প্রথম পাতা
চলন্ত কারে ছিনতাইকারী ছোঁ মেরে টান দিলো ব্যাগ
নারীর আর্তচিৎকারে কাঁপলো সিদ্ধেশ্বরী
স্টাফ রিপোর্টার
২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
শনিবার ভোর পৌনে পাঁচটা। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকার গ্রিনল্যান্ড টাওয়ারের সামনের সবকিছু তখনো ঠিকঠাক ছিল। মানুষের চলাফেরা, যানবাহন চলাচল সবকিছু স্বাভাবিক। রাস্তার পাশে শাড়ি পরা একজন নারী দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার হাতে ছিল একটি ভ্যানিটি ব্যাগ, পাশে একটি ট্রলি ব্যাগ। গাজীপুরে একটি প্রশিক্ষণে অংশ নিতে সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। হঠাৎ সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকার এসে থামে তার সামনে। মুহূর্তেই ঘটে যায় ভয়ঙ্কর এক দৃশ্য। যা ধরা পড়ে পাশের এক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে।
সাদা প্রাইভেট কারের জানালা খুলে এক ব্যক্তি ঝাঁপিয়ে পড়ে নারীর ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে। কিন্তু ব্যাগ না ছাড়ায় মুহূর্তেই রাস্তায় পড়ে যান ওই নারী। ব্যাগের সঙ্গে সঙ্গে তাকেও টেনে নিয়ে যেতে থাকে ছিনতাইকারীরা। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীদের গাড়ি চলে যায়। রাস্তায় পড়ে আর্তচিৎকার করছিলেন ওই নারী। তার চিৎকারে আশপাশে থাকা লোকজন ওই নারীকে উদ্ধারে ছুটে আসেন। ব্যস্ত সড়কে এই ছিনতাইয়ের ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ছিনতাইয়ের মুহূর্তেই রাস্তায় পড়ে যান ওই নারী। টেনে-হিঁচড়ে তাকে নিয়ে চলে ছিনতাইকারীদের প্রাইভেটকারটি। পাশে থাকা ট্রলি ব্যাগটি যেখানে ছিল সেখানেই পড়ে থাকে। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন দৌড়ে ছুটে আসেন। একজন ট্রলি ব্যাগের সামনে দাঁড়িয়ে যান, আর বাকি দু’জন এগিয়ে যান আহত নারীর দিকে। ৫০ সেকেন্ডের মাথায় আবারো ক্যামেরায় দেখা যায়, ওই নারী ফিরে এসে দাঁড়িয়ে আছেন, ব্যথায় কুঁকড়ে যাওয়া মুখে সহায়তার আশায় কথা বলছেন উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে। নিজের কনুইয়ের আঘাতের চিহ্ন দেখাচ্ছেন।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওই নারী গুরুতর শারীরিক আঘাত পেয়েছেন। তবে, প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন তিনি। তার অবস্থা সংকটমুক্ত হলেও মানসিকভাবে চরম আঘাত পেয়েছেন। এরই মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে, তবে ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনার তথ্য জানার পর তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার শিকার নারী গাজীপুরের একটি কলেজের শিক্ষক। তিনি সিদ্ধেশ্বরীর একটি বাসায় থাকেন। গাজীপুরের উদ্দেশ্যে তিনি বের হয়েছিলেন একটি প্রশিক্ষণে অংশ নিতে। ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি পুলিশের নজরে এসেছে এবং তারা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছেন। ইতিমধ্যে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মামলা হয়নি, কারণ ভুক্তভোগী নারী এখনো পুলিশ স্টেশনে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দাখিল করেননি। তবে প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তিনি জানান, ঘটনার শিকার নারী আহত হওয়ার পর চিকিৎসা নিয়ে পরে প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
এদিকে, এই ঘটনার পর থেকে রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা। বিশেষত, নারীদের জন্য নিরাপত্তার বিষয়টি এখন বড় এক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি শুধু ঘটনার তীব্রতা বাড়ায়নি, বরং সাধারণ মানুষের মনে ভয়ও সৃষ্টি করেছে। অনেকেই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর একা পথে চলাচলকারী নারীরা।
ডিএমপি রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, ঘটনাটি শনিবার ভোর পৌনে পাঁচটায় ঘটে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসার আগে আমরা বিষয়টি জানতে পারিনি। ভুক্তভোগী ওই নারী একজন শিক্ষিকা। হয়তো গাজীপুরের একটি ট্রেনিং সেন্টারে চার-পাঁচ মাস মেয়াদি একটি কোর্সে প্রশিক্ষণ করছেন। তিনি ঘটনাটি এখনো পর্যন্ত আমাদের জানাননি। আমরা ভুক্তভোগী ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমাদের কাজ করতে আরও সুবিধা হবে, তার ব্যাগে থাকা মোবাইল ও ব্যাংকের এটিএম কার্ডের মাধ্যমে অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
পাঠকের মতামত
বাংলাদেশ সরকার, দয়া করে অবিলম্বে ৫ লক্ষ পুলিশ নিয়োগ করুন। অনুগ্রহ করে অবিলম্বে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করুন। সাধারণ মানুষ তাদের চাহিদা এবং প্রয়োজন অনুসারে শান্তিপূর্ণভাবে চলাচল করতে পারছে না।
Government of Bangladesh, please appoint 5 lakhs police immediately. Please improve law and order situation in the Bangladesh immediately. General people can't move peacefully as per their requirements and needs.
দুর্ঘটনার শিকার ভদ্র মহিলার প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা জানাই! আমি নিজে এক বার সি এন জি তে মলম পার্টির স্বীকার ও তিনবার পিছন দিক থেকে আসা মোটর সাইকেলের আঘাত পেয়ে আমার ডান পার্শ্বের হাঁটুটি প্ৰায় অকেজো হয়ে গেছে l সাদা রঙের প্রাইভেট করে করে এসে ছিনতাই এক সময় গুলশান - ২ এর একটা নিত্য - নৈমত্তিক ঘটনা ছিল l এক বার বারিধারায় এক জাপানী ভদ্র মহিলার ও ঠিক এই ধরণের ঘটনা ঘটেছিল তাই আমার বিনীত অনুরোধ রাস্তায় বাতির ব্যবস্থার পাশা-পাশি যতগুলো স্থানে সম্ভব কার্যকর সিসি ক্যামেরা সংযোজন করা হোক আর রাস্তায় যারা পথচারী থাকেন, তারা আর্ত ও দুর্ঘটনা কবলিত মানুষের পাশে থাকার সাথে-সাথে যারা ঘটনা ঘটায় অথবা সেই সকল যানবাহনগুলোকে ও নজরদারীর মধ্যে রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি সদা মঙ্গলময় স্রষ্টা আমাদের সকলের মঙ্গল করুন! আমেন!!!
ভুক্তভোগী কেন পুলিশের কাছে যাননি। এর কারণ আমার মনে হয় পুলিশের প্রতি অনাস্থা।