতীয় সংসদের এলডি হলে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক শেষে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এসব কথা বলেন।
সংস্কার কমিশনগুলোর ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১৩৮টিতে একমত হয়েছে গণসংহতি আন্দোলন, ১১টিতে একমত নয়, ১৩টিতে আংশিক একমত এবং ৪টি বিষয়ে মতামত দেয়নি দলটি। ওদিকে জেএসডি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১১৯টিতে একমত, ১৭টিতে দ্বিমত, ২৭টিতে আংশিকভাবে একমত এবং ৩টিতে মতামত নেই বলে লিখিতভাবে জানিয়েছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আমাদের ক্ষমতা কাঠামোকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে হবে। ভারসাম্যতা ছাড়া কোনো জবাবদিহিতা হয় না। সংসদ সদস্যরা জনগণের প্রতিনিধি। কিন্তু সংসদে গিয়ে তারা জনগণের প্রতিনিধি থাকতে পারেন না, দলের অনুগত হয়ে যেতে হয়। সেই জায়গা থেকে আমরা বলেছিলাম ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল চাই। প্রস্তাবে এসেছিল অর্থবিল কিংবা বাজেট ব্যতিরেকে বাকি সব জায়গায় ভোট দিতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, সরকার গঠনের আস্থাভোট নিয়ে একধরনের ক্রস রেটিংয়ের একটা সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়। অতীতেও এটা দেখা গেছে। সেই বিবেচনার জায়গা থেকে আমরা তুলনামূলকভাবে কনসেনসাসের স্বার্থে আস্থাভোট এবং বাজেট বাকি সকল বিষয়ে যাতে সংসদ সদস্যরা ভোট দিতে পারেন। সেইভাবে ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কারের কথা তুলে ধরেছি।
জোনায়েদ সাকি বলেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যে সময়সীমার কথা বলেছেন, তা আরও নির্দিষ্ট হওয়া দরকার। ডিসেম্বরের পরে যদি নির্বাচন নিতে হয় তাহলে কী কারণে, সেটি ব্যাখ্যা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সংস্কার পরিষদ কিংবা সংস্কার সভা করতে হবে জনগণের ম্যান্ডেট (মতামত) নেয়ার জন্য। এখন অনেকে বলছেন, সংবিধান এবং সংবিধান সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নির্বাচনের আগে না পরে হবে। আগে করার সুযোগ নেই। এটা জনগণের ম্যান্ডেট এবং একটা সংসদ ছাড়া আপনি সংবিধান বদলাতে পারবেন না। সংবিধান এবং সংবিধান সংশ্লিষ্টের বাইরে অন্যান্য প্রশাসনিক যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাহী আদেশে করতে পারে। পরবর্তী সংসদ এবং সরকার সেগুলোকে জাস্টিফাই (ন্যায্যতা) করবে।
সাকি বলেন, সংস্কারের লক্ষ্যে আপনারা বিভিন্ন টাস্কফোর্স গঠন করেন। যাতে আমাদের মতো স্টেকহোল্ডারদের, অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি করা যায়। সবাই তাদের মতামত দিয়ে সনদ তৈরির কাজে আছেন। যতগুলো প্রস্তাব এসেছে, সেগুলোর মধ্যে স্টেকহোল্ডারদের যেগুলোতে ঐকমত্য তৈরি হবে সেটাই জাতীয় সনদ, জুলাই সনদ আকারে হাজির হবে। দ্বিমত নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে। সেটা একটি নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যেতে হবে।
বৈঠকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন দলটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য দেওয়ান আবদুর রশিদ, তাসলিমা আখতার, হাসান মারুফ রুমি, মনির উদ্দিন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, শ্যামলী সরকার, ইমরাদ জুলকারনাইন, তরিকুল সুজন, মুরাদ মোর্শেদসহ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু প্রমুখ।
বিদ্যমান রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়: জেএসডি
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়। শাসন ব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার অনিবার্য। ফ্যাসিবাদী শাসক যে ব্যবস্থাপনার উপর দাঁড়িয়ে ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মানুষ হত্যা করেছিলেন, মানুষের সকল অধিকার হরণ করেছেন এবং জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করেছেন, আয়নাঘর প্রতিষ্ঠাসহ রাষ্ট্রের সকল কাঠামো ধ্বংস করেছেন। রাষ্ট্রের সব কাঠামো তলানিতে।
তিনি আরও বলেন, এ বিদ্যমান ব্যবস্থার উপর দাঁড়িয়ে এটিকে পুনর্বিন্যাস করা ছাড়া, নতুন ক্ষমতায়নের দিকে গেলে পুরনো ব্যবস্থা ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকবে। জাতীয় সনদ তৈরির উদ্যোগ যৌক্তিক ও কার্যকর। জাতীয় সনদ তৈরির জন্য যে কাজগুলো হয়েছে তা- আজ, আগামীকাল ও প্রজন্মের জন্য ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে।
বৈঠকে জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সিরাজ মিয়া, সানোয়ার হোসেন তালুকদার, কে এম জাবির, তৌহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হেলালুজ্জামান। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়াও সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বৈঠকের শুরুতে আলী রীয়াজ বলেন, আমরা সামান্য হলেও অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছি। সেটা ধরে রাখতে না পারলে, বিকশিত করতে না পারলে সমস্ত সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে। সেটা যেনো না হয়, সে জন্য সকলের প্রচেষ্টা।