শেষের পাতা
পোপ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে আপন করে নিতে পারতেন
স্টাফ রিপোর্টার
২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ক্যাথলিক চার্চের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা কার্ডিনাল সিলভানো মারিয়া তোমাসি এবং কার্ডিনাল জ্যাকব কুভাকাড। শনিবার রোমে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে তারা এ সাক্ষাৎ করেন। দুই কার্ডিনাল পোপ ফ্রান্সিসের আজীবন দারিদ্র্য বিমোচন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, যুদ্ধ এবং পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন পৃথিবীর স্বপ্নের কথা স্মরণ করেন। তারা প্রফেসর ইউনূসের কাজের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাকে পোপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করার জন্য ধন্যবাদ জানান। প্রফেসর ইউনূস পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করে বলেন, পোপ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে আপন করে নিতে পারতেন। তিনি একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন। ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, পোপ ফ্রান্সিসের দায়িত্ব পালনকালে বহুবার তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে এবং কীভাবে ভ্যাটিকান ব্যাংকের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তার লেখা একটি সমালোচনামূলক চিঠি ভ্যাটিকানের সরকারি পত্রিকা এল ওসারভেটরি রোমানোর প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়েছিল, তা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আমি লিখেছিলাম কীভাবে ভ্যাটিকান তার ব্যাংককে দরিদ্রবান্ধব করে তুলতে পারে। আমি ব্যাংকের কার্যকারিতা ও বিতর্ক নিয়ে সমালোচনা করেছিলাম। তবুও, পোপ সম্পূর্ণ চিঠিটি প্রকাশ করেছিলেন। প্রফেসর ইউনূস আরও জানান, পোপ ফ্রান্সিস তাকে ভ্যাটিকান ব্যাংকের সংস্কার এবং চার্চের দরিদ্রবান্ধব উদ্যোগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেন। গত নভেম্বরে রোমে পোপ ফ্রান্সিস-ইউনূস থ্রি জিরো ক্লাব উদ্বোধন করা হয়, যার লক্ষ্য প্রফেসর ইউনূসের ‘শূন্য বেকারত্ব, শূন্য সম্পদ মজুত এবং শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ’ ভিশন বাস্তবায়ন। প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, আমি মুসলিম, তবুও পোপ ফ্রান্সিস কখনোই তার নাম একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর সঙ্গে যুক্ত হওয়া নিয়ে আপত্তি করেননি। তিনি আরও জানান, তাকে ক্যাথলিক চার্চের পক্ষ থেকে সেন্ট ফ্রান্সিস অব অ্যাসিসির টর্চ দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল, ১৩ শতকের ইতালিয়ান সাধক ও মিসটিকের চেতনা ধারণ করার জন্য। কার্ডিনাল তোমাসি এবং কার্ডিনাল কুভাকাড জানান, তারা উভয়েই ভ্যাটিকানের কার্ডিনাল কলেজের সদস্য এবং আগামী সপ্তাহে নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য বৈঠক করবেন। তাদের দু’জনকেই চার্চের শীর্ষ নেতৃত্বের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ: উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিও লুবেটকিন শনিবার রোমে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার হোটেলে সাক্ষাৎ করেন। পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেয়ার পর উভয়ের এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাৎকালে উভয় নেতা পারস্পরিক আগ্রহের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি এবং ল্যাটিন আমেরিকা ও এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুবেটকিন উরুগুয়ে ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক সম্প্রসারণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি উভয় পক্ষের সমৃদ্ধির জন্য ঢাকা ও মার্কোসুর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আরও শক্তিশালী অর্থনৈতিক সহযোগিতার আহ্বান জানান। প্রফেসর ইউনূস ও মন্ত্রী লুবেটকিন যুব বিনিয়োগ ও সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগ প্রসারের কৌশল নিয়েও আলোচনা করেন। তারা ‘তিন শূন্য’ তত্ত্ব- শূন্য বেকারত্ব, শূন্য সম্পদ মজুত এবং শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ- অর্জনের একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস নিয়মিত উচ্চপর্যায়ের সংলাপ বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুবেটকিনকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, ভ্যাটিকানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আরিফুল ইসলাম এবং ইতালিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত রাকিবুল হক উপস্থিত ছিলেন।
রোম থেকে দেশের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা: প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদান শেষে ঢাকার উদ্দেশে রোম ছেড়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, রোববার বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ইতালির রোম ত্যাগ করেন।